কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকে পদযাত্রায় রাষ্ট্রের যেসব বিবেচনায় নিতে হবে
বৈষম্য কমানোর প্রতিশ্রুতি সূচক ২০১৮ (commitment to reducing inequality index published by Oxfam) বিবেচনায় ১৫৭টি দেশের র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ১৪৮তম অবস্থানে, যা দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে সপ্তম। সামাজিক খাতে (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরখা) ব্যয়, প্রগতিশীল করারোপ ব্যবস্থা এবং শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় সরকারের প্রয়াস-এই তিনটি বিষয়ের ভিত্তিতে (বৈষম্য কমাতে সহায়ক) সূচকটি তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা খাতের চিত্র
বাংলাদেশে স্বাধীনতার পরপর সরকারি কর্মচারীদের পেনশন ও রিলিফভিত্তিক কিছু খাদ্য কর্মসূচি ছাড়া কল্যাণ রাষ্ট্রের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উপকরণ ছিল না। সত্তর ও আশির দশকে উদীয়মান এনজিও আন্দোলন ও বৈদেশিক উন্নয়ন সহযোগীদের তৎপরতায় সামাজিক নিরাপত্তা ও সামাজিক উন্নয়নের বিষয়গুলো গুরুত্ব পেতে শুরু করলেও রাষ্ট্রের ভূমিকা তখনো যৎসামান্যই ছিল। মূলত নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে রাষ্ট্র নাগরিকের কল্যাণে অধিকতর দায়িত্ব নিতে শুরু করে। তখনই বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার মতো কর্মসূচিগুলো চালু হয়। পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মেয়েদের জন্য বৃত্তি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যে বই বিতরণ শুরু হয়। এসব কর্মসূচির আওতা ও সুবিধার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং সমাজের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে নতুন নতুন কর্মসূচি যোগ হতে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় অর্ধশতাধিক কর্মসূচি চালু আছে, যদিও একটি বড় অংশ ব্যয় হয় সরকারি কর্মচারীদের পেনশনে। এশিয়ার ২৫টি দেশের সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম নিয়ে ‘দ্য সোশ্যাল প্রোটেকশন ইন্ডিকেটর ফর এশিয়া: অ্যাসেসিং প্রোগ্রেস’ শীর্ষক এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে নিম্নের চিত্র উল্লেখ করা হয়:
সামাজিক সুরক্ষা খাতে খরচের দিক থেকে বাংলাদেশ এশিয়ার নিচের দিককার পাঁচটি দেশের একটি। বাংলাদেশের পেছনে আছে শুধু মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভুটান ও লাওস। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ২১তম।
দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ পরিমাণ অর্থ সামাজিক সুরক্ষায় খরচ করে বাংলাদেশ। তালিকার শীর্ষে থাকার জাপান খরচ করে জিডিপির ২১ শতাংশের বেশি।
বাংলাদেশে নারীদের চেয়ে পুরুষেরা বেশি সুরক্ষা পান। আবার সামাজিক সুরক্ষার জন্য গরিব মানুষের পেছনে যতটা খরচ হয়, এর চার গুণ বেশি খরচ হয় ধনীদের পেছনে।
বাংলাদেশের মাত্র ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ সামাজিক সুরক্ষার কোনো না কোনো সুবিধা পান।
বাংলাদেশে গরিবদের চেয়ে ধনীরাই সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা বেশি পান। তাদের পেছনে বেশি খরচ হয়। এডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে মাথাপিছু জিডিপির মাত্র দশমিক ২ শতাংশ গরিব মানুষের পেছনে খরচ হয়। আর ধনীদের পেছনে খরচ হয় দশমিক ৮ শতাংশ। এর মানে, গরিবের পেছনে যত টাকা খরচ হয়, এর চার গুণ বেশি টাকা ধনীদের জন্য খরচ হয়।
