ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী প্রস্তাবনা

এএইচএম নোমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৩
একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী প্রস্তাবনা

নির্বাচন নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ বলছেন নির্দলীয় বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবার কেউ বলছে দলীয় সরকারের অধীনে।

তা নিয়ে দেশে চলছে সংঘাত-সংঘর্ষ। এ অবস্থায় শুধু আগামী নির্বাচন নয় ভবিষ্যতেও সব নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে তার একটি উৎকৃষ্ট পন্থা বের করা আবশ্যক বিধায় আমরা একটি প্রস্তাবনা পাঠকের সামনে তুলে ধরছি।

এ পরিস্থিতিতে সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে সবার কাছে গ্রহণীয় ব্যবস্থার উদ্ভাবন। এজন্য আমরা বিদ্যমান বিতর্কমূলক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সার্বজনীন গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা হিসেবে ‘নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক পরিষদ’ (Election Caretaking Council-ECC) গঠন করার প্রস্তাব করছি।  

নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক পরিষদ (নিতপ) শুধু নির্বাচনকে তত্ত্বাবধান করবে, সরকারকে নয়। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, গণতান্ত্রিক নতুন সরকার গঠন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে এই পরিষদ সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে। আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক দলগুলোই দেশ পরিচালনা করবে, তাই সমস্যার সমাধানও তাদেরই করতে হবে। এভাবেই এদেশে গণতন্ত্র শেকড় পর্যায় থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত জনকল্যাণমূলক ফল দিতে শুরু করবে। তবেই কেবল পরমসহিষ্ণুতা ও পরস্পর আদর্শিক শ্রদ্ধাবোধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে পারে।

নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক পরিষদ মূল ফ্রেমে যা থাকবে:
সব নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশন ঘোষিত এবং গ্রহণীয় ফ্রেম অনুযায়ী হবে। সবাইকে তা মানতে হবে। যেমন- নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা ও আইন অনুযায়ী কালো টাকার মালিক, ঋণ খেলাপি, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ এ ধরনের কোনো ব্যক্তিকেই মনোনয়ন তালিকায় আনা হবে না। এ পরিষদ নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ, স্বাধীন, স্বচ্ছ, শক্তিশালী  ও গতিশীলতায় সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এটি রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, সুশীল সমাজ, এনজিও ও নেটওয়ার্কসহ সুশাসন বিনির্মাণ গণতন্ত্র চর্চা ও ব্যবহারিকতা আনয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

নীতিগতভাবে এ পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত হলে, সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা ও আইনগত দিক বিবেচনা করে এতে আরো সংযোজন বিয়োজন হতে পারে। এ পরিষদের ব্যয় নির্বাহে প্রয়োজনীয় তহবিল (ফান্ড) প্রার্থী সংশ্লিষ্ট আসন অর্থাৎ পরিষদ সচিবালয়ের মাধ্যমে বা নির্বাচন কমিশন প্রদান করবে। অথবা সরকারের অনুমোদনক্রমে দাতা সংস্থা যেমন- দি এশিয়া ফাউন্ডেশন, ইউএনডিপি, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য আগ্রহী ফান্ড প্রদানকারী আন্তর্জাতিক বা দেশীয় প্রতিষ্ঠান শর্তহীন তহবিল প্রদান করতে পারে।

নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক পরিষদ গঠন ও মেয়াদকাল:
জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু, গ্রহণীয় ও সার্বজনীনভাবে কার্যকর করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি, আগ্রহী ব্যক্তি, জোট ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধির সমন্বয়ে এ পরিষদ গঠন করা হবে। এ পরিষদ নির্বাচনকালে প্রার্থী প্রাক-মনোনয়ন, মনোনয়ন, প্রচারণা, নির্বাচন পরিচালনা ও ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সহায়ক দায়িত্ব পালন করবে।

নির্বাচন শুরু ও ফলাফল প্রক্রিয়া পর্যন্ত  দল-বিদল, মত ও পন্থা অনুযায়ী কারা কোথায়  কি ধরনের অবস্থান ও কার্যক্রম নেবেন তা সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ প্রতিনিধি অর্থাৎ এই পরিষদ একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমে থেকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবে ও বাস্তবায়নে কাজ করবে। অর্থাৎ যার যার দল-বিদল মত-পথ অনুযায়ী যে যেখানে আছেন, সেখানেই নীতি-আদর্শ নিয়ে কাজ করবেন ও অবস্থান নেবেন। এ পরিষদের মেয়াদকাল হবে নির্বাচন বছরে। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন থেকে পূর্বের ৯ মাস ও নির্বাচন ফলাফলসহ  dispute মিমাংসা পর্যন্ত  পরবর্তী ৩ মাস, মোট ১২ মাস।

