ঢাকা, সোমবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

বাবাহারা সন্তানের কান্না আর শুনতে চাই না: শেখ হাসিনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২২
বাবাহারা সন্তানের কান্না আর শুনতে চাই না: শেখ হাসিনা

ঢাকা: যুদ্ধ-অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আর আমরা স্বজনহারা বেদনার কান্না শুনতে চাই না।

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) ‘শেখ রাসেল দিবস-২০২২’ এর উদ্বোধন এবং ‘শেখ রাসেল পদক-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন  থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর আমরা স্বজনহারা বেদনার কান্না শুনতে চাই না। পিতাহারার সন্তানের কান্না শুনতে চাই না। সন্তানহারা পিতার কান্না শুনতে চাই না। আজকে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ। কত শিশু এতিম হয়ে যাচ্ছে, কত শিশু আজকে কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের দেশে রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি, সেখানেও হাজার হাজার শিশু আছে। তারাও স্বদেশ ভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে আজকে রিফিউজি হিসেবে মানুষ হচ্ছে। ’

‘একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব আমরা চাই, যুদ্ধ চাই না, ধ্বংস চাই না, অস্ত্র প্রতিযোগিতা চাই না। আমরা শান্তি চাই, শান্তি চাই। কোনো শিশু রিফিউজি হোক চাই না, বুলেটের আঘাতে  কোনো শিশুর  জীবন প্রদীপ নিভে যাক, ছোট্ট দেহ ক্ষতবিক্ষত হোক সেটা আমরা চাই না। বিশ্বে শান্তি ফিরে আসুক। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দেশের মানুষ তারা ভালো থাকুক। আমার দেশের ছেলে মেয়েরা, ছোট্ট শিশুরা সুন্দর জীবন পাক সেটাই আমার লক্ষ্য। ... আমরা যুদ্ধ চাই না সংঘাত চাই না। রাসেলের মতো আর কেউ জীবন দিক সেটাও আমি চাই না। আমরা চাই প্রত্যেকের ভবিষ্যৎ সুন্দর হোক, উন্নত হোক। ’
 ‘আজ মানবাধিকার নিয়ে গাল ভরা কথা শুনি’

নিজের বাবা-মা, স্বজন হত্যার বিচার চাইতে না পারার সেই বেদনার কথা স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কেউ বিচার চাইতে পারব না। এখানে আমার একটা প্রশ্ন- আজকে আন্তর্জাতিকভাবে কত কিছু হয়, মানবাধিকারের কথা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ কত কিছু হয়; কই তখন কেউ তো আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। হ্যাঁ আমার দল এবং বাংলার জনগণ ছিল। কিন্তু যারা ঘাতকদের সঙ্গে ছিল ঘাতকদের সহযোগিতা করেছিল বা চক্রান্তের সঙ্গে ছিল বা ঘাতকদের পুরস্কৃত করেছে। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া, প্রমোশন দেওয়া, এমনকি যে ঘাতক মারা গেছে তাকেও প্রমোশন দিয়ে পুরস্কৃত করা। এই অন্যায় অবিচারগুলো তো নিজ চোখে দেখেছি। আজ মানবতার কথা, মানবাধিকারের কথা, এত গাল ভরা কথা শুনি কেন? আমার এই প্রশ্নের জবাব কি কেউ দিতে পারবে?’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে এসব লোক যারা হত্যাকারী, হত্যাকারীদের মদদ দাতা, মানবাধিকার লঙ্ঘণকারী। আমার অধিকার আমার মানবাধিকার আমার বাবা-মায়ের বিচার চাওয়ার অধিকার তো আমারই ছিল। সেখান থেকে তো আমরা বঞ্চিত ছিলাম। যারা, যেসব বিচারক সেদিন বিব্রত হয়েছিলেন তারা এখন অনেকেই বড় বড় দার্শনিক হয়ে গেছেন। আমি তো সবই দেখি, কিছু বলি না। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই যে শিশু হত্যা, নারী হত্যা, রাষ্ট্রপতিকে হত্যা এর বিচার না করার একটা আইন করে রাখা হয়েছিল। যাতে কেউ খুনিদের বিচার করতে পারবে না। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। অর্থাৎ আমি আমার মা-বাবা-ভাই যাদের হারিয়েছি, তার বিচার চাইতে পারব না, মামলা করতে পারব না। আমি আর রেহেনা বিদেশে ছিলাম, আমাদেরকে দেশেও আসতে দেয়নি, ৬টা বছর রিফিউজি হিসেবে বিদেশে থাকতে হয়েছিল। ’

