ঢাকা, রবিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

খাগড়াছড়িতে দুই প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগে নানা আলোচনা

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৪
খাগড়াছড়িতে দুই প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগে নানা আলোচনা

খাগড়াছড়ি: দ্বিতীয় ধাপে খাগড়াছড়ির সদর, দীঘিনালা ও পানছড়ি এ তিন উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা যে যার মতো প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

নিজ নিজ উপজেলায় প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে। তবে স্থানীয়দের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনে অনেক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও চেয়ারম্যান পদে মূল আলোচনায় দিদারুল আলম এবং আকতার হোসেন। শহরসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের ব্যানারে ছেয়ে গেছে। তবে নির্বাচনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে দলের অভ্যন্তরীণ ইস্যু।

সদর উপজেলায় এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আকতার হোসেন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম। এবার দলীয় প্রতীক না থাকায় দুই প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগে নানা আলোচনা চলছে। বিভক্ত মতামত দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। তবে কেউ মুখ খুলে কথা বলছেন না।  তাদের মতে, কেন্দ্র থেকে দলীয় প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের কথা বলা হলেও নির্বাচনে নেতাদের ‘মৌন’ প্রভাব থাকবে। ইতোমধ্যে এ প্রার্থীরা ব্যানার পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগও করেছেন।

দলে ‘পরিচ্ছন্ন নেতা’ হিসেবে পরিচিত দিদারুল আলম ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনীতির বাইরেও সামাজিকভাবে তার পরিচিতি রয়েছে। আওয়ামী ঘরানোর পারিবারিকভাবে রাজনীতি শক্ত অবস্থানে থাকা দিদারুল আলম পরিবারের কারণে দলে কিছুটা কোণঠাসা হয়েছেন।  

দিদারুল আলমের ভাই জাহেদুল আলম খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপদেষ্টা। আরেক ভাই খাগড়াছড়ি পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. রফিকুল আলম। জাহেদ-রফিকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ বিরোধী কর্মকাণ্ডের এন্থার অভিযোগ। দল থেকে একবার বহিষ্কারও হন জাহেদুল আলম। আওয়ামী লীগে ভাঙন চেষ্টা, হামলা, মামলা, নির্যাতনের কারণে অভিযুক্ত রফিকুল আলম। ‘ভাইয়ের কারণে ভাই দোষী’ হওয়ায় দলে দিদারুল আলমের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে যায়। অবস্থান শক্ত করতে মূল স্রোতে থেকে দলীয় কর্মকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততা বাড়ান। সামাজিকভাবে রয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা।  

অপরদিকে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সদর উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখান থেকে সাবেক মেয়র রফিকুল আলমের হাত ধরে তার উত্থান। রফিকুল আলমের হয়ে বাজার ডাকসহ বিভিন্ন কাজ দেখভাল করতেন আকতার হোসেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও নিজের শক্তি বাড়ানোর জন্য আকতার হোসেনকে সদর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রার্থী করান রফিকুল আলম। নির্বাচিত হয়ে আশীর্বাদপুষ্ট রফিকের সঙ্গে কিছুদিন চলার পর জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আকতারের সখ্য হয়। সেই সুবাদে পান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষের পদ। এদিকে দলে কয়েকজন নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অধিক মাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে যাওয়ায় মানতে পারছেন না অন্য নেতাকর্মীরা। অনেকে বলছেন কয়েকজন সিনিয়র নেতার মৌন সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন আকতার।  

দিদারুল আলম বলেন, আমি ৩২ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। এ বয়সে এসে জনগণের সেবা করার জন্য চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছি। দলের প্রার্থী না থাকলেওতো প্রার্থীর পক্ষে সমর্থনতো থাকবেই। এখন সেই সমর্থন যদি কোনো অনুপ্রবেশকারীর জন্য হয় এটি দলের অভ্যন্তরে সংকট সৃষ্টি করবে। অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে যেখানে আমাদের নেত্রী জিরো টলারেন্সের কথা বলছেন, সেখানে তাদের নিয়ে যদি রাজনীতিতে অধিক গুরুত্ব দিয়ে বসি তা তৃণমূল গ্রহণ করবে না।

আকতার হোসেনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ছল-চাতুরি করে একটি পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। এখন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নাম ভাঙ্গিয়ে দল এবং দলের বাইরে সুযোগ-সুবিধায় প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যক্তি বিশেষের এমন আস্ফালনতো এত বড় দলের জন্য চরম ক্ষতি। শেষ সময়ে সবার সহযোগিতায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।  

এদিকে আকতার হোসেন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করলেও কোনো পদ পদবিতে ছিলেন না জানিয়ে বলেন, খাগড়াছড়িতে অধিকাংশ বাঙালি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। সেখান থেকে আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে। আমার বেলায় এত বিএনপির গন্ধ খুঁজলে তো হবে না। আর যারা আমাকে বার বার বিএনপি বলছে তাদের (রফিকুল আলম) সঙ্গে যখন ১২ বছর ছিলাম তখনতো এসব কথা আসেনি। আর আমাকে সবাই পছন্দ করবে সেটাও আশা করি না।  

তিনি বলেন, সবাই ভালো পর্যায়ে যেতে চায়। তাই আমিও চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়েছি। আর আমি দলের জন্য সময়-শ্রম দিচ্ছি। আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে দলীয় প্রার্থী না থাকলেও দলের নেতাকর্মীরা আমার জন্য কাজ করবে বলে আমি আশাবাদী।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের পদধারী একাধিক নেতা জানান, বছরের পর বছর রাজনীতি করা মানুষগুলো কোণঠাসা হয়ে গেছে। আর যারা বঙ্গবন্ধুর মতাদর্শী নয় তাদের দলে ঠাঁই দেওয়া হচ্ছে। সবখানে দেখছি তাদের কর্তৃত্ব নেতৃত্ব। এ নেতারা বলেন, দল কাউকে সমর্থন দিতে পারবে না ঠিক আছে। তবে সবখানে কমবেশি মৌন সমর্থন থাকবেই। সেখানে যদি দল থেকে আকতারকে মৌন সমর্থনও দেয় এটি দুঃখজনক। তৃণমূলে নেতিবাচক প্রভাবতো পড়েছে; এখন তা আরও বাড়বে।  

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক বলেন, দলের শীর্ষ নেতাদের ভাবতে হবে ব্যক্তি স্বার্থের জন্য কাউকে এতটাও গুরুত্ব দেওয়া ঠিক হবে না। যাতে দলের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। বছরের পর বছর দলের জন্য ঘাম শ্রম দেওয়া মানুষগুলো কোণঠাসা হয়ে আছে। আর অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিড নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলে দলের ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এখন আমাদের নেত্রী ওপেন করে দিয়েছে বলে যে কেউ প্রার্থী হতে পারছেন। কাউকে নিষেধ করাও যাচ্ছে না। তার মানে নির্বাচনে এমন কাউকে সমর্থনও দেয়া যাবে না যার কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।  

তবে খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী জানালেন দলীয় শৃঙ্খলার কথা।

তিনি বলেন, কাউকে সমর্থন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যে যার যোগ্যতায় বিজয়ী হয়ে আসবেন। তবে অধিক প্রার্থীর কারণে কোনো সহিংসতা ঘটছে কিনা সে ব্যাপারে আমাদের নজরদারি থাকবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৪
এডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।