ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘বাকশাল প্রতিষ্ঠাই বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের জন্য দায়ী’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২০
‘বাকশাল প্রতিষ্ঠাই বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের জন্য দায়ী’

ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংকটের জন্য মূলত ১৯৭৫ সালের দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা দায়ী। আজকের এ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কতম দিন। পঁচাত্তরের এইদিনে লাখো শহীদের রক্ত দিয়ে লেখা সংবিধানকে চূর্ণবিচূর্ণ করে আওয়ামী লীগ দেশে একদলীয় সরকার বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।  

‘২৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা ও বাকশাল সৃষ্টির’ প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।

লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘পাকিস্তান সৃষ্টির পর এদেশের কোটি কোটি মানুষ সংগ্রাম করেছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে, জেল-জুলুম-অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের ২১ দফা, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ১৯৬৯ সালের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার সনদ এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ-সবকিছুই ছিল জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের অংশ। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল দেশে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা।  

‘যেখানে মানুষের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। একটি ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা। সব শ্রেণির মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এ লক্ষ্য এবং আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সালে যে সংবিধান রচনা করে তার মধ্যে উপরোক্ত সবকিছুই সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত। ’
 
তিনি বলেন, ‘এ সংবিধানে নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য আরও দু’টি মূল্যবান বৈশিষ্ঠ্য সন্নিবেশিত করা হয়। এক- বিনাবিচারে নাগরিককে কোনো নিরাপত্তামূলক আইনের আওতায় আটক করা যাবে না। দুই- দেশে কোনো অবস্থাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা যাবে না। ’

‘‘সেই সংবিধানের অধীনে ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাগরিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানায়। ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯১টি আসনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের এ সৌন্দর্য বিনষ্ট করার প্রক্রিয়া শুরু করে। ৬ মাস যেতে না যেতেই ১৯৭৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী এনে ৩৩ অনুচ্ছেদ এর অধীনে বিনাবিচারে আটক করার সুযোগ সৃষ্টি করে এবং সংবিধানের ১৪১ (ক) অনুচ্ছেদ সন্নিবেশ করে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণার ব্যবস্থা করে। এ সংশোধনীর ফলে ১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রণয়ন করে বিরোধীদলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বিনাবিচারে আটক করে। ১৯৭৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। ২৭ দিন পর ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি আজকের এ দিনে নিজেদের রচিত সংবিধানকে ধ্বংস করে বিনা আলোচনায় চতুর্থ সংশোধনী বিল মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে পাশ করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) করা হয়। ’'
 
মওদুদ আহমদ বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের তৎকালীন সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদ কিছু সামরিক অফিসারের মাধ্যমে জাতির জনককে হত্যা করে ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং দেশে মার্শাল ‘ল’ জারি করে। চারজন ছাড়া সংসদ এবং মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের সব সদস্যই নিজ নিজ পদে থেকে যান। সেই সরকারের সমর্থনে আওয়ামী লীগের চারজন নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়। তাদের হত্যাকাণ্ডের অপরাধ মওকুফ করার জন্য ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স তারাই জারি করা হয়। ’

বিএনপি নেতা মওদুদ বলেন, ‘দেশে এখন কার্যকর কোনো সংসদ নেই। আইনের শাসন নেই। বলতে গেলে ১৯৭৫ সালে দেশে বাকশাল কায়েমের পর যেভাবে কোনো রাজনীতি ছিল না, এখনও সেভাবে কোনো রাজনীতি নেই। আজকে খালেদা জিয়াকে একটি মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নিষ্ঠুর এবং অমানবিকভাবে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি আজ একই সূত্রে গাঁথা। আজকের এ দিনে জাতির প্রত্যয় হলো- দেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা পুনর্বহাল করার জন্য সব গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল-মত-শ্রেণি, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, ছাত্র-যুবক সব শ্রেণির মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে। ’

সেই ঐক্যবদ্ধ লড়াই কবে শুরু হবে এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ প্রবীণ নেতা বলেন, ‘সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে। ’
 
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু ও শওকত মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২০
এমএইচ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।