ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘নাটকটা ভালোই হয়েছে, আসামি হয়েও নির্বাচিত খালেদা-তারেক’

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১৬
‘নাটকটা ভালোই হয়েছে, আসামি হয়েও নির্বাচিত খালেদা-তারেক’ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে: বিএনপির চেয়ারপারসন পদে খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে তারেক রহমানকে আবারও নির্বাচিত করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, নাটকটা ভালোই হয়েছে। নির্বাচিত হয়েছে দুই আসামি।



তিনি বলেন, একজন এতিমের টাকা মেরে দেওয়ার মামলার আসামি। আরেকজন মানুষ হত্যার, গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি। যার নাম আবার ইন্টারপোলে ওয়ান্টেড আসামি হিসেবে আছে। তারা জনগণকে কী দেবে?

সোমবার (৭ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন শেখ হাসিনা। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।

বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়ার ক্ষমতা দখলকে হাইকোর্ট অবৈধ করেছেন। তার হাতে গড়া দল মানুষের কী করবে? তারা নাকি নির্বাচন হতে দেবে না। মায়ের সামনে বাবার সামনে ছোট্ট শিশুকেও রেহাই দেওয়া হয়নি, আগুনের আন্দোলন থেকে।

খালেদা জিয়ার কড়া সমালোচনা তিনি করে বলেন, আন্দোলনের নামে খালেদা জিয়া মানুষ হত্যা করেছেন। সেই আন্দোলন মুক্তিযদ্ধের চেতনা ধ্বংস করা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বন্ধ করার আন্দোলন। তিনি বললেন সরকার উৎখাত না করে ঘরে ফিরবেন না। সেসময় আড়াই শত মানুষকে হত্যা করেছেন। খালেদার রাক্ষসী আগুন থেকে কেউ রেহাই পায়নি। কী অপরাধ ছিলো মানুষের? কেন মানুষকে পুড়িয়ে মারলো তার জবাব একদিন বাংলার মানুষের কাছে খালেদা জিয়াকে দিতে হবে। এর বিচারও হবে বাংলার মাটিতে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দেশের উন্নতি খালেদা জিয়ার পছন্দ নয়। তার আত্মা তো পড়ে থাকে তার পেয়ারে পাকিস্তানে। তার জন্ম ভারতে, প্রিয় স্থান পাকিস্তান। উনি এদেশের মানুষকে রেহাই দিয়ে পাকিস্তান চলে গেলেই পারেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের তাৎপর্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণ পৃথিবীর ঐতিহাসিক ভাষণ। এ ভাষণ শুনলে এখনও মনপ্রাণ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। তিনি এ ভাষণ দিয়েছিলেন বাঙালি জাতিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য।

‘২ মার্চের ডাকে ৭ মার্চ প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ এই সোহরাওয়ার্দী ময়দানে ছুটে আসে। বঙ্গবন্ধু শুধু ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি ৭ মার্চ ভাষণ দেবেন। তাতেই দেশের মানুষ লাঠি-বৈঠা নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পাওয়ার জন্য। তিনি তাদের সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই ভাষণেই তিনি প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মুক্তির সংগ্রামের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ’

শেখ হাসিনা বলেন, এখানে ৭ মার্চেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জাতির পিতা। এ ঘোষণা আসলে তিনি দিয়ে আসছিলেন সেই ১৯৪৮ সাল থেকে। তারপর ধাপে ধাপে জাতিকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে এগোচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু।

এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এবং তৎপরবর্তী গ্রেফতার ও কারাবরণসহ সুদীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়ার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তার লক্ষ্য ছিল অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা করা। সেজন্য নিজের জীবনে বারবার ঝুঁকি নিয়েছেন, কারাবরণ করেছেন। কিন্তু নীতিতে স্থির ছিলেন। সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এদেশকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। এটাই তার সবচেয়ে বড় সাফল্য।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিলে‍ তাদের বিচার শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু তাকে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যা করা হলো। এরপর পাল্টে যায় সব। যাদের এদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তাদের ফিরিয়ে আনা হয়, যারা বন্দী ছিল, তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। তাদের ছেড়ে দিয়েছে জিয়া।

‘তখন অনেকে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করে। যুদ্ধাপরাধীদের এদেশে ক্ষমতা দেওয়া হয়, প্রতিষ্ঠিত করা হয়। গোলাম আজমদের হাতে পতাকা তুলে দিয়ে মন্ত্রী বানানো হয়। খালেদাও তা করেছে। সেই লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা যায় তাদের হাতে, যারা এদেশের বিরোধিতা করেছে। বাংলাদেশকে পরিণত করা হয়েছিল লুটপাট-দুর্নীতির দেশ। ২১ বছর এমন ষড়যন্ত্র চলেছে। ’

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতি ধরে রাখার উদ্যোগ নেয়।

তিনি উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বিশ্বের আড়াই হাজার ভাষার মধ্যে অন্যতম সেরা ভাষণ। ইতোমধ্যে এটি ১২ ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আরও ভাষায় অনুবাদ করা হবে। আন্তর্জাতিকভাবে এই ভাষণ বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়া এই ভাষণ বন্ধের ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।

সদ্যসমাপ্ত এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের রানারআপ হওয়ার যোগ্যতা অর্জনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছি, রানারআপ হয়েছি। সামনে আরও বহুদূর যাবো।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’—ঠিকই পারেনি। খেলায় এখন বাঙালিকে হিসাব করে বিশ্বের মানুষ। আমি চাই, আমার দেশের প্রতিটি মানুষ এই চেতনা নিয়েই এগিয়ে যাবে।

শেখ হাসিনা এসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জনের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিদেশে মর্যাদা পেয়েছে। এদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আজ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়েছি। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, শিক্ষার উন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছি। আমাদের ছেলে-মেয়েরা মেধাবী, আমরা চাই তারা দক্ষ হয়ে দেশকে গড়ে তুলবে। চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিয়েছি দোরগোড়ায়।

‘আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ভিক্ষা নয়, নিজের পায়ে দাঁড়াবো, দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। মাথা উ‍ঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলবো, কারও কাছে হাত পেতে নয়। আমাদের যুব সমাজ, তারা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারাই দেশকে গড়ে তুলবে। বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ।

জনসভাকে ঘিরে দুপুরের পর থেকেই  সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। তারা নানা রকম ব্যানার-ফেস্টুনের পাশাপাশি কাঠের তৈরি কামান, নৌকাসহ বিভিন্ন প্রতিকৃতি নিয়ে আসেন। প্রধানমন্ত্রী সভায় যোগ দেওয়ার আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে।
 
রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড, পাড়া মহল্লা থেকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগসহ দলের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগ দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৬/আপডেট ১৮০৪ ঘণ্টা/আপডেট ১৮৪০ ঘণ্টা/আপডেট ১৯৩০ ঘণ্টা
এসকে/এমইউএম/এমএ/এইচএ

** এশিয়া কাপে রানারআপ হয়েছি, আরও বহুদূর যাবো
** ৭ মার্চ জাতিকে মুক্ত করার ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু
** সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী
** বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।