কাঠামো ও গঠন প্রণালী:
১. এই পরিষদের কাঠামো হবে ৫ (পাঁচ) স্তর বিশিষ্ট ক. জাতীয় খ. জেলা গ. আসন/উপজেলা ঘ. ইউনিয়ন এবং ঙ. ভোট কেন্দ্রে ভোটার পরিষদ। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্ট ধাপের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ, শিক্ষক, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, আইনজীবী ও এনজিও প্রতিনিধি এ পরিষদের সদস্য হবেন। প্রত্যেক রাজনৈতিক দল থেকে ৩ জন করে প্রতিনিধি থাকবে। তারা হলো সংশ্লিষ্ট পর্যায়ের দলের  সভাপতি, সেক্রেটারি ও সাংগঠনিক সম্পাদক। ধরুন সেখানে রয়েছে ৫টি দল আছে আর প্রতি দলের সদস্য সংখ্যা তিন জন করে। তাহলে পাঁচ দলে মোট ১৫ জন সদস্য থাকবে। এ পরিষদ ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্র  জাতীয় এ পাঁচ পর্যায়েই সাচিবিক সমন্বয় কাজ হবে।

২. চলতি ও ইমিডিয়েট পাস্ট সরকারি দলের সংশ্লিষ্ট ধাপ/শাখার সভাপতিদ্বয়/চেয়ারপারসন যৌথ সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। দলের অনুমোদনে জোটভুক্ত দলের সভাপতির বদল হতে পারে।

৩. নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট পর্যায়ের কর্মকর্তা সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।

৪. ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ সদস্য (EWG) বা বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ (বামাসপ) বা নির্বাচন কমিশন তালিকাভুক্ত নির্বাচনে দেশীয় এলাকা পর্যবেক্ষণ সংস্থা/এনজিও প্রতিনিধি যুগ্ম সচিব হবে।

৫. নির্বাচন কমিশন বা EWG-The Asia Foundation বা বামাসপের মাধ্যমে দলসমূহের সঙ্গে ওয়ার্কিং পেপার দিয়ে সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক পরিষদ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। যেমনটি নির্বাচন কমিশন বিগত বছর ও বর্তমানেও বিভিন্ন ইস্যু এ ক্ষেত্রে করছে।

মনোনয়ন কাঠামো:
জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মনোনয়ন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে নির্বাচন ফলাফল পর্যন্ত সব কাজে সহায়ক হিসেবে এ পরিষদ কাজ সমাধা করবে। এছাড়া যোগ্য প্রার্থীর রূপরেখা ও মাপকাঠি, পরিষদ ও নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনে আলোচনাক্রমে নির্ধারণ করে নিবে।

প্রার্থী মনোনয়ন কে ঠিক করবে ও কিভাবে করবে :
স্থানীয় দলীয় বা নির্বাচকমণ্ডলীর প্রস্তাবে ও সমর্থনে প্রতি এলাকায় সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলীয় কমিটি প্রার্থী মনোনয়ন করবে। জেলা ও কেন্দ্রীয় দলীয় কমিটি রিভিউসহ তার অনুমোদন দিবে। নিজ সংসদ এলাকার প্রতিটি ইউনিয়নে দু’বারে দু’টি জনসভা করবে। একটি অবহিতকরণ, অন্যটি প্রস্তুতি সভা। সভার স্থান ইউনিয়ন পরিষদ অঙ্গন বা নিতপ আলোচনাক্রমে যেকোনো খোলা জনসমাগমস্থল/মাঠ হতে পারে। উভয় সভার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে মাইক, চোঙ্গা, ঢোল, সহরত বা স্থানীয় যেকোনো বা সাধ্যমত সব প্রকার প্রচারণার ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে স্থানীয় জনগণের সমর্থনে মনোনয়ন আগ্রহী ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়। সব ইউনিয়নে জনসভা শেষ করে উপজেলা পরিষদ/সংসদ এলাকা পর্যায়ে বৃহৎ জনসভার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে দলীয়ভাবে  আগ্রহী ও প্রস্তুত সব তালিকাভুক্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সংসদ এলাকা থেকে প্রাপ্ত তালিকার সব প্রার্থীর অংশগ্রহণে ‘ছাঁকুনি-ঝাঁকুনি’র মাধ্যমে নির্বাচনী এলাকার সংশ্লিষ্ট দলীয় প্রার্থী তালিকা তৈরি করবে। এলাকায় ভালোর পক্ষে অবস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সততা, সাহস, গ্রহণযোগ্যতা, মনোবল, ইচ্ছা, ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করে জেলা কমিটির কাছে তালিকা জমা দেবে।

