ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

ব্যবসায়ীরা সংকটে পড়লে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হবে

রিজওয়ান রাহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
ব্যবসায়ীরা সংকটে পড়লে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হবে

দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা ও অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

এ সময় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও জনদুর্ভোগ আরো বাড়বে।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা গেলে আজকে পোশাক কারখানাসহ শিল্প খাতের এই দুরবস্থা হতো না।

উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে মানুষ দুর্ভোগে আছে। জনগণ চাল-ডালসহ নিত্যপণ্য নিয়ে চিন্তিত। দ্রব্যমূল্য নিয়ে তারা সংগ্রাম করছে।
এক-এগারোর সময় দ্রব্যমূল্য ও ব্যবসায়ীদের জুলুমের কারণে দেশের অর্থনীতি সংকটে নিমজ্জিত হয়েছিল।

সেই ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।
ব্যবসা পরিচালনা করতে আমাদের কী কী অসুবিধা হচ্ছে, সেটা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দেখতে হবে। ব্যবসায়ীরা যদি সংকটে নিমজ্জিত হয়, তাহলে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হবে। নানা চেষ্টা করেও তখন মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা যাবে না।

সরকারকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দিতে হবে। তাদের ব্যবসা করার পরিবেশ দিতে হবে। ব্যবসায়ীদের আস্থায় নিতে হবে। তাদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে বসতে হবে।

ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোতে প্রশাসক বসিয়ে রাখা হয়েছে। এসব সংগঠনে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে ব্যাবসায়িক নেতৃত্ব আনতে হবে।
দেশের বেসরকারি খাত ঠিকমতো চালাতে হলে এই খাত যারা চালান তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা কেউ দেশ ছেড়ে পালাবে না। তারা এ দেশেই থাকবে, এ দেশেই মরবে। নীতিনির্ধারকদের বলব, আপনারা তাদের দিকে তাকান। দেশের অর্থনীতিতে তাদের অনেক অবদান আছে।

আমরা তো বলছি না যে ঋণ মাফ করে দেন; আমরা বলছি রিশিডিউল করে দেন। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্রান্তিকালে আগামী ছয় মাস তাদের কাছে কিস্তি চাইবেন না। ব্যবসায়ীদের আগে ঘুরে দাঁড়াতে দেন; তা না হলে ব্যবসায়ীরা দেউলিয়া হয়ে যাবে, খেলাপি ঋণের বোঝা বাড়বে।

সবাই রাস্তায় নেমেছে। ব্যবসায়ীরা যদি রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়, তখন অর্থনীতি ঠিক রাখা কঠিন হয়ে যাবে। দেশের ব্যবস্থাই এমন, যেখানে টিকে থাকতে হলে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সমঝোতা করে চলতে হয়।

এখন যারা আন্দোলন করছে, ভাঙচুর করছে, তাদের কারখানা নেই। তাদের হাজার হাজার কর্মীকে বেতন দিতে হয় না। শ্রমিকরা ভাঙচুর করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা যাবে কার কাছে? এফবিসিসিআই সভাপতির কাছে যাওয়ার পথ বন্ধ, সেখানে বসানো হয়েছে প্রশাসক।

ছোট ব্যবসায়ী যারা ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছে না, তাদের পাঁচ কোটি টাকা বা তার নিচে নেওয়া ঋণের পুনঃ তফসিল করতে হবে। মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠী শক্ত না থাকলে অর্থনীতি বসে পড়বে।

ব্যবসা যেভাবে চলার সেভাবে চলছে না। চলমান সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো ব্যাংকের টাকা দিতে পারছে না। জায়গায় জায়গায় আন্দোলন হচ্ছে। এতে সরবরাহব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব পড়বে। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নতুন বাংলাদেশে আমাদের এখন সামনের দিকে যেতে হবে। বেসরকারি খাতের উন্নয়নে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত বসতে হবে। তাদের মধ্য থেকে যোগ্য লোকদের দিয়ে একটি কমিটি করে দিতে হবে। এটা না হলে বেসরকারি খাত ঠিকমতো চলবে না। যারা এসব বোঝে তাদের কাজে লাগান।

অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত বেসরকারি খাতকে অতি দ্রুত এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

লেখক : সাবেক সভাপতি, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)

 

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।