ঢাকা: একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও খালেদা জিয়াকে নিজ বাড়িতে অবস্থান ও উন্নত চিকিৎসার সুযোগের দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বুধবার (৪ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে দেশের প্রতিষ্ঠিত আইন ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেওয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সুনির্দিষ্ট আইন দ্বারা নির্ধারিত বিষয়ে লজ্জাহীনভাবে মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম এবং বিএনপি তাদের চিরাচরিত অপরাজনীতির ধারাবাহিকতায় বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়েও ক্রমাগতভাবে সীমাহীন মিথ্যাচারের মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। দেশবাসী জানে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ মানবিকতা ও উদারতা নিয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে নিজ ঘরে থেকে দেশের সর্বাধুনিক হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীর জন্য এমন মানবিকতার উদাহরণ বিরল। শেখ হাসিনার সেই উদারতাকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম শুধু অসম্মানই করেননি, গোটা বিষয় নিয়ে অত্যন্ত উস্কানিমূলক মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আইন, বিচার প্রক্রিয়া ও সংবিধান সম্পর্কে দায়িত্বহীন বক্তব্য প্রদান করেছেন। বিএনপি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য জল ঘোলা করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিপক্ষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন! কিন্তু ইতিহাস জানে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা অবৈধ ক্ষমতাদখলকারী সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। এমনকি খুনিদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আইনি সুরক্ষা প্রদান করেছিল। শুধু তাই নয়, খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে খালেদা জিয়াও বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদ ও হুদাকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে পার্লামেন্টে বসিয়েছিল। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের দিন বেগম খালেদা জিয়া ভুয়া জন্মদিন পালনের মধ্য দিয়ে আজ অবধি প্রতিহিংসাপরায়ণ ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ধারা অব্যাহত রেখেছে। প্রতিহিংসার রাজনীতি এবং প্রতিপক্ষকে হত্যা করার মতো নিকৃষ্ট মানসিকতা ঐতিহ্যগতভাবেই বিএনপির মতাদর্শ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিএনপি-জামাত অশুভ জোট সরকারের সময় হাওয়া ভবনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধুকন্যাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশ্যে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। তারপরও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়াকে নিজ বাড়িতে অবস্থান ও উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দিয়েছেন। এমন মানবিকতার দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে দ্বিতীয় আরেকটি নেই।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনার বিদেশে চিকিৎসাগ্রহণের বিষয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। শেখ হাসিনা কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন না এবং তাঁর বিদেশ গমনে আদালতের কোনো প্রকার নিষেধাজ্ঞা ছিল না। শেখ হাসিনা সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি তার বিরুদ্ধে দাখিলকৃত সকল মামলার জামিন পাওয়ার পর এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণ করতে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতাবলে তার সাজা বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাকে আদালতের শরণাপন্ন হতেই হবে। বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ারাধীন এবং এ বিষয়ে রাজনীতি করার কারও কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২৩
এসকে/এমজেএফ