জেলা কমিটি যাচাই-বাছাই করে জাতীয় কমিটির কাছে তালিকা পৌঁছাবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলওয়ারী বাছাই চূড়ান্ত করে মনোনয়নের জন্য জাতীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করবে যা বিদ্যমান নিয়ম-নীতির মধ্যে রয়েছে বা গত নির্বাচনে ২/১টি দল অনুশীলনও করেছে। দলীয় একাধিক মনোনয়ন প্রার্থী হলে সেক্ষেত্রে দলীয় সংশ্লিষ্ট কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে  এ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নির্বাচন এবং তত্ত্বাবধায়ক পরিষদ চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপে যাবে।

নির্বাচনী প্রচারণা:
সব প্রার্থী দলীয়, নির্দলীয় বা স্বতন্ত্র যেমনই হোক না কেন সবাইকে একই সাইজের, এক রং-এর পোস্টার ব্যবহার করতে হবে। যা নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে শুরু করেছে। প্রতি গ্রাম, পাড়া, ইউনিয়ন, জনসমাগমস্থল, বাজার কেন্দ্রে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে পুরো এলাকা মিলে মোট ২০-২৫টি সভা হবে। একই মঞ্চে সব প্রার্থী যার যার নির্বাচনী ওয়াদা ও আদর্শসহ বক্তব্য রাখবেন। যা নিতপ ব্যবস্থাপনার সব দলের সক্রিয় সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই হবে।

নির্বাচনী ফান্ড/ব্যয়:
কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন কমিশন সরাসরি নির্বাচনী ফান্ড দিতে পারে। অথবা প্রতি প্রার্থী ২০ (বিশ) লাখ টাকা সংশ্লিষ্ট আসন পরিষদ ফান্ডে জমা দেবে। নির্বাচন কমিশন সর্বশেষ আরপিও অনুযায়ী প্রার্থী প্রতি ২৫ (পঁচিশ) লাখ ব্যয় ধার্য করেছে। বাকি পাঁচ লাখ টাকা প্রার্থী নিজ এখতিয়ারে রাখবে। এভাবে নির্বাচনী ব্যয় কমালে ও বাধ্যবাধকতায় রাখলে নীতিমালা অনুযায়ী স্বচ্ছতায় ব্যয় করতে পারবে। নির্বাচন ব্যয় সহনীয় হবে। এসব বিষয়ে আরো আলোচনাক্রমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। ফলে কালো টাকার মালিকদের দাপট কমবে। সৎ, সজ্জন ও যোগ্য প্রার্থীদের পক্ষে মনোনয়ন পাওয়া সহজ হবে।

এখন নির্বাচনী বিশাল ব্যয়ের অজুহাত তুলে অনেক সৎ ও সজ্জন ব্যক্তিকে রাজনৈতিক দল মনোনয়ন দিচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর মনোনয়ন ফি নিজ আয় হতে জমা দিতে হবে। নির্বাচনী ব্যয় সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশন ঘোষিত বিদ্যমান নিয়ম কাঠামো এ পরিষদ প্রয়োজনে আলোচনায় আনতে পারবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় মনিটর করবে মর্মে ঘোষণা দিয়েছে।

