ঢাকা: নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজিবি) দুই নেতাকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৩। রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
তারা হলেন- আব্দুল কুদ্দুস (৫৭) ও মো. সিরাজুল ইসলাম ওরফে সালাউদ্দিন (৩৫)।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, তাদের মধ্যে আব্দুল কুদ্দুস ১০ বছর কারাগারে থাকার পর জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর ২০২২ সাল থেকে আব্দুল কুদ্দুস এবং সিরাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকা আরও বেশ কয়েকজনকে নিয়ে একটি বড় ধরনের জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করছিলেন।
লে. কর্নেল আরিফ জানান, গ্রেফতার আব্দুল কুদ্দুস হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের যশোর জেলার আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। পাশাপাশি তিনি যশোরের শেকহাটি এলাকায় ‘ওবায় বিন কাব’ মাদরাসার প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার নামে ২০০৭ সালে ঝিনাইদহ জেলার সদর থানায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মামলা হয়। ওই মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
আব্দুল কুদ্দুস ২০০৭ সাল থেকে ১০ বছর দুই মাস সাজা ভোগ করে ২০১৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরপর হুজিবির সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দল পুনর্গঠনে যশোর, মাগুরা এবং নড়াইলের বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসায় নিয়মিত গোপন বৈঠক করতে থাকেন।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, গোপন বৈঠকগুলোতে ঢাকা থেকে হুজিবির উচ্চপর্যায়ের নেতারা অংশ নিতেন। বৈঠকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যশোর সীমা টেক্সটাইলের মসজিদ, যশোর নরের মহাসড়কের বেইলি ব্রিজের ডান পাশের ছোট মসজিদ, যশোর নিউমার্কেট এলাকার মারকাজ মসজিদ।
তিনি বলেন, ২০২২ সাল নাগাদ আব্দুল কুদ্দুস মোটামুটিভাবে এসব এলাকায় সংগঠনের একটি শক্তিশালী ইউনিট গঠন করতে সক্ষম হন। মাদরাসার যুবকদের মনে সমাজবিদ্বেষী মনোভাব ছড়িয়ে দিতেন তিনি। জঙ্গি তৎপরতার মাধ্যমে ইসলামি রাষ্ট্র কায়েমের কথা বলে তাদের মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে দলভুক্ত করাতেন তিনি।
এই র্যাব কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার সিরাজুল ইসলাম ২০০১ সালে যশোর কোল্ড স্টোরেজের নাইটগার্ড হিসেবে চাকরি করতেন। চাকরিরত অবস্থায় ২০০১ সালে কোল্ড স্টোরেজের নাইটগার্ডের তৎকালীন প্রধানের মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশে যোগ দেন। পরে সংগঠনের যশোর জেলার রিক্রুটার এবং অর্থনৈতিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।
এছাড়া বিদেশি বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগসাজশে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ ব্যয়ভার বহনের অর্থ যোগানের ব্যবস্থা করতেন তিনি। ছদ্মবেশে রঙ মিস্ত্রির কাজ করতেন এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব গোয়েন্দা নজরদারি চালাতেন।
২০১০ সালে সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় ২০১১ সালে গ্রেফতার হন তিনি। এরপর ২০১২ জামিনে মুক্ত হয়ে মামলার আর কোনো শুনানিতে হাজির হননি।
তখন থেকেই তিনি খুলনা বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় পলাতক অবস্থায় আত্মগোপনে থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে থাকেন। তার প্রকৃত নাম মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম হলেও আত্মগোপনে থাকাকালীন তিনি সালাউদ্দিন ওরফে রিয়াজুল ইসলাম ওরফে বিশ্বাস ওরফে আমির ওরফে আব্দুল্লাহসহ বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরিফ জানান, ২০২২ সাল থেকে আব্দুল কুদ্দুস এবং সিরাজুল ইসলামসহ আরও জঙ্গি সদস্যরা মিলে একটি বড় ধরনের জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করে আসছিলেন। সেই পরিকল্পনাকে সফল করার জন্য এরই মধ্যে তারা বেশ তৎপরতা চালাতে শুরু করেন এবং নিয়মিত গোপন বৈঠকের মাধ্যমে তাদের কর্ম পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, কার্যপদ্ধতি এবং কর্মী সংগ্রহের কাজ বেগবান করেন। গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩
এমএমআই/এমএমজেড