ঢাকা: এবার ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ষড়যন্ত্রকারী বলেছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র জিএম কাদের। তিনি অভিযোগ করেছেন, ১/১১ এর সরকারের সময় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।
শনিবার (৫ মার্চ) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জিএম কাদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ গত ১ মার্চ তার মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের একটি বক্তব্যের ওপর কিছু কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
ইতিপূর্বে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ বলেছিলেন, ১/১১ এর সরকারের সময় তিনি স্বেচ্ছায় চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়াননি। তাকে এই পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেছিলেন, আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ অর্পণও তিনি স্ব-ইচ্ছায় করেননি। এটাই ছিল তখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে মাইনাস-থ্রি ষড়যন্ত্রের অংশ।
বিবৃতিতে জিএম কাদের বলেন, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ তার সংবাদ সম্মেলনে একথা স্বীকার করেছেন যে, তিনি দলের ক্ষমতা গ্রহণ না করলে এরশাদকে জেলে যেতে হতো- এমনকি তিনি রাজনীতি থেকে মাইনাসও হতেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ পার্টির চেয়ারম্যান থাকলে তাকে জেলে যেতে হতো আর তিনি পার্টি প্রধানের দায়িত্ব ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের হাতে দিলে মুক্ত থাকতেন- এ কথা প্রকারন্তরে পার্টির চেয়ারম্যানের দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলা যায়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী,সে সময় তিনি যখন অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, পার্টির প্রধান হিসেবে তার সরে আসা ছাড়া গত্যন্তর নেই- তখন তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তীতে ১/১১ সরকারের চাপে সেটি তিনি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হননি। বরং ব্যারিস্টার আনিসকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
জিএম কাদের তার বিবৃতিতে বলেন, একথা সত্য যে, ব্যারিস্টার আনিসের প্রতি এরশাদের একটু বেশি আনুকূল্য ছিল। সেজন্যই পার্টির শাসনামলে তিনি তাকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়সমূহে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি রাজনীতি থেকে সরে গেলেন। দুঃসময়ের প্রায় ১৬ বছর তিনি জাতীয় পার্টির সঙ্গে ছিলেন না। পার্টিতে সক্রিয় হওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ করা হলেও তিনি রাজি হননি। জাতীয় পার্টির সামনে যখন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়ে উঠেছিল সেই পর্যায় তিনি জাতীয় পার্টিতে এলেন এবং পার্টির চেয়ারম্যান তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে নিয়োগ দিলেন। সেই সুবাদে তিনি দুই দু’বার এমপি হয়েছেন এবং দুই দু’বার মন্ত্রী হয়েছেন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছে তার যোগ্যতা, পার্টির প্রতি আনুগত্য, ত্যাগ এসব সকল গুণাবলী বিবেচনা করে- যা পরবর্তী সময়ে প্রেসিডিয়াম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়েছে। পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত পার্টির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সভায় (জেলা-উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন-এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ) এবং পার্টির নির্বাহী কমিটির যৌথসভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ও অভিনন্দিত হয়েছে। আর এই সিদ্ধান্তসমূহ পার্টির বৈধ গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে এবং গণতান্ত্রিকভাবেই গৃহীত হয়েছে।
১/১১ এর সময়ে এরশাদ গ্রেফতার এড়াতে নিজেই সমঝোতা করে ছিলেন বলে সম্প্রতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ অভিযোগ তোলার ক’দিন মাথায় এ বিবৃতি দিলেন জাতীয় পার্টির মুখপাত্র জিএম কাদের।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৬
এসএ/এইচএ/