ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো এবং ঋণ খেলাপিদের টাকা উদ্ধার, বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনা ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে গণ অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে গণফোরাম এবং বাংলাদেশ পিপলস পার্টি।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গণফোরাম চত্বরে গণ অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি।
গণ অনশন ও অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণফোরাম সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে, টাকা পাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের জনগণ আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে। আর এ সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী-আমলারা কি বলছে এসব দিল্লি হে তো হাম হে! সভ্যতা, ভদ্রতা, মানবতা সবকিছু বিসর্জন দিয়েছে শুধু ক্ষমতা চাই, ক্ষমতা চাই, ক্ষমতা চাই!
তিনি বলেন, সবকিছু মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখার সময় এ সরকারের নেই। রাতের আঁধারে প্রধানমন্ত্রী মাটির আওয়াজ কান পেতে শুনুন। দেয়ালের লেখাটা বোঝার চেষ্টা করুন। আর যেন জাতীয় পর্যায়ে কোনো বিপর্যয় নেমে না আসে। সংবিধান কোরআনের কোনো বাণী নয়। যেটা পরিবর্তন করা যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আপনার এত ভয় কেন? আতঙ্ক কেন? দেশের শান্তির জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, জনগণের জন্য সংবিধান তাই জনগণের দাবিতে সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনুন। তাই দেশের স্বার্থে কারো সঙ্গে কোনো অবস্থায় আপস হবে না, না, না। খালেদা জিয়া অসুস্থ অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, এ সরকার উন্নয়ন করে লুটপাটের জন্য, আওয়ামী লীগের উন্নয়নে জন দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। জাতি দেখেছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যেদিন থেকে উদ্বোধন হয়েছে সেদিন থেকে সারা ঢাকা শহরে তীব্র যানজট। দেশের রিজার্ভ নামতে নামতে একদম তলানিতে। লুটপাট করার জন্য এ সরকার ক্ষমতায় থাকতে নানা ষড়যন্ত্রের জাল বিছাচ্ছে। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের কোনো ষড়যন্ত্র আর বরদাস্ত করবে না। সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে, জনগণ লাল কার্ড দেখিয়েছে এবার ক্ষমতা ছাড়তেই হবে। নিরপেক্ষ রেফারির মাধ্যমে আগামী নির্বাচন হবে।
কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী বলেন, ভারতের সার্টিফিকেটে দেশ চলছে। এদেশে আমাদের লাখ লাখ বেকার যুবক চাকরির জন্য দিশেহারা আর ভারতের জনগণ আমাদের বড় বড় পোস্টগুলো দখল করে আছে। দুর্নীতিবাজদের বিচার হয় না। কিন্তু তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রহসনের বিচার করছে সরকার।
বাংলাদেশ পিপলস পার্টির মহাসচিব মো. আবদুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়া জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছে কিন্তু সরকার প্রধান খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে কটাক্ষ করে! দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ ধরনের অমানবিক কথা কীভাবে বলেন! দেড় লাখ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি, কারা এরা? এরা সরকারের লোক না হলে এদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার কেন করা হয় না! বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি চার্জের মাধ্যমে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা জনগণের ট্যাক্সের টাকা নষ্ট হয় দেখার কে আছে? সরকার দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তলে তলে সব ঠিক হয়ে গেছে! জনগণ এত বোকা! আর এদেশে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন, জনগণকে মুক্ত করুন।
কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম. জগলুল হায়দার আফ্রিক, অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের, সভাপতি পরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকার, আব্দুল হাসিব চৌধুরী, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ রওশন ইয়াজদানী, তথ্য ও গণমাধ্যম সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহ মধু, ছাত্র সম্পাদক মো. সানজিদ রহামন শুভ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিবুর রহমান বুলু ও সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা।
বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কো-চেয়ারম্যান পারভীন নাসের খান ভাসানী, প্রেসিডিয়াম মেম্বার আতিকুর রহমান, নাজমা আক্তার, হারুন অর রশিদ সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জসিম সরদার, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ওবায়দুল চাকলাদার, ও শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো. লিটন জোয়ার্দার প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২৩
এমকে/আরআইএস