ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

মনোনয়ন বঞ্চিতদের রক্ষায় হাওলাদার আউট!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৮
মনোনয়ন বঞ্চিতদের রক্ষায় হাওলাদার আউট! এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: আত্ম প্রকাশের পর এই প্রথম রেকর্ড পরিমান মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি। মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সারাদেশের প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মীর কাছ থেকে দলটি ছয় কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করেছে।

মনোনয়ন বিক্রির বাইরেও লেনদেন হয়েছে বিপুল পরিমান অর্থ। দলীয় মনোনয়ন চুড়ান্ত হওয়ার পর ফাঁস হয়েছে এই বাণিজ্যের খবর।

মনোনয়ন বাণিজ্যে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ না উঠলে রুহুল আমিন হাওলাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা। বিষয়টি নিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান চরম ক্ষুব্ধ।

বিষয়টি চেয়ারম্যানের নজরে আসার পরেই শুরু হয় অ্যাকশন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপিকে মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে চিঠি  দেওয়া হয় সোমবার (৩ ডিসেম্বর)। চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা মোতাবেক এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।  

এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিবের পদ থেকে অব্যহতি দেওয়ার পরই নেতাকর্মীদের মধ্যে উল্লাস শুরু হয়। বেলা ১১টার দিকে দলে দলে নেতাকর্মীরা জাপার বনানী কার্যালয়ে আসতে থাকেন। অনেকের হাতে দেখা গেছে ফুলের মালা। বিকেলে নতুন মহাসচিবের সংবাদ সম্মেলনের আগে পার্টি কার্যালয়ে রাঙ্গাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন উপস্থিত নেতাকর্মীরা।  

জাতীয় পার্টির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ লুটে নেওয়ার পর রুহুল আমিন হাওলাদারের জন্য পদ হারানোর অন্যতম কারণ হচ্ছে ঋণ খেলাপির কারণে মনোনয়ন বাতিল হওয়া।

পটুয়াখালী-১ আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন রুহুল আমিন হাওলাদার। রোববার (২ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। এই খবর দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তোলপাড়। চেয়ারম্যান থেকে সর্বস্তরের নেতারা পড়েন বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে। মনোনয়ন বাণিজ্যের পর নিজের মনোনয়ন বাতিল হওয়াই কাল হলো রুহুল আমিন হাওলাদারের।

জাতীয় পার্টির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছ থেকে বেশ কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রুহুল আমিন হাওলাদার। প্রায় ৩ হাজার মনোনয়নপত্র বিক্রি করলেও বাছাই তালিকায় থাকায় সহস্রাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর কাছ থেকেই তিনি কম করে হলেও একলাখ করে টাকা নেন।

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি ফাঁস হয়েছে জাপার প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর। মনোনয়ন বঞ্চিতদের অনেকেই বনানীতে জাপা কার্যালয়ের সামনে প্রকাশ্যে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তোলেন মহাসচিবের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জাপা নেতা বলেন, রুহুল আমিন হাওলাদারকে অব্যাহতি দেওয়ার মাধ্যমে মনোনয়ন বঞ্চিতদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। মনোনয়নের জন্য দেওয়া টাকা ফেরত না পেলেও তারা মোটামুটি খুশি।

রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ নিয়ে সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে নতুন মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গার কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বলেন, ‘দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ’

জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জাপার প্রথম মহাসচিব হন ২০০২ সালে। ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি তাকে পুনরায় মহাসচিব নিয়োগ করা হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি পটুয়াখালী-১ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৮
এসই/এমকেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।