ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কবিতা

প্রথম কবিতা লেখা, কবিতা ছাপা | আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৭
প্রথম কবিতা লেখা, কবিতা ছাপা | আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির প্রথম কবিতা লেখা, কবিতা ছাপা | আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির

কবি আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদিরের জন্ম সিরাজগঞ্জে, ১৯৯০ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা শেষ করে এখন শিক্ষকতা করছেন ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে। ‘দৈনিক সংবাদ’র সাহিত্য পাতায় ছোটগল্প ও কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ ২০১০ সালে। ২০১৬ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অন্য গাঙের গান, সমুদ্রসমান’।
 

বাংলানিউজের শিল্প-সাহিত্য বিভাগের ‘প্রথম কবিতা লেখা, প্রথম কবিতা ছাপা’ শীর্ষক আয়োজনের এই পর্বে থাকছে কবি আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদিরের প্রথম কবিতা লেখা ও প্রথম কবিতা ছাপার গল্প এবং সেই কবিতা দু’টি।
 
প্রথম কবিতা লেখা
২০০৪ সাল।

ওই বছর বন্যায় আমাদের স্কুল, বাড়ি, পথ, মাঠ সব ডুবে যায়। পরের বছর এসএসসি পরীক্ষা। থাকতাম হাইস্কুলের বোর্ডিংয়ে। দোতলা একটা দালান কেবল জেগে আছে, আর সব পানির নিচে। দিন-রাত কাটত ওই দালানের বারান্দায় বসে। একই ক্লাসের সাতজন ছাত্র একসঙ্গে থাকতাম। বন্যায় ক্লাস হয় না। শিক্ষকেরা খুব একটা আসতেন না তখন। ওই প্রথম পাওয়া অবাধ স্বাধীনতায় আমরা যে যার মনের সাধ মেটাতে লাগলাম। ভদ্র সমাজে বলার মতো শখ আমার দু’টো ছিল তখন। এক, রেডিও শুনে গানের লিরিকস লিখে রাখা। ওই বছরের ডায়েরির প্রায় অর্ধেক ভরে ছিলো বিভিন্ন গানের কথায়। দুই, মানুষের মুখের ছবি আঁকা। বিশেষ করে বিখ্যাত নারীদের।
 
সেই প্রথম স্বাধীন জীবনে ছবি আঁকার ফাঁকে, গানের কলি আওড়াতে গিয়ে ভুল করেই হবে হয়তো প্রথম কবিতা লেখা। এক বন্ধু পড়ে বেশ উৎসাহও দিলো। সেই কবিতার দুই-চারটি লাইন উদ্ধার করা গেছে। ডায়েরির ওই পৃষ্ঠাটা কবে কখন ছিঁড়ে আধখান।
 
‘পথ পুরানো পান্থ, হে অভিমা্নী,
কোথায় তব চলার গতি?
কোথায় সেসব সুরের বাণী,
আজক কি সবই কেবল স্মৃতি?
 
প্রথম কবিতা ছাপা
প্রথম কবিতা ছাপা হয় এর প্রায় ছয় বছর পর। ২০১০ সালে। দৈনিক ‘সংবাদ’র সাহিত্য পাতায়। ততোদিনে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য পড়ছি। বাংলা আর ইংরেজি দুই ভাষাতেই দুই এক কলম লেখার অভ্যাস তৈরি হয়ে গেছে এরই মধ্যে। বন্ধু-সহপাঠীরা পড়ে বেশ উৎসাহও দিচ্ছে। তারাই একদিন আমাকে প্রায় জোর করে ঠেলে দিলো আমার শিক্ষক ও প্রখ্যাত লেখক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম স্যারের রুমে। হাতে একটা কবিতা আর একটা গল্প। আমাকে বসিয়ে রেখে স্যার তখনই মনোযোগ দিয়ে দু’টি লেখা্‌ই পড়লেন। পড়া শেষ হলে আমাকে জিজ্ঞেস করার সুযোগ না দিয়েই বললেন, “তুমি ছাপো না কেন এই লেখা? আজকেই ‘সংবাদ’ অফিসে যাও। তুষার (প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক তুষার তালুকদার) তোমাকে নিয়ে যাবে ওবায়েদের (কবি ও দৈনিক ‘সংবাদ’র সাহিত্য সম্পাদক ওবায়েদ আকাশ) কাছে। ”
 
ওবায়েদ ভাই অবশ্য প্রথমে আমার গল্প ছাপলেন। দুই সপ্তাহ পরে ছাপলেন কবিতা, ‘সদানন্দপুর আনন্দহীন হবার পর এই শোকবার্তা’। সেই অনুভূতি অতি অন্যরকম ছিলো। ওইদিনের পত্রিকা হাতে পেয়ে নিজের কবিতা দেখে মোটামুটি আত্মহারা ছিলাম খানিকক্ষণ। একটু ধাতস্থ হয়েই, প্রথম মাকে ফোন করে জানালাম। পুরো সন্ধ্যা কেটেছিল বারবার কবিতাটা উচ্চারণ করে পড়ে।

সদানন্দপুর আনন্দহীন হবার পর এই শোকবার্তা
সেই রেলগাড়ি আমাদের সদানন্দপুরের
সদ্যপ্রয়াত জীবনের মতো।
 
প্রতিটি গাড়ির মাঝে আবদ্ধতার স্বাদ ছিল;
জংশনে জংশনে মুক্তির নাম নিয়ে
শিকলপ্রেমী জ্বালা।
কয়লার সেই গাড়িতে বয়ে
তবু সদানন্দপুর যমুনার পারে ছড়িয়ে দিত
মানুষ, মানুষের জীবিকা
আর সম্পর্ক।
 
নগরবাড়ির ঘাটে যাদের জীবন ছিল,
তারাই আজ মারা গেছে।
যেসব ভালোবাসা ছিল, নদীর উদ্ধত বুকের
মতো শুকনা লাগে।
কাশবনে বালু উড়ে যায়।
 
এখন ব্রিজ-দেওয়া নদী ডিঙানোর মতো
সম্পর্ক ডিঙিয়ে
চলতে বাধা নাই।
 
সদানন্দপুরের রেলস্টেশন তাই
সদ্য বৃদ্ধ হওয়া জননীর মতো;
ছেলে প্রবাসী- চিঠি নাই,
খবর নেওয়ার মতো
পর্যাপ্ত কল আসে না।
চোখ আছে।
চোখের নির্দয়ায়
সেই দিন আসে, ট্রেন আসে।
 
যারা মারা গেছে
তারা নিজেদের ভালোবাসে; আর
নগরবাড়ির সন্ধ্যা- ঘাটে সম্পর্ক
খোঁজে,
ফিরে আসে?
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৭
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

কবিতা এর সর্বশেষ