গত এক বছরে এই প্রশ্নটাই বেশি এসেছে কানে। পরিচিতজনরা প্রায় সবাই অবাক স্বরে জানতে চেয়েছেন, প্রিন্ট ছেড়ে কেনো অনলাইনে এলাম।
চার বছর পর আবার ডাক এলো। এবার সবকিছু প্রায় পাকা ছিলো। ই-মেইলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারও পাঠানো হলো। কিন্তু অজুহাত দেখিয়ে গেলাম না। ভয় হচ্ছিলো, এডিটর ইন চিফ হয়তো আর ডাকবেন না। দেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যমের প্রবর্তককে ফিরিয়ে দেওয়ার দুঃসাহসের ফলস্বরূপ এটা হওয়া বাঞ্ছনীয়ও ছিলো! তবে তিনি ধারণাটা ভুল প্রমাণ করলেন। গত বছরের মে মাসে আবার ডাক এলো। এবার আর বাংলানিউজ কার্যালয় নয়, খুব সকালে অমলেট আর জুস খেতে খেতে আলোচনা হলো হোটেল ওয়েস্টিনে। ‘বেতন নিয়ে ভেবো না। জয়েন করো’- বলে আশ্বস্ত করলেন।
১ জুন ২০১৪। বাংলানিউজে যোগ দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই মুঠোফোনের চার্জ কমতে লাগলো! হাতেগোনা দুই-তিনজন অভিনন্দন জানালেন। বেশিরভাগের মুখ থেকেই বেরিয়ে এলো- ‘পত্রিকা ছেড়ে অনলাইনে কেনো?’, ‘অনলাইনে কেনো গেলেন ভাই!’ জাতীয় আফসোস আর সমবেদনা! কিন্তু আমি বরাবরই মনকে অনুসরণ করি। মনের কথা শুনে সবকিছুতে যে ইতিবাচক ফল পাই তা নয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বস্তি আসে এই ভেবে- যাক ভুলি করিনি। বাংলানিউজে যোগদান করাটা যে ভুল হয়নি, দিন গড়ানোর সঙ্গে টের পেতে লাগলাম।
বাংলানিউজের মূল প্রতিপাদ্য সংবাদ বিনোদন সারাক্ষণ। এতেই স্পষ্ট বিনোদনকে এখানে কতোটা গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ বছর নিশ্চয়ই তা আরও ব্যাপক হয়েছে কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণের সুবাদে। গেল জানুয়ারিতে এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন ভাইকে কানে যাওয়ার প্রস্তাবনা দিতেই শুনলাম- ‘এগোতে থাকো। ’ তার উৎসাহ আর অকৃত্রিম সহযোগিতা বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন এই আয়োজনে পৌঁছে দিয়েছে আমাকে।
গত ১৩ থেকে ২৪ মে অনুষ্ঠিত ৬৮তম কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জৌলুস নিয়ে তরতাজা সব খবর বাংলানিউজের কোটি কোটি পাঠক পেয়েছেন দেশের শীর্ষ এই অনলাইন নিউজ পোর্টালে। চলচ্চিত্র জগতের এই বিশ্ব আসর কাভার করতে গিয়ে ঘুরেছি ফ্রান্সের প্যারিস ও কান শহর। প্রতি বছর সারাবিশ্ব থেকে বাছাইকৃত সাংবাদিককে কান উৎসব কাভার করার সুযোগ দেন এর আয়োজকরা। ঢাকাস্থ ফরাসি দূতাবাস যাচাই-বাছাই করে বাংলানিউজ নিয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছে কান উৎসব কর্তৃপক্ষকে। তারই সুবাদে পেয়েছি আয়োজকদের আমন্ত্রণ। তারপরও ইউরোপের সবচেয়ে উন্নত দেশটিতে যাওয়া ছিলো ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে সে দুশ্চিন্তায় কখনও ভেঙে পড়তে দেননি এডিটর ইন চিফ। নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়ে সব বন্দোবস্ত করেছেন তিনি।
কানে যাচ্ছি খবর জানার পর থেকে অভিনন্দন আসতে লাগলো মোবাইলে, ফেসবুকে, টুইটারে, ই-মেইলে। কয়েক মাস আগে যাদের মুখে শুনেছি, ‘অনলাইনে কেনো গেলেন ভাই!’, তারাও বাহবা দিলেন। কান থেকে ফেরার পর তো সবার কাছে আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছি। বাংলানিউজের সংবাদকর্মী হওয়ার সুবাদেই সাংবাদিকতার পথচলায় যুক্ত হলো এই পালক।
