ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

শেখ হাসিনার শিখিয়ে দেওয়া ব্যাখ্যা দিয়েছেন আইনমন্ত্রী: রিজভী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২১
শেখ হাসিনার শিখিয়ে দেওয়া ব্যাখ্যা দিয়েছেন আইনমন্ত্রী: রিজভী ছবি: শাকিল

ঢাকা: খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আইনমন্ত্রী যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তাকে আইনের বিকৃত ব্যাখ্যা দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এটা আইনমন্ত্রীর নিজের ব্যাখ্যা নয়। শেখ হাসিনা তাকে যা শিখিয়ে দিয়েছেন তিনি সেটাই বলেছেন।

’  

বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহানগর বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন।  

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন দাবি করে ‘কালো দিসব’ পালন করার অংশ হিসেবে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী বলেন, ‘আইনমন্ত্রী এটাতো আপনার নিজের কথা না। আইনের বিধানে আছে। কিন্তু শেখ হাসিনা আপনাকে যা শিখিয়ে দিয়েছেন আপনি সেই কথাই বলছেন। আপনি আইনের বিকৃত ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। ’

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সমালোচনা করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আজকে আর এক ফেরিওয়ালা বেরিয়েছে। আইনের বইয়ে যা লেখা থাক উনি ওটা বলবেন না। তার নাম আনিসুল হক, আইনমন্ত্রী। দেশের বরেণ্য আইনজীবীরা বলছেন, এ লোকটা আইনের অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন। আমাদের গণতন্ত্রের মা, যিনি বার বার গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাকে আজকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বন্দি করে এভার কেয়ার হাসপাতালে ফেলে রাখা হয়েছে। ’

খালেদা জিয়ার পাকস্থলী থেকে রক্ত ঝড়ছে জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘তার চিকিৎসকরা বলেছেন তার জীবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় একটা বড় বিপদ ঘটে যাবে। তারপরও এত পাষাণ, এত পাথর, এত নির্দয়, এত নির্মম, ওই প্রধানমন্ত্রী আর তার আইনমন্ত্রী। আইনমন্ত্রী গতকাল বলে দিয়েছেন যে আইনে নেই বিদেশে চিকিৎসা করা। ’

তিনি বলেন, ‘আজকে কেন এ দিবসটি পালন করতে হচ্ছে। তিন/চার বছর আগেতো পালন করিনি। আওয়ামী লীগ প্রতি মুহূর্তে উন্নয়নের কথা বলে। তারা বলে বেড়ায় উড়াল সেতু, ফ্লাইওভার কত কথা। কিন্তু আসল উন্নয়নের কথা বলে না। তারা জোর করে ১২ বছর ক্ষমতায় আছে। এ ১১/১২ বছরে ১১ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। একজন এমপি পাপুল তিনি মানব পাচার করেন। আর একজন মন্ত্রী টাকলা মুরাদ তিনি অশ্রাব্য কথা বলেন। আর আমরা দেখলাম শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৩০ ডিসেম্বর দিনের ভোট রাতে পাচার হয়ে গেল। ’

রিজভী বলেন, ‘গোটা জাতি আজকে তাদের ভোট চোর বলে স্লোগান দিচ্ছে। তারপরও ওরা গলাবাজি করে। যুগ যুগ ধরে প্রচলিত চোরের মায়ের বড় গলা। আজকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অনেক বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার নামে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, ব্যাংকে তাদের টাকা ফ্রিজ করেছে। বাংলাদেশের অনেক টাকা ডলারে পরিণত করে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভে জমা আছে, সেটা ফেরত নিতে বলেছে আমেরিকা। ধিক্কার জানিয়েছে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী তাদের গালাগালি করছেন। ’

প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আপনার দেশে কী গুম হয় না? তাহলে ইলিয়াস আলী কোথায়? আপনার দেশে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় না? তাহলে ছাত্র নেতা জনি কোথায়? প্রধানমন্ত্রী আপনি অন্যদেশকে গালাগালি করেন। আপনার নিজের দেশে, জনপদের পর জনপদ, রাস্তাঘাট, ফুটপাতের আলপনা শুধু রক্তের আলপনা, শুধু রক্তের ছাপ। আর আপনি বড় বড় কথা বলেন। ’

রিজভী বলেন, ‘আজকে মরে যাওয়ার পর লাশেরও কোনো গ্যারান্টি নেই। আপনারা জানেন এ ৩০ ডিসেম্বরের যে প্রহসনের নির্বাচন, নিশিরাতের নির্বাচন, সেই নির্বাচনের আগে মারা যাওয়া নেতার লাশের বিরুদ্ধে তারা মামলা দিয়েছিল। হজ করতে গেছে তার নামে মামলা দিয়েছিল। প্যরালাইসিস রোগীর নামে মামলা দিয়েছে। অর্থাৎ নিশিরাতের ভোট করার প্রস্তুতি হিসেবে এসব গায়েবি মামলা, লাশের বিরুদ্ধে মামলা, এ মামলাগুলো তারা করেছে। ’

তিনি বলেন, ‘এ ৩০ ডিসেম্বর গোটা জাতিকে শেখ হাসিনা পরাজিত করেছিলেন। কিন্তু একটা জাতিতো পরাজিত হয় না। এ জাতির ইতিহাস দীর্ঘ ইতিহাস। নয় মাস যুদ্ধের ইতিহাস, হাজার বছরের সংগ্রামের ইতিহাস। আবার এ জাতি তীব্র গতিতে জেগে উঠবে। শেখ হাসিনার ময়ুরের সিংহাসন আবার রাস্তায় লুটিয়ে দেবে, আবার গণতন্ত্র ফিরে আসবে। খালেদা জিয়া আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। আবার গণতন্ত্রের মুক্ত বাতাস বইবে। ’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, যুবদল নেতা শফিকুল ইসলাম সেন্টু, গোলাম মাওলা শাহিন, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২১
এমএইচ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।