ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

তিন সংকটকে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছে সরকার

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৪
তিন সংকটকে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছে সরকার প্রধানমন্ত্রীর শপথের পর নতুন সরকারের অভিষেক। ছবি: এইচপিএম

ঢাকা: রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক এই তিনটি সংকটকে এই মুহূর্তে নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ মনে করা হচ্ছে। আর এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকার।

সরকার সংশ্লিষ্টদের সূত্রগুলোর মতে, এই সময়ে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা। এই নির্বাচনকে নিয়ে যে সংকটগুলো দেখা দেয় সেগুলোকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার কাটিয়ে উঠে গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে পেরেছে। এরপরও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সরকারকে বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতে পারে এটা ধরে নিয়েই পথচলা শুরু করেছে নতুন সরকার। এই সংকটগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক দিককেই বড় করে দেখছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।

নতুন সরকারের মন্ত্রী সভা গত ১১ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পর দিন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকারের সামনে  চ্যালেঞ্জ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক। এই তিন চ্যালেঞ্জ সামনে রয়েছে। এই তিনটি খাতে বিশ্ব সংকটের যে বাস্তবতা তার  প্রতিক্রিয়া থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করা অত সহজ কাজ নয়। তবে আমাদের বিশ্বাস আছে আজকে যে সংকট তা অতিক্রম করে শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পেরেছি। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নই সরকারের মূল টার্গেট।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ দলটির সমমনা ও সঙ্গে থাকা দলগুলো। এ নির্বাচন বর্জন করে সিপিবিসহ কয়েকটি বামপন্থি রাজনৈতিক দলও। বিএনপি শুধু নির্বাচন বর্জনই নয় নির্বাচন হতে দেবে না এমন ঘোষণাও দিয়েছিল।  

নির্বাচনের পর দলটির আর কোনো তৎপরতা না থাকলেও সরকারের বিরুদ্ধে আবার আন্দোলন দাঁড় করানোর কথা বলা হচ্ছে। এই আন্দোলন অতীতের মতো সহিংস হয়ে ওঠে কি না সেই আশঙ্কাও রয়েছে ৷ 

এদিকে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) অংশ নিলেও দলটি আগের অবস্থানে নেই। গত তিনটি নির্বাচন এবং সরকারে ও বিরোধী দলে থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এতোদিন জাতীয় পার্টি যেভাবে চলেছে সামানের দিনগুলোতে সেই অবস্থানে থাকার সম্ভাবনা নেই।  

এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনেকটাই দূরত্ব তৈরি হয়েছে। মাত্র ১১ আসন নিয়ে সংসদে বিরোধী দল হওয়াও জাতীয় পার্টির জন্য সহজ নয়। এই প্রেক্ষাপটে দলটির আগামীতে সরকারবিরোধী আন্দোলনমুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১৪ দলের জোট সঙ্গীদের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের অনেকটা টানাপোড়েনের তৈরি হয়েছে।

তবে এসব রাজনৈতিক সংকট সরকার কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তাদের মতে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি যে আন্দোলন শুরু করে এবং এক পর্যায়ে নির্বাচন প্রতিহত করার যে ঘোষণা দেয় সেটা সফল হয়নি। এই আন্দোলনে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। নতুন করে আন্দোলন দাঁড় করানো দলটির জন্য এত সহজ হবে না।  

সরকারের গত ৫ বছরেও তারা আন্দোলন করতে পারেনি। আবার জাতীয় পার্টি বিগত দিনের মতো সরকারের সমর্থন না দিলেও আন্দোলন করার মতো সাংগঠনিক অবস্থা দলটির নেই ৷ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যেও বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে, যেটা কাটিয়ে ওঠা জাতীয় পার্টির জন্যও সহজ হবে না।  

তবে সরকারবিরোধী যে কোনো আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হলে সরকারও কঠোর অবস্থান নিয়েই থাকবে।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে নতুন মন্ত্রিপরিষদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এ প্রসঙ্গে বলেছেন, নির্বাচন বর্জনকারীরা এখনও পিছু হটেনি। আজকে তারা নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, এ সরকার যেন থাকতে না পারে। তারা আশা করছে কম্বোডিয়ার মতো নিষেধাজ্ঞা দেশে আসবে। আওয়ামী লীগ রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করতে চায়। কিন্তু বিরোধীরা রাজনীতিতে সহিংসতা ও সন্ত্রাসের উপাদান যুক্ত করলে যা করণীয় সবই করা হবে।

এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও স্যাংশন পাল্টা স্যাংশনের কারণে বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও অনেক আগে থেকেই পড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি সংকট, রিজার্ভ কমে যাওয়া, আমদানিতে উচ্চমূল্যসহ সার্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব দেশের সাধারণ মানুষের ওপর পড়ছে।  

সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কিছু দেশের সঙ্গে সরকারের কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন অব্যাহত আছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে যে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আসার কথা শোনা যায় সে সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায়নি বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।  

কূটনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাবসা-বাণিজ্য, উন্নয়ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার বিষয়টি জড়িত রয়েছে৷ দেশের অর্থনীতিকে সচল ও শক্ত রাখতে এ বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনে এ সংকটগুলো মোকাবিলা সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।  

তবে এ সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকার সক্ষম হবে বলে নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।

গত ১১ জানুয়ারি নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার পর দিন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, এখন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এবং পৃথিবীতে এখন বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ চলছে। সেই প্রেক্ষাপটে এটি অবশ্যই চ্যালেঞ্জ। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং সেই নীতি নিয়েই আমরা সবার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলব। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করব, পূর্ব-পশ্চিম সবার সাথে সম্পর্কের আরও উন্নয়ন ঘটাব।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৪
এসকে/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।