ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

অবাস্তব প্রস্তাব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৩
অবাস্তব প্রস্তাব


বেশ কিছুদিন আগে “সাইবার কথোপকথন” নামে একটি রম্য রচনা লেখার (ব্যর্থ) চেষ্টা করেছিলাম। সেখানে দু’জনের মধ্যে মাইক্রোসফটের লাইভ মেসেঞ্জারের মাধ্যমে চ্যাট করার প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলার প্রয়াস ছিল।

ইচ্ছা ছিল এর মাধ্যমে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বার্তা একটু হালকা মেজাজে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

এক পর্যায়ে এই রম্য রচনার প্রথম চরিত্র (যার নাম পার্থ), আমাদের দেশের মাননীয় এমপি আর মন্ত্রী মিনিস্টারদের যোগ্যতার প্রসঙ্গের অবতারণা করে। পার্থ এর সঙ্গে এই রচনার দ্বিতীয় চরিত্রের (পার্থর আপু, যার নাম বর্ষা) কথা এগিয়ে চলেঃ
...
-আছছা আপু! আমার কি মনে হয় জান?
-কী?
-আমাদের এমপি আর মন্ত্রী মিনিস্টারদের যোগ্যতার মধ্যে কয়েকটা জিনিস থাকা দরকার।
-যেমন?
-যেমন, তার আচার-আচরণ, চলাফেরা, পারিবারিক ইত্যাদি বিষয়ে কতগুলো সীমাবদ্ধতা থাকতে হবে।
-বুঝলাম না।
-এই ধর, সে কোনো এসকর্ট নিয়ে বা নিরাপত্তা নিয়ে চলতে পারবে না।
-কেন?
-যাতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতা সে নিজে বুঝতে পারে। প্রচণ্ড ট্রাফিক জ্যাম এর দুঃসহ কষ্ট সে বুঝতে পারে;
-ভালই বলেছিস! আর কিছু?
-যেমন, তাঁদের ছেলেমেয়ে কেউ বিদেশে পড়তে পারবে না, অবশ্যই দেশে পড়তে হবে!
-অ্যাঁ! এইটা আবার কেন? মন্ত্রীদের পুত্র/পোষ্যরা আবার কি দোষ করল?
-আসলে কোনো দোষ নাই। কিন্তু এইটা হবে মন্ত্রিত্বের চরম পরীক্ষা!
-কী রকম?
-তাঁরা আসলেই আত্মত্যাগে ব্রতী কি না! তাদের পরিবার/পুত্র/পোষ্য, তাঁরা সবাই আত্মত্যাগে সচেষ্ট কি না! তাঁরা আসলেই বাবার মন্ত্রিত্বের সুযোগে অবৈধ কিছু সুযোগ পেলে করবে কি না---
-একটু বেশি হয়ে গেল না?
-হ্যাঁ হল! কিন্তু এই নিয়মটা থাকলে, তুমি দেখো, তাঁরাই রাজনীতিতে আসবেন যারা নির্লোভ, ত্যাগী। যাদের পরিবারেও সেই ধারাটাই প্রতিষ্ঠিত!
-হুঁম!
-খেয়াল করে দেখ, বেশির ভাগ এমপি/মন্ত্রীদের ছেলেরা দেশের বাইরে পড়ে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নাই।
-হয়ত তুই ঠিকই বলেছিস।
-হয়ত কেন? তুমি দেখ, নোংরা ছাত্ররাজনীতির প্রভাবে কত সমস্যা আমাদের শিক্ষাঙ্গনে! তাও ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হচ্ছে না কেন?
...


যাই হোক, পাঠক নিশ্চই ভাবছেন, এই (ব্যর্থ) রম্য রচনার অংশবিশেষ এখানে উল্লেখ করে এই অধম আবার কি প্রমাণ করতে চাইছে। সেই প্রসঙ্গে আসছি। তবে তার আগে, রম্য রচনাটিকে ব্যর্থ কেন বলছি, তার একটু ব্যাখ্যা দিয়ে নিই। আসলে এটি ব্যর্থ। কারণ, এটি ছাপার অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছিল।

যারা কিছু মূল্যবান সময় নষ্ট করে রচনাটি পড়েছিলেন তাঁদেরও মনে হয়েছে এর কথাবার্তা বাস্তবতা বর্জিত। যেমন, পার্থ যখন বলে যে আমাদের সম্মানিত মন্ত্রী মহোদয়দের পুত্র/পোষ্যদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই পড়তে হবে, নাহলে তাঁরা মন্ত্রী হতে পারবেন না, তখন ব্যাপারটা কতখানি বাস্তবসম্মত সে প্রশ্ন থেকেই যায়! আমারও শেষ পর্যন্ত মনে হয়েছিল যে এরূপ ভাববাদী অবাস্তব চিন্তা ভাবনার তেমন কোনো মানেই নেই। তাই আমি নিজেও দমে গিয়েছিলাম।

তবে সম্প্রতি একটি ঘটনায় আমি হালে পানি পেয়েছি। আমার আবার এই আপাতঃ বাস্তবতা বিবর্জিত কথাবার্তাগুলো বেশ কার্যকরি বলে মনে হচ্ছে। আর সে জন্যেই এতো কথার অবতারণা!

তাহলে মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাওয়া যাক। কেন এই রম্য রচনার অংশবিশেষ এখানে উল্লেখ করলাম?
সম্প্রতি বেলারুশ সফর থেকে ফিরে এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী মহোদয়কে তিরস্কার করেছেন বলে খবর পাওয়া যায়। বস্তুত বাংলাদেশ বিমানের সেবার মানের চরম খারাপ অবস্থা ছিল এই তিরস্কারের মূল একটি কারণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি বাংলাদেশ বিমান ব্যবহার না করে অন্য কোনো এয়ারলাইন্স ব্যবহার করতেন, তাহলে তিনি কি বাংলাদেশ বিমানের এই তথৈবচ অবস্থা অনুধাবন করতে পারতেন?
আসল কথা হল, যতই আন্তরিকতা থাকুক না কেন, সবচেয়ে বেশি কাজ হয় স্ব-লব্ধ অভিজ্ঞতা থেকেই। আর তাই, আমার আগের লেখার চরিত্র পার্থ আর বর্ষার মতের সঙ্গে মিল রেখে বলতে হয়, আমাদের দেশের সমস্যাগুলোর সরাসরি অভিজ্ঞতা আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের হওয়া দরকার। তাঁরা যদি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়ে থাকেন, তাহলে হয়তো ট্রাফিক জ্যাম দূর করার ব্যাপারে তাঁরা সচেষ্ট হবেন; তাঁদের পুত্র/পোষ্যরা যদি বর্তমানে চলতে থাকা লেজুড়বৃত্তিক (অপ)ছাত্ররাজনীতির কবলে পড়ে শিক্ষাজীবনে ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে যান, তাহলে, হয়তো তাঁরা এই লেজুড়বৃত্তিক (অপ)ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে আন্তরিক হবেন। এইরকম একটা অবস্থার আশা করা কি তবে একেবারেই বাস্তবতা বিবর্জিত?

ডঃ মোঃ সোহেল রহমান: অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) sohel.kcl@gmail.com

বংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, জুল‍াই ২৪, ২০১৩
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।