দেশে প্রায় ৭৪ লাখ লোক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা পান। এই কর্মসূচির আওতায় সরকার বিধবা ভাতা, দরিদ্র নারীদের মাতৃত্বকালীন ভাতা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি দিয়ে থাকে। এ ছাড়া টেস্ট রিলিফ, ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিডি), কাজের বিনিময়ে টাকাসহ (কাবিটা) বিভিন্ন কর্মসূচিও আছে। তবে বাংলাদেশের সব নাগরিক পায়, এমন কোনো সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নেই।
বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তামূলক বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রতিবছর খরচ বাড়ালেও তা পর্যাপ্ত নয়। গত ১০ বছরে সামাজিক সুরক্ষায় সরকার খরচ বাড়িয়েছে প্রায় তিন গুণ। প্রতিবছরই সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও ভাতা বাড়ানো হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৬ ধরনের কর্মসূচিতে ২৭ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১০ বছর আগে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা জিডিপির ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এই হিসাবের মধ্যে অবশ্য সরকারি পেনশনভোগীদের জন্য বরাদ্দ করা টাকাও আছে। সরকারি চাকরির পর অবসরভোগীদের প্রায় শতভাগই দারিদ্র্যসীমার ওপরে বাস করেন। তাই পেনশন বাবদ খরচ বাদ দিলে সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ জিডিপির ২ শতাংশের মতো হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতির তথ্য মতে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী জিডিপির অনুপাতে সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়ানো সম্ভব হয়নি। যেমন সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করার কথা যা হয়নি।
সুতরাং দেখা যায় যে, বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশের সাথে তুলনা করে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। সামাজিক সুরক্ষা বাজেটের প্রায় ৯৫ শতাংশই সরকার তার নিজস্ব উৎস থেকে অর্থায়ন করলেও তার পরিমান খুবই অপর্যাপ্ত যা বাংলাদেশের কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পক্ষে পর্যাপ্ত নয়। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনয় সামাজিক সুরক্ষায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তিন শতাংশের ব্যয় লক্ষ্যমাত্রা কখনও অর্জন করা যায়নি। বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত তুলনীয় সকল দেশের চেয়ে কম যা মাত্র ১০ শতাংশ। এমনকি নেপালেও যা ১৮ শতাংশ। ১৭ কোটি জনগণের দেশে মাত্র ২২ লাখ লোক বাংলাদেশে আয়কর রিটার্ন দাখিল করে যা হতাশাজনক এবং সুশাসন এবং জনগণের দায়িত্বশীল আচরণের নির্দেশক নয়। ফলশ্রুতিতে, সরকার এ খাতে পর্যাপ্ত ব্যয় করতে সক্ষম হচ্ছে না।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়ের চিত্র
আমাদের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে দুটো বিষয় আছে। বরাদ্দ এবং ব্যবস্থাপনা। এ বিষয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরছি:
দেশের প্রতি ১৫৮১ জনের জন্য একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ও ১১৯৬ জনের জন্য হাসপাতালের একটি বেড রয়েছে। (২০১৭-এর তথ্য)।
প্রতি ৩০ হাজার জনসংখ্যার জন্য মেডিকেল টেকনিশিয়ান মাত্র ১ জন। নয়টি বিভাগে শুধুই ১৩০ টেকনোলজিস্ট কর্মরত।
বাজেট ২০২০-২১ এ অনেক বিশেষজ্ঞ জিডিপির ২ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের সুপারিশ করেছেন, তবে সরকার কর্তৃক বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ০.৯ শতাংশ।