তিনি বলেন, ‘৮১ সালে ফিরে এসে আমি যখন মামলা করতে যাই বা তার আগেও চেষ্টা করেছি; কিন্তু মামলা করা যাবে না। কারণ আইনে বাধা। আমার প্রশ্ন আজকে তো অনেক মানবাধিকারের কথা বলা হয়। কেউ মারা গেলে বিচার চাওয়া হয়। আমরা কি অপরাধ করেছিলাম, যারা ১৫ আগস্ট আমাদের আপনজন হারিয়েছি।   কেউ বাবা-মা হারিয়েছে, সন্তান হারিয়েছে, ভাই হারিয়েছে, বোন হারিয়েছে আমাদের অপরাধটা কোথায় ছিল?’

নানা বাধা অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে পারার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার করতে পেরেছি তখনই, ২১ বছরে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎরাই পার হয়ে যখন আমি সরকার গঠন করলাম, যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হই তখনই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে তারপর বিচার করতে পেরেছি। বাতিল করার পথেও তো অনেক বাধা। আমরা জানি আমরা শুনি বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। ঠিক সেটাই হয়েছিল আমাদের ব্যাপারে। অর্ডিন্যান্স বাতিল করতে আমাদের অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। বিচার কাজ শুরু করলাম তখনো দেখেছি, এই হাইকোর্টের বড় বড় জজ সাহেবরা অনেকে মামলা করতে চাননি, বিব্রতবোধ করছেন। এই বিব্রত বোধ হওয়াটাও তো আমার চোখে দেখা। যিনি এই মামলার রায় দিয়েছেন প্রথম, তাকেও অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছে যেমন জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ, খালেদা জিয়া প্রত্যেকেই খুনিদের মদদ দিয়েছে। পুরস্কৃত করেছে। এমনকি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সে খুনি পাশা এবং হুদাকে নিয়ে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি নামের রাজনৈতিক দল করেছিল। অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে তাদেরকে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল। জেনারেল এরশাদ খুনি ফারুককে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করেছিলেন। খালেদা জিয়া খুনি রশিদ এবং হুদাকে জনগণের ভোট চুরি করে, আজকে তারা ভোটের কথা বলে, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে তাদেরকে নির্বাচিত করে সংসদে বসিয়েছে। তাদের মুখেই ভোটের কথা শুনতে হয়!’

তিনি আরও বলেন, ‘জেনারেল জিয়া সেনাপ্রধান হয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিল। তাদের মুখে আমাদের গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়, ভোটের কথা শুনতে হয়, মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়। অথচ এদের হাতে বারবার..আমার উপরে তো কত আঘাত এসেছে। যে নামগুলো ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল, স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল, সত্যকে মুছে ফেলার যে অপচেষ্টা হয়েছিল, বিচারহীনতার যে কালচার শুরু হয়েছিল, আজকে জাতি তা থেকে মুক্ত হয়েছে। ’

অনুষ্ঠান থেকে সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত ৫ হাজার ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ এবং ৩০০টি ‘শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে ‘দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ শীর্ষক ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রের ট্রেলার প্রদর্শন করা হয়।

এছাড়া ‘শেখ রাসেল পদক ২০২২’ প্রদান এবং শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক।

>>> আরও পড়ুন: শেখ রাসেল নামে ৫ হাজার ল্যাব ও ৩০০ স্কুল উদ্বোধন

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২২
এমইউএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।