জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: নিজেদের কক্ষ সংকটের কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাদের কক্ষে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন জুনিয়র নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হলে ছাত্রলীগের ৪৪ ব্যাচের নেতাদের নেতৃত্বে একটি ঘরোয়া আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে হলের ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯ ও ৫০ ব্যাচের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ৪৮, ৪৯ ও ৫০ ব্যাচের কর্মীরা তাদের থাকার রুম সংকটের কথা তুলে ধরে সিনিয়রদের তাৎক্ষণিক রুমের ব্যবস্থা করার জন্য আল্টিমেটাম দেন। পরে ৪৪ ব্যাচের কয়েকজন নেতাকর্মীকে কক্ষ ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানালে তারা নাকচ করে দেন।
এরপর জুনিয়র কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে রড, লোহার পাইপ দিয়ে সিনিয়র (৪৩ ব্যাচ) নেতাদের কক্ষে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আজিমুশশান নওরোজ প্রণয় (কক্ষ ২০৮), আরিফুল ইসলাম প্রীতম (কক্ষ ২১১), যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. বিপ্লব হোসাইনের (কক্ষ ২১০) কক্ষের তালা ভেঙে ফেলেন উত্তেজিত কর্মীরা।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. বিপ্লব হোসাইন বলেন, গতকাল রাতের বিচ্ছিন্ন ঘটনাটি কাদের নির্দেশে হয়েছে আমি তা জানি না। তবে ৪৭, ৪৮ ও ৪৯ ব্যাচের জুনিয়রদের দিয়ে এটা করানো হয়েছে। আমি শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, আমি রুম ছাড়ব কেন? এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হলটির ৪৭ ও ৪৮ ব্যাচের একাধিক ছাত্রলীগকর্মী বলেন, আমাদের হলে আবাসন সংকট অনেকদিন ধরে। মাত্র ৭টি রুমে আমরা ৫০ জন শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে থাকি। সিনিয়রদের একাধিকবার বলেও আমরা রুম পাইনি। অথচ তারা একেকজন একটা করে রুমে থাকে। এছাড়া ৪৩ ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী উৎসব (র্যাগ ডে) হয়ে যাওয়ার পরেও তারা রুম ছাড়ছে না। ছাত্রত্ব না থাকলেও অনেকেই রুম দখল করে আছে। এজন্য আমরা তাদের রুম ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেছি। এ সময় ক্ষুব্ধ হয়ে কর্মীরা সিনিয়র কয়েকজনের রুমের তালা ভাঙচুর করেছে।
রুমের জন্য জুনিয়র নেতাকর্মীরা সিনিয়দের কক্ষে ভাঙচুরের ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে জানান হল ছাত্রলীগ নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জুনিয়ররা তাদের রুমের জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। তখন তাদের ৪-৫টি রুম দেওয়া হবে বলা হয়েছিল। এটা ৪৪ ব্যাচসহ যেসব সিনিয়র ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় তাদের জানিয়েছি। ১ আগস্টের মধ্যে তাদের ব্লক ছেড়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু তারা রাজনীতি করার কথা বলে রুম ছাড়েননি। এ কারণে ওইদিন রাতে জুনিয়ররা রাগে, ক্ষোভে আরো যেসব সিনিয়র আছে তাদের রুম ভাঙচুর করে জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দিয়েছে। পরে আমরা ৪৪ ব্যাচের কয়েকজন গিয়ে তাদের শান্ত করি। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সাব্বির আলম বলেন, একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা আবাসিক হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এটা ঠিক না। এ ঘটনায় কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২৩
এমজেএফ