৭ম পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যখাতে গড়ে জিডিপির ১.২ শতাংশ বরাদ্দের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মোট বাজেটের ৪.৯ শতাংশ বা জিডিপির ০.৯ শতাংশ বরাদ্দ করা হচ্ছ। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১ তে স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির ৩ শতাংশ বা বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাবনা আছে যদিও।
এই অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ব্যয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে। মালদ্বীপ খরচ করে জিডিপির ১৩.৭ ভাগ, নেপাল ৬ ভাগ, ভারত ৪.২ ভাগ, শ্রীলঙ্কা ৪.১ ভাগ, আর বাংলাদেশ খরচ করে মাত্র ৩.৪ ভাগ। বাংলাদেশের ৩.৪ ভাগের মধ্যে সরকারি খরচ ১ শতাংশের কম যা আগেই বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে খরচের মাত্র ৩৪ ভাগ দেয় সরকার আর ব্যক্তি খরচ করে প্রায় ৬৬ ভাগ (Out of pocket expenditure)।
২০১১ সালের স্বাস্থ্যনীতিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য বাজেট হবে জিডিপির ৪ শতাংশ। ২০১২ সালে স্বাস্থ্য অর্থায়ন কৌশলপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্য ব্যয় ২০৩২ সালের মধ্যে জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা আছে। এমনকি ২০১৬ সালের মধ্যে ১০ ভাগ এবং ২০২১ সালে তা ১২ ভাগে উন্নীত করার লক্ষ্য স্থির করা হয়। অথচ বাস্তবে তা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে জাতীয় বাজেটের শতাংশের তুলনায় কমলেও টাকার অঙ্কে বাজেট কিন্তু বহুগুণ বেড়েছে। ২০০৮-০৯ সালে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা ও ২০১৯-২০ সালে বরাদ্দ করা হয়েছে ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা (যদিও মূল বাজেটের ৫ ভাগের কম)।
গ্রামের চরম দরিদ্রদের মোট আয়ের ১০ ভাগের ১ ভাগই স্বাস্থ্য ব্যয়ে খরচ হয় (বিআইডিএস এর ২০০১ সালের সমীক্ষা)। ২০১২ সালের স্বাস্থ্য অর্থায়ন কৌশলপত্রেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশি গরিবেরা কম খরচ করে, তাই কম চিকিৎসা পায়। কিন্তু ১৫ ভাগ পরিবার চিকিৎসা খরচ মিটিয়ে নিঃস্ব হয়। স্বাস্থ্যবিমা বলে যেহেতু কিছু নেই, তাই গরিব এমনকি মধ্যবিত্ত পরিবারের কেউ যখন জটিল কোনো অসুখের বিপদে পড়ে, তখন নিজের সব অর্থসম্পদ খুইয়ে ফেলে। ২০১২ সালের কৌশলপত্রে প্রায় ৯ কোটি মানুষের সুরক্ষার জন্য বলা হয়েছিল, তাদের ‘সোশ্যাল হেলথ প্রোটেকশন স্কিমের’ আওতায় আনা হবে।
স্বাস্থ্যখাতে ২০১৭ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির সরকারি ব্যয়ের তুলনামূলক চিত্র:
দেশ/অঞ্চল
|
জিডিপির শতকরা হার |
মোট সরকারি ব্যয়ের শতকরা হার |
প্রতি একজন ব্যাক্তির জন্য ব্যয় (মার্কিন ডলারে) |
বাংলাদেশ |
০.৩৮ |
২.৯৯ |
৬.০৬ |
নেপাল |
১.২৪ |
৪.৫০ |
১০.৭০ |
পাকিস্থান |
০.৯২ |
৪.৩০ |
১৪.০৮ |
ভারত |
০.৯৬ |
৩.৩৮ |
১৮.৮০ |
শ্রীলংকা |
১.৬৩ |
৮.৪৮ |
৬৮.৫০ |
দক্ষিণএশিয়া |
০.৯৪ |
৩.৫৫ |
১৪.৯৫ |
সাব-সাহারান আফ্রিকা |
১.৮৭ |
- |
২৭.৩৯ |
স্বল্পোন্নত দেশসমূহ |
১.০৩ |
৫.৮৪ |
১০.৮২ |
নিম্নআয়ের দেশসমূহ |
১.২৫ |
- |
৭.৯০ |
নিম্নমধ্যম আয়ের দেশসমূহ |
১.২৯ |
৫.৬৫ |
২৫.৫৯ |
তথ্য সূত্রঃ ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট ইনডিকেটর ২০১৯ (বিয়াইজিডি গবেষণা প্রবন্ধ; ৮ জুন, ২০২০ থেকে নেওয়া)
সারনির চিত্রটি থেকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের বিনিয়োগের অপর্যাপ্ততা এবং এ খাতের সেবা প্রদানের হতাশার চিত্রের কারণ অনুধাবন করা সহজ হয়।
