ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

হাসিনাকে বাংলার ‘নমরুদ’ বললেন মাসুদ সাঈদী 

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৪
হাসিনাকে বাংলার ‘নমরুদ’ বললেন মাসুদ সাঈদী 

ঢাকা: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলার ‘নমরুদ’ বলে অভিহিত করেছেন পিরোজপুর-১ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য প্রার্থী ও জিয়ানগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী।

তিনি বলেছেন, আল্লাহ জালিমকে ছাড় দেন।

কিন্তু ছেড়ে দেন না। জালিমকে তার জুলুমের শাস্তি অবশ্যই ভোগ করতে হবে। যারা জুলুম করে এমন কাউকে মহান আল্লাহ অতীতে ছেড়ে দেননি। তার শেকড় যতই শক্ত হোক। ফেরাউন ও নমরুদ তাদের শক্তির দাম্ভিকতায় নিজেদের রব বলে দাবি করেছে। স্বীয় ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য এবং নিজের পথের কাঁটা সরিয়ে দেওয়ার জন্য দেশের সব নবজাতক ছেলেসন্তানকে হত্যা করেছে। তারা নিজেদের সর্ব ক্ষমতার অধিকারী ভেবেছিল। ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিল। জুলুম করেছিল। কিন্তু এতকিছুর পরও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি।  

‘বাংলাদেশের নমরুদ শেখ হাসিনাও একইভাবে তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য দেশের ছাত্র যুবক বৃদ্ধ সবাইকে গণহারে হত্যা করেছে। শত সহস্র মানুষকে গুম করেছে। হাজারো মানুষকে চিরতরে পঙ্গু করেছে, দেশের অর্থনীতির ভীতকে ভেঙে দিয়েছে। ব্যাংকের টাকা বোন ছেলে মেয়ে মিলে লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার গুম খুন নির্যাতন বিশ্বের সব স্বৈরশাসককে হার মানিয়েছে। বিশ্বের সব স্বৈরশাসকের মধ্যে শেখ হাসিনা ছিলেন জঘন্যতম জুলুমবাজ। ’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের রানিবাড়ি চাঁদপুর পাঠাগার ও সমাজকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ২৬তম তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিন শুক্রবার (১ নভেম্বর) প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদ সাঈদী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলনের পথ কখনোই ফুল বিছানো ছিল না; বরং যুগে যুগে বন্ধুর ও কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়েই ইসলামের সৈনিকরা দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দিয়ে গেছেন। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ওপর বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে জুলুম-নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। এসব উপেক্ষা করে সমাজে-রাষ্ট্রে ইসলামী বিধিবিধান প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই মানবতার প্রকৃত মুক্তি নিশ্চিত করা যাবে।

মাসুদ সাঈদী বলেন, আল্লাহ সরাসরি যেসব মহামানবকে ইসলামের কাজের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন সেসব নবী-রাসুলগণও ইসলামের জন্য কাজ করতে গিয়ে শত্রুদের জুলুম-নির্যাতনের নির্মম শিকার হয়েছেন। শতভাগ নিষ্পাপ ও নির্মোহ এ মানুষগুলোকেও দৈহিক নির্যাতন করা হয়েছে, সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছে। তাদের অনেককেই জানে মেরে ফেলা হয়েছে। ইসলামের জন্য নবীদের ত্যাগ ও কোরবানির অসংখ্য দৃষ্টান্ত মহাগ্রন্থ কোরআনে রয়েছে। অতীতের সব ইসলামবিরোধীদের ইসলাম নির্মূলের ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় জালিম স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা তার পূর্বসুরীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত দল ও তাদের নেতাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে। জেল দিয়েছে, ফাঁসি দিয়েছে। কোরআনের পাখি বিশ্বনন্দিত মুফাসসির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে খুনি হাসিনার নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

মাওলানা মো। আব্দুল বাসিরের সভাপতিত্বে এবং অধ্যাপক মাওলানা হামিদুজ্জমান ও ইসলমী ব্যাংক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের সঞ্চালনায় মাহফিলে তাফসির পেশ করেন দেশবরেণ্য আলেমে দ্বীন যশোরের মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক অধ্যাপক মাওলানা তৈয়েবুর রহমান। মাহফিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের আমির শিবগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ড. মাওলানা কেরামত আলী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদ সাঈদী আরও বলেন, ইসলামে সব ধরনের জুলুম অত্যাচার নির্যাতন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম। শুধু জুলুম নয়, জুলুমের সহযোগিতা করা এবং জালিমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম। এ বিধান শুধু মুসলমান নয়, কোনো অমুসলিমের ওপর জুলুম করলেও তার জন্য একই হুকুম। কাউকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, মিথ্যা সাক্ষ্য, মিথ্যা রায়, মিথ্যা সাজা, কারও অধিকার হরণ, বিনা অপরাধে নির্যাতন, আর্থিক, শারীরিক কিংবা মানসিক ক্ষতিসাধন, মানহানিকর অপবাদ, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ দখল ইত্যাদি সব কাজই জুলুম।  

মাসুদ সাঈদী বলেন, জুলুম কঠিন গুনাহের কাজ। মানবতার বিচারে জুলুম এতই অপছন্দনীয় যে, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নিজের জন্যও এটি হারাম করেছেন। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একজন অন্যজনের ওপর জুলুম করো না। ’

শেখ হাসিনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার জুলুম-অত্যাচারের প্রতিবাদ করলেই তাকে গুম করে আয়নাঘরে বন্দী করে রাখা হতো। হাসিনার মাফিয়া সরকার যে পরিমাণ অত্যাচার-নিপীড়ন করেছে তা এ দেশের মানুষ ভুলতে পারবে না। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের পলাতকদের অবিলম্বে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে। সেই সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দিতে হবে।

জনগণের জানমাল ও সম্পদ একমাত্র ইসলামী সরকারের কাছেই নিরাপদ উল্লেখ করে মাসুদ সাঈদী বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করলে জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন হবে না, আমাদের নারীরা আর ধর্ষণের শিকার হবেন না এবং অবৈধভাবে সম্পদ বিদেশে পাচার হবে না। মানুষ তার হারানো অধিকার ফিরে পাবে। সেই লক্ষ্যে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করে দেশে সুশাসন ও সুষম অর্থ বণ্টনের মাধ্যমে সবাইকে প্রতিষ্ঠিত করা হবে।  

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের আমির শিবগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ড. মাওলানা কেরামত আলী বলেন, সমাজ এবং রাষ্ট্রে ইসলাম ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সব ইসলামী দল ও সমমনা চিন্তা-চেতনার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হলে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে তাঁরই আইন-বিধানের ভিত্তিতে ইসলামী সমাজ গঠনের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আন্দোলনের পথে সব প্রকার বিরোধিতার মোকাবিলার দায়িত্ব আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়ে সবর ও ক্ষমার নীতিতে দৃঢ় থেকে আল্লাহর ওপর পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন চককীর্তি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা শাহ আলম, যাদবপুর দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা একরামুল হক, মাওলানা হাসান আল মামুন, মাওলানা ইয়াসিন আলী, হাফেজ মাওলানা আজকারুল ইসলাম প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২৪
এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।