‘কলা গাছে ভোট দিন’ এমন পরিবেশের পাশাপাশি ‘প্রত্যাশিত প্রার্থীকে ভোট দিন’-এ আন্দোলনকে আদর্শিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, সুশীল সমাজ  শ্রেণি পেশার নেতৃবৃন্দ এবং বিবেকবান ব্যক্তিদের অবশ্যই এগিয়ে নিতে হবে। পুরো প্রক্রিয়ায় সব দল ও সুশীল সমাজের প্রবক্তারা অংশ নিতে হবে। সাধারণ মানুষের দাবি-দুর্নীতি, অপনীতি, সন্ত্রাস, কালো টাকা, ঋণ খেলাপি ও মিথ্যা উন্নয়ন প্রবক্তাদের হাত থেকে উদ্ধার করার পথ রচনার কাজ আমাদের শুরু করতেই হবে। যে পথে বৈষম্যহীন স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে, শোষণহীন সমাজ ও অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে, মুক্তিযুদ্ধ এবং গণতন্ত্রের স্বাদ ও সুফল দেশবাসী সমভাবে ভোগ করবে।

আসুন সবাই মিলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সবার কাছে গ্রহণীয় করতে
নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক পরিষদ (তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত) গঠন করি। সৎ, যোগ্য, ভাল মানুষের রূপরেখা ও সংজ্ঞা চূড়ান্ত করি ও বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ ইউনিয়ন থেকে বাছাই শুরু করে সংসদ এলাকাভিত্তিক প্রার্থী মনোনয়ন দেই। দুর্নীতি, অপনীতি, সন্ত্রাস, কালো টাকা, ঋণ খেলাপি, ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটধারী ক্ষমতালিপ্সু রাজনৈতিক নামধারী প্রার্থী ও মিথ্যা উন্নয়ন বুলি প্রবক্তাদের প্রত্যাখ্যান করি। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করি এবং নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক পরিষদ গঠনের মাধ্যমে আদর্শিক রাজনৈতিক কালচার সৃষ্টি করি।

জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। সব রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট সবাই তা বিশ্বাস করে ও বলে, তাই আসুন এ বিশ্বাসকে বাস্তবে রূপদান করার জন্য তৃণমূলে ‘ভোট কেন্দ্র’ পর্যায় থেকে শুরু করে ‘ভোটার পরিষদ গঠন’ করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রস্তাবিত নিতপ গঠন করে স্বাধীন দেশের জনগণকে প্রভাবহীনভাবে ভোটাধিকার  প্রয়োগ করে সত্যিকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রাষ্ট্র পরিচালনা, ক্ষমতা ও আইনের শাসন প্রয়োগ করি।

প্রস্তাবিত নিতপ’র বিষয়ে বিগত কয়েক বছরের সেমিনার, সভা, সংলাপ, টকশোতে রাজনৈতিক দলসহ সব মহল একে বাস্তবসম্মত, ইউনিক, দেশজ উদ্ভাবনী ও আদর্শিক ফর্মূলা বলে আখ্যায়িত করেছেন।

মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, সাবেক উপদেষ্টা এএসএম শাহজাহান, ও এম. হাফিজউদ্দিন খান, সাংবাদিক সেলিম সামাদ, মানবাধিকার নেতা তালেয়া রহমান, রাষ্ট্রদূত হেদায়েতুল ইসলাম প্রমুখ এর স্বপক্ষে জোড়াল যুক্তি তুলে ধরেছেন যা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়েছে।

তবে প্রশ্ন হল বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? প্রধান দু’দলের সদিচ্ছা ও সম্মতি থাকলেই শুধু তা সম্ভব।

সংঘাতহীন রাজনীতি পরিহারে, দয়া করে যদি দুই নেত্রী যথাক্রমে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া একটু সম্মতি দেখান, ‘জনগণই ক্ষমতার উৎস’র জনতারা কিভাবে আপনাদের অভিনন্দিত করেন ও দেশটার চেহারাই পাল্টে দেন, যার নেতৃত্বে আপনারাই থাকবেন। এর ফলে জেড়াতালি, সাময়িক সমাধানের পথ ও মলম দিয়ে আপাত চিকিৎসার বিপরীতে, দীর্ঘস্থায়ী তৃণমূল থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দেশ ও জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। শান্তি আসবে, হানাহানি, হিংসা বিদ্বেষ দূর হবে। ‘নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক পরিষদ’র ধারণাটি আপনাদের সম্মতির এই অবদানের জন্য জাতির ইতিহাসে আপনাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, চিরজীবী থাকবেন, দেশ ও পৃথিবী গণতন্ত্রের একটি নতুন পথ খুঁজে পাবে।

nomanলেখক: এএইচএম নোমান
সভাপতি, বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ-বামাসপ

 

 

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৩
সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।