কান উৎসবের পাশাপাশি গত এক বছর বাংলানিউজের বিনোদন বিভাগের অর্জন কম নয়। বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে বিখ্যাত গায়িকা শাকিরার ‘লা লা লা’ গানের বাংলা সংস্করণ তৈরির উদ্যোগ এর মধ্যে অন্যতম। নিঃস্বার্থভাবে গানটির কাজ করে দেওয়ার জন্য তিশমাকে কৃতজ্ঞতা। ধন্যবাদ গানটির ভিডিও নির্মাতা জয়ন্ত রোজারিওকে।
ফুটবলের পর বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়েও বিনোদন বিভাগের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে মৌলিক গান ‘বুকের মাঝে বাংলাদেশ’। এজন্য কৃতজ্ঞতা জানাই গানটির ভিডিও নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও সংগীত পরিচালক ও গায়ক আরফিন রুমিকে। ধন্যবাদ গানটির আরেক গায়িকা কর্নিয়াকে।
এ দু’টি গানের প্রসারে দেশের অন্য সংবাদমাধ্যমগুলোর অকৃপণ সহযোগিতা ভোলার নয়। গান দু’টি প্রকাশের জন্য বাংলানিউজ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সবার স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণও মনে রাখার মতো। পাঠক-শ্রোতাদের সাড়াও ছিলো উৎসাহব্যঞ্জক। মোবাইলে ওয়েলকাম টিউন হিসেবেও বাংলানিউজ এটি প্রকাশ করেছে। ইউটিউবেও দিনে দিনে গান দু’টির হিট বাড়তে লাগলো। এখনও বাড়ছে।
বাংলানিউজে বিনোদন ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিদিনের আয়োজনের পাশাপাশি সাপ্তাহিক আয়োজন চালুর প্রস্তাবও পাস হলো । নাম রাখা হলো ‘তারার ফুল’। তারাদের গল্প নিয়ে বড় আকারের আর বিশেষ ফিচারগুলো থাকে এখানে। তারার ফুল থেকেই মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীকে তার ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ ছবি নিয়ে দর্শক-পাঠকের প্রশ্নোত্তর পর্ব আয়োজন করে ভালো সাড়া পাওয়া গেলো। এই তো গত সপ্তাহে নিজেদের উদ্যোগে সাতক্ষীরায় গৌতম ঘোষের ‘শঙ্খচিল’ ছবির সেট ঘুরে এলো বাংলানিউজের বিনোদন বিভাগ। তারার ফুলে এখন সে খবর রয়েছে।
দেশীয় সংস্কৃতি ও বিনোদন অঙ্গনের উৎকর্ষতাই বিনোদন অঙ্গনকে বাংলানিউজের প্রাধান্য দেওয়ার মূল কারণ। তাই নবীন-প্রবীণ, তারকা কিংবা উঠতি শিল্পী- সবাইকে গুরুত্ব দেয় বিনোদন বিভাগ। ফলে সবার মধ্যে এর চাহিদা ব্যাপক। চলচ্চিত্র, টেলিভিশন অঙ্গন, সংগীত, মঞ্চ, যাত্রা, চিত্রকলা সব মাধ্যমের শিল্পী-কলাকুশলীরা আলাদা গুরুত্ব দেন বাংলানিউজকে। পত্রিকায় একটি লেখা লিখে যে প্রতিক্রিয়া আসতো, এখন আসে কয়েকগুণ বেশি। দিনে দিনে তা বাড়ছে। বাড়বেও।
অনলাইনেই পাঠকরা এখন খবর পড়েন। সবকিছুর খোঁজ রাখেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকও সম্প্রতি মন্তব্য করতে ভুললেন না- প্রিন্ট নয়, অনলাইনে সংবাদ পড়তে হবে। দেশে অনলাইন সংবাদমাধ্যমের এই প্রভাব বৃদ্ধিতে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বাংলানিউজ মানে এখন এক উন্মাদনা! পাঁচ পেরিয়ে ছয়ে পা রেখেছে সংবাদমাধ্যমটি, বিনোদন বিভাগ আগামীতে আরও অনেক কার্যক্রম নিয়ে কাজ করবে। এখন সেগুলোর পরিকল্পনা চলছে। একে একে পাঠকদের সামনে আসবে সেসব।
আমার ভাই-বেরাদররা- অনলাইনে কেনো এলাম বোঝা গেছে?
লেখক: স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট (বিনোদন বিভাগের প্রধান), বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলাদেশ সময়: ০৫২৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৫
জেএইচ/এএসআর