ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

শুধু সুষ্ঠু নির্বাচন নয়, আমরা সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থাও চাই: মাসুদ সাঈদী 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০২৪
শুধু সুষ্ঠু নির্বাচন নয়, আমরা সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থাও চাই: মাসুদ সাঈদী 

পিরোজপুর: সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থারও দাবি জানিয়েছেন পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও পিরোজপুর-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাসুদ সাঈদী।  

তিনি বলেছেন, দেশে বারবার নির্বাচন হলেও দেশ এখন পর্যন্ত ন্যায় ইনসাফে পরিপূর্ণ কোনো সরকার পায়নি।

আমরা এখন পর্যন্ত দেশ গঠনের রাজনীতি পাইনি। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে, আমাদের সংবিধান এক ব্যক্তির হাতে সব ক্ষমতা দিয়েছে। এক ব্যক্তিই সকল কিছুর প্রধান। সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠান ঐ একই ব্যক্তির হাতে। ক্ষমতা বাড়াতে সংবিধানকে বারবার কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। এই সংবিধানের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনে যাকেই ক্ষমতায় বসাবেন, তিনিই ক্ষমতার জোরে দানব হতে বাধ্য। তাই আমরা শুধু সুষ্ঠু নির্বাচন নয়, আমরা সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা চাই। নির্বাচনের আগে সুষ্ঠু পরিবেশও চাই।  

জিয়ানগর উপজেলায় ৫নং চন্ডিপুর ইউনিয়ন আয়োজিত চন্ডিপুর বাজার সংলগ্ন ময়দানে বিশাল সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ক্ষমতার মোহে দেড় দশক ধরে শত শত মানুষকে গুম, খুন ও নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছে স্বৈরশাসক হাসিনা। কুণ্ঠাবোধ করেনি দেশের স্বার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিতে। বন্ধুত্বের নামে ভারতের দাসত্বের জিঞ্জিরে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে আবদ্ধ করে রেখেছিল। এসব কারণে দেশপ্রেমিক জনতার ক্ষোভে ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী স্বৈরশাসক খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

মাসুদ সাঈদী বলেন, দেশের প্রতিটি সেক্টরকে শেখ হাসিনা দুর্নীতি, লুটপাট এবং হাজারো অনিয়মে ধ্বংস করে দিয়েছেন। হাসিনা জুলাই অভ্যুত্থানের বীর যোদ্ধাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। আমরা আশা করছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুনি হাসিনাসহ এসবের হুকুমদাতাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।

তিনি আরো বলেন, দেশে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত বিপ্লব হয়েছে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবে যে নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ হয়েছে তা ইতিহাসে আর নেই। কোনো আন্দোলনে এমনভাবে গুলি চালানো বাংলাদেশের ইতিহাসে আর নেই। এই বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। দেশের মানুষ অনেক আশা নিয়ে এই বিপ্লবে সমর্থন দিয়েছে। যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই দেশপ্রেমিক ইসলামপ্রেমিকদের রাজনীতি এদেশে চলবে।  

আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ১৭ বছর বাংলাদেশকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন,  আওয়ামী সরকার দেশকে পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত করেছিল। গণভবন থেকে দেশবিরোধী সকল ধরনের অন্যায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। গণহত্যাকে সাধারণ ঘটনায় রূপান্তরিত করেছিল আওয়ামী লীগ। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই সাধারণ মানুষকে জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হতে হতো। শেখ হাসিনার শাসনামলে মানুষ মন খুলে কথা বলতে পারেনি। কথা বললেই মামলা হতো, হামলা হতো। মাফিয়া হাসিনা মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছিল, সিঁধেল চোরের মত হাসিনা দিনের ভোট রাতে নিত।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে মাসুদ সাঈদী আরো বলেন, ধর্ম যার যার আধিকার সবার। এদেশে হিন্দু মুসলমান সকলের সমান অধিকার রয়েছে। যারা বলেন 'ধর্ম যার যার, উৎসব সবার'- তারা অসত্য কথা বলেন। আমরা এ কথায় বিশ্বাসী নই। সকল সম্প্রদায়ের মানুষ নিয়েই আমাদের এই দেশ। সংখ্যা যাই হোক, আমরা সকলের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন। মুসলমানের মত এদেশে অন্য সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার রয়েছে।  

তিনি বলেন, সকল রাজনৈতিক দলসহ সব পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিদায় নিতে হবে। নির্বাচন দেরিতে হলে উগ্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে, সারাদেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে। আমরা এদেশে মিলেমিশে থাকতে চাই। যে বা যারা আওয়ামী লীগ করেছেন, আওয়ামী লীগে ভোট দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নাই। কিন্ত আওয়ামী লীগের নাম করে যারা আমাদের নেতৃবৃন্দের ফাঁসির দড়ি নিয়ে ঘুরেছেন, ফাঁসির জন্য মিষ্টি খেয়েছেন, আমাদের ওপর হামলা করেছেন, মিথ্যা মামলা করেছেন তাদের কোনো ক্ষমা নাই।

মাওলানা সাইফুল ইসলামের কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে ইউনিয়ন আমীর মাওলানা সরোয়ার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে ও ইউনিয়ন সেক্রেটারি মাওলানা কাওসার হোসাইনের সঞ্চালনায় বিকাল ৩টায় চন্ডিপুর বাজারে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যক্ষ তাফাজ্জল হোসাইন ফরিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পিরোজপুর জেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক মো. হাবিবুর রহমান, জিয়ানগর উপজেলা আমীর মাওলানা আলী হোসেন, টগড়া দারুল ইসলাম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. আব্দুল্লাহীল মাহমুদ, জিয়ানগর উপজেলা সেক্রেটারি মো. তৌহিদুর রহমান রাতুল।  

জনসভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন জিয়ানগর উপজেলা সভাপতি ডা. আব্দুল হাই, চান সিরাজিয়া মাদরাসার মহিলা আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা শরীফ সুলতান মাহমুদ, কেসি টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ এস এম ইউনুছ আলী, বালিপাড়া ইউনিয়ন আমীর ডাঃ জাহিদুল ইসলাম, অবিভক্ত বালিপাড়া ইউনিয়নের সাবেক সেক্রেটারি কাজী রফিকুল ইসলাম, অবিভক্ত বালিপাড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মাষ্টার আনিসুর রহমান, চণ্ডিপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা নুরুল আমিন, ৯নং ওয়ার্ড সভাপতি মাওলানা নাসির উদ্দিন তালুকদার, জামায়াতের যুব বিভাগের উপজেলা সেক্রেটারি মোঃ জাকারিয়া রহমানী, যুব বিভাগের চণ্ডিপুর ইউনিয়নের সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল মামুন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের চন্ডিপুর ইউনিয়ন সভাপতি হাফেজ ফকরুল ইসলাম প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২৪
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।