ঢাকা: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, বিচারাধীন মামলার ব্যাপারে সরকারের দুই মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বিচার বিভাগের জন্য হুমকি। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষায় সর্বোচ্চ আদালত দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
রোববার (০৬ মার্চ) সুপ্রিম কোর্ট বার আয়োজিত প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে দুই মন্ত্রীর বক্তব্যর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘যদি এই দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থ্য গ্রহণ না করা হয়, তাহলে দেশবাসী মনে করবে ন্যায়বিচারের শেষ আশ্রয়স্থল সুপ্রিম কোর্টও বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের রক্তচক্ষু দেখে ভীতসন্ত্রস্ত’।
তিনি বলেন, ‘সরকার বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণের জন্য পাঁয়তারা করছে। মীর কাসেম আলীর মামলা নিয়ে দুই মন্ত্রীর বক্তব্য সেটা আরো স্পষ্ট করে দিয়েছে’।
‘দুই মন্ত্রীর বক্তব্য শুধু মীর কাসেম আলীর মামলার ব্যাপারে নয়, এটা সর্বোচ্চ আদালতে ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে আঘাত স্বরুপ। শুধু তাই নয়, এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য বিচার বিভাগকে অবজ্ঞা ও অবমাননার সামিল’।
এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘দু’জন মন্ত্রী সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন’।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে বারের সহ সম্পাদক মাজেদুর রহমান পাটোয়ারী উজ্জল, সদস্য অ্যাডভোকেট মির্জা আল মাহমুদ উজ্জল উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার (৫ মার্চ) একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে বাদ দিয়ে মীর কাসেমের মামলার আপিল শুনানি পুনরায় করার দাবি জানান খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইমলাম।
তিনি বলেন, ‘এ মামলার রায় কী হবে তা প্রধান বিচারপতির প্রকাশ্যে আদালতে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমি অনুধাবন করতে পেরেছি। তার বক্তব্যের মধ্যে এটা অনুধাবন করেছি যে, এ মামলায় আর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই’।
তিনি আরো বলেন, ‘এরপরও যদি মামলার রায়ে মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে, তাহলে সবাই ভাববে, সরকার চাপ দিয়ে এ কাজ করিয়েছে। তাই আমি দাবি জানাচ্ছি যে, প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে মীর কাসেমের মামলার আপিল শুনানি পুনরায় করা হোক’।
কামরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে ৪৫ বছরে অনেক বিচারপতি এসেছেন ও গেছেন, কিন্তু কেউ তার মতো এত অতিবক্তব্য দেননি। তার অতিকথনে সুধী সমাজের মানুষরা জিহ্বায় কামড় দিচ্ছেন। তাই তাকে অতিকথন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। আর তা না হলে সরকারকে নতুন করে বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করা উচিত বলে আমি মনে করছি’।
সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বলছি, এ রায় নিয়ে যে শঙ্কা এখন একটি সংকটে পরিণত হয়েছে। তবে এই সংকট আমাদের সৃষ্ট নয়। সংকট সৃষ্টি করেছেন আমাদের মাননীয় প্রধান বিচারপতি। এটাই আমাদের দুঃখ। ’ রায়ের আগে প্রধান বিচারপতি যদি এমন কথা বলেন তাহলে জাতি কোথায় যাবে বলে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৬
এমএইচপি/এএসআর