রাজবাড়ী: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রকাশিত হয়েছে। এতে রাজবাড়ী-১ (সদর-গোয়ালন্দ) আসনে দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী কেরামত আলী এবং রাজবাড়ী-২ (পাংশা-বালিয়াকান্দি-কালুখালী) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম।
রোববার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ৩০০ আসনে চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেন।
এর আগে, রাজবাড়ী জেলার দুইটি সংসদীয় আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য ১৬ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন।
রাজবাড়ী-১ আসন
রাজবাড়ী-১ (সদর-গোয়ালন্দ) আসন নিয়ে গঠিত। এ আসনে কাজী কেরামত আলী ১৯৯৩ সালের উপনির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন তিনি। পাঁচবারের এ সংসদ সদস্য ২০১৮ সালের শুরুতে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী (মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগ) হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন।
কাজী কেরামত আলী ১৯৫৪ সালে ২২ এপ্রিল রাজবাড়ী জেলা শহরের হাসপাতাল রোডের সজ্জনকান্দার বাসায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম কাজী হেদায়েত হোসেন এবং মায়ের নাম মনাক্কা বেগম।
রাজবাড়ী ইয়াসিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকম সম্মানসহ এম কম ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। তিনি ব্যবসার পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারি ৯ তারিখ পর্যন্ত রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
কাজী কেরামত আলীর বাবা মরহুম কাজী হেদায়েত হোসেন ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, প্রাক্তন গণপরিষদ সদস্য, রাজবাড়ী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের তৎকালীন রাজবাড়ী আঞ্চলিক জোনের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর ঘাতকরা থেমে যায়নি। তারা বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধাদেরও খুঁজে বের করে হত্যা করে। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাত্র তিন দিনের মাথায় ১৮ আগস্ট প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে কাজী হেদায়েত হোসেনকে।
রাজবাড়ী-২ আসন
রাজবাড়ী-২ (পাংশা-বালিয়াকান্দি-কালুখালী) উপজেলা নিয়ে এ আসন গঠিত। এই আসনে এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম। তিনি রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম ১৯৫৪ সালের ২ জানুয়ারি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার আনন্দবাজার গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. আবুল হোসেন নিজেও ছিলেন একজন সমাজসেবক এবং শিক্ষানুরাগী। জিল্লুল হাকিমের পৈতৃক বাড়ি পাংশা উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.জিল্লুল হাকিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর (এমএ) পাস করেছেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মো. জিল্লুল হাকিম মুক্তিযুদ্ধকালীন গোয়ালন্দ মহকুমা কমান্ডার ছিলেন। তিনি সংসদ সদস্যের পাশাপাশি একজন সফল ব্যবসায়ী। তার স্ত্রী সাঈদা হাকিম ও দুই ছেলে মিতুল হাকিম ও রাতুল হাকিমও সফল ব্যবসায়ী।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম পাঁচ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে চার বার সংসদ সদস্য হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরের বার অর্থাৎ ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নাসিরুল হক সাবুর কাছে হেরে যান। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির নাসিরুল হক সাবুকে পরাজিত করে ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত। ২০১৪ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.জিল্লুল হাকিম সংসদ সদস্যের পাশাপাশি রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ তিনি ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তৃতীয় বারের মতো রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্যের পাশাপাশি তিনি জেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে তৃণমূল পর্যায়ে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৩
আরএ