ঢাকা: ক্ষমতার বাইরে আছে দীর্ঘ দিন। বিরোধী দল হিসেবে সংসদেও নেই ক’বছর ধরে।
স্বেচ্ছা নির্বাসনে দীর্ঘ দিন ধরে দেশের বাইরে থাকা সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জোর তাগাদা সত্ত্বেও তাই বড় কমিটি গড়তে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড।
বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন সংগ্রামে কেন্দ্রের যথাযথ সমর্থন ও সহযোগিতা না পাওয়ায় দলটির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী মোটেই উৎসাহ দেখাচ্ছে না কাউন্সিল নিয়ে।
জেলা পর্যায়ের অনেক নেতা এখনও জেলে। অনেকে মামলার হাজিরা দিতে দিতেই দিন পার করছেন। কেন্দ্র থেকে কোন সাহায্যও পাচ্ছেন না। আন্দোলনে সব হারানো নেতাকর্মীরা তাই পিঠ বাঁচাতে আওয়ামী লীগ নেতাদের পিছু ছুটছেন। নতুন করে কোনো ঝামেলায় জড়াতে চান না বলে কাউন্সিল নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথাই বলছেন না তারা।
তাই আগের বছরগুলোতে কাউন্সিলের আগে পদ পেতে যে ভাবে দৌড়ঝাঁপ ছিলো, এবছর এখনও তা দেখা যাচ্ছে না।
এর আগে ২ মার্চের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা কমিটি গঠন করতে তৃণমূল নেতাদের চিঠি দেওয়া হলেও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সেই চিঠির সাড়া মেলেনি খুব একটা।
তাছাড়া বিভিন্ন সময়ের আন্দোলনে আহত-নিহতদের তালিকা চেয়ে কেন্দ্র থেকে বার বার তাগাদা দিয়েও কাজ হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা করার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়নি কেন্দ্র। ঢাকার কয়েকটি পারিবারের সদস্যদের ডেকে টিভিতে দেখিয়ে দায় সারা হলেও তার সুফল পৌছেনি তৃণমূলে।
দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাই ভীষণভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি এখন আর আগের মতো পালিত হচ্ছে না।
ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর, ঝিনাইদহ জেলা ও চাঁদপুর জেলাসহ ১২টিরও অধিক সাংগঠনিক জেলায় এখনও কমিটিই করতে পারেনি বিএনপি। দায়সারা কাউন্সিল হয়েছে আরো ৩০ থেকে ৩৫টির মত সাংগঠনিক জেলায়। সব কাউন্সিল নিয়েই মাঠ পর্যায়ের নেতা- কর্মীদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ। উঠেছে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ।
এগুলোর মধ্যে ঢাকা মহানগর বিএনপির অবস্থাটা একেবারেই শোচনীয়। এই কমিটির সভাপতি জেলে আছেন, সদস্য সচিব লাপাত্তা।
রুহুল কবির রিজভীসহ গুটিকয় নেতাকেই ঘুরেফিরে দেখা যাচ্ছে দলীয় কার্যালয়ে।
এমনকি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে না গেলে আর কেউই যাচ্ছেন না সেখানে। মিটিং ডাকলে দু’চার জন কেবল হাজিরা দিচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে নিজের কৌশলও পালটে নিয়েছেন তারেক। আসন্ন কাউন্সিলে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠনের মাধ্যমে দেশে ফিরে অল আউট আন্দোলন শুরুর কথা ভাবছিলেন তারেক। এজন্য প্রয়োজনে জেলে যেতেও প্রস্তুত ছিলেন তিনি।
কিন্তু নেতাকর্মীদের গা-ছাড়া ভাবে কৌশল পাল্টাতে বাধ্য হয়েছেন বিএনপির ভবিষ্যত কর্ণধার। তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, এখনই আর দেশে ফেরার চিন্তা করছেন না জিয়াপুত্র।
যদিও কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে, দলের ৭৫ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ১০টির সম্মেলন এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। জাতীয় কাউন্সিলের আগেই বাকি ৬৫ সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন শেষ করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে।
কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে হালে পানি পাচ্ছে না বিএনপির এই বক্তব্য। তাই শেষ পর্যন্ত সম্মতি ছাড়াই অনেক নেতাকে এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।
তবে চেয়ারম্যান পদে খালেদা জিয়া তো থাকছেনই, আর ভারপ্রাস্ত হিসেবে না রেখে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করা হচ্ছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে।
বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৫
এমএম/জেডএম/