বাংলাদেশের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে যা সর্বজনবিদিত। বাজেটে কোন খাতে বরাদ্দ কি পরিমান হবে তা নির্ধারণ করা খুবই কঠিন বটে। ভৌত অবকাঠামোর অভাব মেটাতে না পারলে তা আবার সব খাতকেই দুর্বল করে দেবে সন্দেহ নেই। পরিবহন, বিদ্যুৎ, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি, শিক্ষা প্রভূত খাত ও আবার স্বাস্থ্য এবং একে অন্যের পরিপূরক। গত বাজেটগুলোতে অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ বাড়িয়েই মেগা প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে যা দেশের সর্বোপরি উন্নয়নের জন্য এবং উন্নয়নের পরের ধাপে যাওয়ার জন্য অপরিহার্য। তদুপরি এসকল খাতের প্রবৃদ্ধির জন্যও কিন্তু স্বাস্থ্যবান মানব সম্পদ তথা কর্মী দরকার। স্বাস্থ্যসেবায় এসব অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়ে কোভিড-১৯ এর মতো মহামারি মোকাবেলা করা আসলে সম্ভব নয়। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজানর সুযোগ এসেছে। এ খাতে আর শিথিলতা দেখানোর সুযোগ নেই। তবে অবশ্যই আমাদের এই সীমিত সম্পদের গুণগত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
শেষ কথা
নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সংকটের পাশাপাশি অতিদরিদ্র, দরিদ্র, নিম্নবিত্তসহ মধ্যবিত্তের একাংশ প্রচণ্ডভাবে জীবিকা সংকটের সম্মুখীন। বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পগুলো অপর্যাপ্ত এবং সর্বজনীন নয়। ফলে চলমান মহামারি মোকাবেলায় যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তাই সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন। এখাতে বাজেটে জিডিপির অন্তত ৬ শতাংশ বরাদ্দ করা প্রয়োজন। সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দ পেতে নতুন দরিদ্রদের অগ্রাধিকারভাবে তালিকাভুক্ত করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের জন্য একই কথা প্রযোজ্য। তবে, বাজেট বরাদ্দ সুশাসনের সংগে ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন না করা পর্যন্ত অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে, নতুবা অপব্যয় হওয়ার আশংকাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’ এর পথে না হেঁটে শক্তিশালী বৈষম্য-নিরসন নীতিমালা গ্রহণ করার জন্য রাষ্ট্রের শীর্ষ নেতৃত্বের এ বিষয়ে দৃঢ় সংকল্প থাকলেই কিছুটা সফলতা পাওয়ার নজির আছে।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করেছেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহারেও এর প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সুতরাং আশা করতে পারি বাংলাদেশ এ পথে হাঁটবে না।
বাংলাদেশের জনগণ এখন বুঝতে পেরেছে যে শুধু টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জীবনমান উন্নয়নের জন্য যথেষ্ঠ নয়। বরং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কিছুটা বিসর্জন দিয়ে হলেও সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন করতে না পারলে দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধিও হুমকির মুখে পড়বে।
সুতরাং করোনা সংকট মোকাবেলাকালীন এই নীতির প্রতি ঝুঁকে পড়া জনসমর্থনকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ এসেছে সামাজিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করে এবং বৈষম্য নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে পড়ার।
লেখক: উন্নয়ন পরিকল্পনাবিদ; বর্তমানে লিয়েনে বাংলাদেশস্থ জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচিতে কর্মরত