সিলেট: বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, তাকে কেউ ক্ষমতায় রাখছে চায় না', তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না আওয়ামী লীগের পায়ের নিচে মাটি নেই। আওয়ামী লীগের সময় শেষ হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ফাঁদে পা না দিতে দলের নেতাদের সতর্ক করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম খান।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মী যারা আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাবেন তাদের বিরুদ্ধে দল কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আর যারা দলকে সম্মান করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন তাদের দল মনে রাখবে, পুরস্কৃত করবে।
শুক্রবার (১৯ মে) বিকেলে নগরের কোর্ট পয়েন্টে সিলেট বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের ন্যায্য দাবি নিয়ে মাঠে আন্দোলন করছে। তাই জনগণ বিএনপির সঙ্গে আছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। এ সংগ্রামে আমরা বিজয়ী হব। দেশে অতি শিগগিরই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে এবং জনগণের সরকার দেশের দায়িত্ব নেবে ইনশাআল্লাহ।
আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদসহ ১০ দফা বাস্তবায়ন দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে সমাবেশের আয়োজন করে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি। নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে এ সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশি বাধায় তা পণ্ড হয়। পরে কোর্ট পয়েন্টে পথ সমাবেশ করে বিএনপি। দলের ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে 'উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বিদ্যুতের লোড শেডিং।
আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের মানুষ যখন আন্দোলনমুখী, ঠিক তখনই আওয়ামী লীগ নির্বাচনের নামে দেশবাসীর সঙ্গে প্রহসন করছে। দেশের জনগণ বিভিন্ন সিটিতে এ নির্বাচনকে বর্জন করেছে। আগামী দুই এক দিনের মধ্যে আরও ভালো খবর পাওয়া যাবে। নির্বাচন বর্জন করা মানে শুধুমাত্র নিজে প্রার্থী না হওয়া নয়, বর্জন মানে হলো পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্য প্রার্থীর পক্ষেও কাজ না করা। বিএনপি আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। যারা দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেবের তাদের দল মনে রাখবে, পুরস্কৃত করবে। আর যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করবেন তাদের জন্য তিরস্কার রয়েছে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন। সমাবেশের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। কিন্তু সরকার মাঠটি পুলিশি দিয়ে দখল করেছে। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা আজ পুরো নগরী দখলে নিয়েছে। এতে প্রমাণ হয় আওয়ামী লীগের সময় আর বেশি বাকি নেই, জনগণ রাস্তায় নেমেছে। আওয়ামী লীগের পতন নিশ্চিত করে আমরা ঘরে ফিরব ইনশাআল্লাহ।
সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের সময় শেষ। আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। যতই বাধা আসুক না কেন ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন করে এ সরকারের পতন ঘটানো হবে।
সিলেট জেলা ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা নুরুল হকের কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জনসমাবেশ শেষে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে, নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি করার কথা থাকলেও পুলিশি বাধায় তা করা সম্ভব হয়নি। পরে স্থান পরিবর্তন করে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে কর্মসূচি পালিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২৩
এনইউ/জেএইচ