ঢাকা: বর্তমান সরকার ও শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করতে রাজনৈতিক দলসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা।
রোববার (২৫ জুন) 'রাজনৈতিক সংকট, চলমান গণআন্দোলন ও জনপ্রত্যাশা' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তারা এ আহ্বান জানান।
জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ছয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জোট 'গণতন্ত্র মঞ্চ'।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
সভায় জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, দেশের পরিস্থিতি আজকে ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন। সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে হলেও ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাদের কাছে ক্ষমতার চেয়ে বড় কিছু আর নেই। দেশ, জনগণ, ভৌগোলিক অবস্থা, দেশের দরিদ্র মানুষের গুরুত্ব তাদের কাছে নেই। এ সরকার মিথ্যাবাদী, জনগণ তাদের আর বিশ্বাস করে না। অন্তর থেকে মানুষ তাদের বিদায় করে দিয়েছে, এখন তাদের দাফন করার সময়।
সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, জনগণ, মুক্তিযোদ্ধা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সরকারকে বিদায় করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তা না হলে জাতির কাছে আমাদের জবাবদিহিতা করতে হবে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যে দেশে মানুষের ভোট রাতের বেলা ডাকাতি করে নিয়ে যাওয়া হয় সে দেশে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে আপনি সর্বস্ব দিয়ে লড়াই করবেন কিনা না সেটি ভেবে দেখার সময় এসেছে। এখন মানুষ ঐক্য চায়। মানুষ নিজের কথা বলবার অধিকার চায়, ভোটের অধিকার চায়। সেজন্যে চলেন সবাই মিলে লড়াই করি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা একটি ভয়ংকর শাসনের মধ্যে আছি। যেখানে আমরা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। তাই আমাদের বাঁচার একটিই পথ এই রাষ্ট্রকে জনবিচ্ছিন্নতা থেকে ফিরিয়ে আনা। এ সংকটে যেসব রাজনৈতিক শক্তিগুলো জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়ে এ প্রবল ভয়ংকর শাসনের বিরুদ্ধে লড়ায় করছে, তার মধ্যে কোন কোন শক্তির ভারসাম্য আছে, কি ধরনের স্বার্থ উদ্ধারকারী শক্তি আছে, সেই হিসেবটি করে আজকের দিনের রাজনীতির কথা বলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেন, বিশেষ করে বামপন্থীদের স্পষ্ট করতে হবে, তারা এ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আছেন, কি নেই। দেশের পক্ষে, জনগণের পক্ষে এখন ন্যূনতম অবস্থান নেওয়া মানে হচ্ছে যারা অস্তিত্বের সংকটে ফেলছে তাদেরকে আগে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা এবং ন্যূনতম জায়গাতে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা। আমরা যদি ন্যূনতম কর্মসূচিতে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি, গণআন্দোলন হবে না। জণগণকে এখন রাজপথে নামতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে দিয়ে সব সমস্যার সমাধান করা যাবে না। তাই বর্তমান আন্দোলনে গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্য দলগুলো যত শক্তিশালী হবে, জনগণের আকাঙ্ক্ষা যত বেশি ধারণ করতে পারবে, ততবেশি বেশি বিএনপি আন্দোলনে থাকতে বাধ্য হবে। আমরা লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সব বিরোধী দলের ঐক্য গড়ে তুলতে চাই। এ গণঐক্যের মধ্য দিয়ে দেশের পরিবর্তন হবে। মানুষ তার ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জন করবে। মুক্তিযুদ্ধে ঐক্যের মধ্য দিয়ে যেভাবে স্বাধীনতা এসেছিল, তেমনি আরেকটি গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে এবার আমরা দেশকে রক্ষা করবো।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, দেশে আজকে যে পরিস্থিত বিরাজমান, সে পরিস্থিতি থেকে যদি দেশকে উদ্ধার করতে হয়, সেটি গণতন্ত্র বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে একা সম্ভব নয়। আমরা প্রত্যেকেই যার যার জায়গা থেকে লড়াই করছি। অন্যদেরও এ ফ্যাসিবাদের অপসারণে কর্মসূচি দিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, আজকে যে বর্তমান ফ্যাসিবাদী শাসন আমাদের উপর চেপে বসেছে, সেটি এক ব্যক্তির শাসন। এ শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন ও সংবিধান পরিবর্তনের জন্য আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ তৈরি করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
এসসি/জেএইচ