ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে না পারা সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২০
‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে না পারা সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

ঢাকা: সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়নের ধারাবাহিক পরিণতিই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক স্থবিরতার প্রধান কারণ দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এজন্য সবার আগে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। তাহলেই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য নির্বাচিত সরকার আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।

এমতাবস্থায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নৈতিক ও যৌক্তিক ভূমিকায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। ’

সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুরু থেকেই জনবিচ্ছিন্ন এ অনির্বাচিত সরকার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে তাদের মাতৃভূমি রাখাইনে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকেও সরকার রাখাইনে ফেরত পাঠাতে পারেনি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছাও তারা প্রমাণ করতে পারেনি। দীর্ঘদিনের এ সমস্যাকে কার্যকরভাবে আন্তর্জাতিকীকরণ করতে না পারা নিঃসন্দেহে সরকারের চরম ব্যর্থতা। ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ মুহূর্তে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিগুলোর ‘না’ উপেক্ষা করে বঙ্গোপসাগরের মুখে নতুন সৃষ্ট ভাসানচর দ্বীপে রোহিঙ্গাদের একাংশকে স্থানান্তরের ফলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দাবি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে আমরা অবগত হয়েছি যে, গত ৩ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে থেকে ১৬৪২ জনের একটি দলকে কক্সবাজার থেকে নতুন প্রতিষ্ঠিত ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের মুখে দেশটি থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। একই বছরের নভেম্বরে কক্সবাজার থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। তখন থেকেই রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছিল। তাছাড়া জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক অর্থায়নে পরিচালিত উন্নয়ন সংস্থাগুলো এর বিরোধিতা করে আসছে। জাতিসংঘসহ অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার আপত্তি উপেক্ষা করে সরকার এ স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু করায় নতুন সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়। এ সমস্যা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জাতিসংঘসহ অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার এ সংকট নিরসনে সমান দায়িত্ব রয়েছে। সবার সঙ্গে সমন্বয় না করে সম্পূর্ণ এককভাবে বাংলাদেশ ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু করে সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে নাখোশ করেছে। এটি রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতার নতুন সংযোজন।

তিনি আরও বলেন, ‘ভাসানচর প্রকল্পটি মূলত সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্প-৩ এর একটি বর্ধিত প্রকল্প। এ প্রকল্পটি বর্তমান আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ত একটি মেগা প্রজেক্ট। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য প্রকল্পটিতে প্রাথমিকভাবে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। পরবর্তীকালে অন্য প্রজেক্টের ন্যায় প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে তা ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়। যথাযথ টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই এসব প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ রয়েছে। হতাশার কথা হলো, এ প্রকল্প তথা সরকারের সুদূরপ্রসারী দুর্নীতির পক্ষে সাফাই গাইতে কিছু দলকানা সাংবাদিক দিয়ে ভাসানচরের আশ্রয় শিবিরের পক্ষে নানা ধরনের প্রচার প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। ভাবখানা এমন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোই যেন সংকট সমাধানে সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এটাই যেন প্রত্যাবাসন। ভাসানচরে শরণার্থী স্থানান্তরে সরকারের পক্ষে সাফাই না গেয়ে মিয়ানমারে নিরাপদ ও স্থায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে তাদের সরব অবস্থান ব্যক্ত করলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান তরান্বিত হতে পারে বলে আমরা মনে করি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২০
এমএইচ/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।