সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ): মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় গ্যাস সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় অাস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস।
বাসাবাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও সিএনজি ফিলিং স্টেশনে চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না গ্যাস। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। বাসাবাড়িতে গ্যাস সংকটের কারণে রান্না করতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন নারীরা।
সাপ্লাইয়ের গ্যাস সংকটের কারণে বাসাবাড়ি ও খাবার হোটেলগুলোতে রান্নার জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে এলপি গ্যাসের ওপর।
সঠিক মাপ ও অন্য সিলিন্ডারের তুলনায় বেশিদিন চলে বলে সাটুরিয়ার গ্রাহকরা বেছে নিয়েছেন বসুন্ধরার লিকুইড পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাস সিলিন্ডার।
সাটুরিয়ায় আবাসিক গ্রাহক ছাড়াও বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও বেশ কয়েকটি বড় শিল্প কারখানা রয়েছে। ঢাকা-আরিচ মহসড়ক সংলগ্ন সাটুরিয়ায় রয়েছে দু’টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন। সাটুরিয়ার আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প ও সিএনজি স্টেশনসহ সব মিলিয়ে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে কতোটুকু তা বলতে পারেননি মানিকগঞ্জের তিতাস গ্যাস অফিসের কেউ।
সাটুরিয়ায় কয়েকদিন ধরে গ্যাসের সংকট বেড়ে গেছে। অনেক এলাকায় সকাল ৬টা-৭টা বাজতে না বাজতেই গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। আবার রাত ৯টা-১০টার আগে গ্যাস মেলে না। এরপর গ্যাস এলেও তা নিবুনিবু অবস্থায় জ্বলে। তাতে রান্নাসহ প্রয়োজনীয় কাজ করা যায় না। অনেক বাসাবাড়িতে বিকল্প হিসেবে সিলিন্ডার গ্যাস, কেরোসিন ও মাটির চুলা ব্যবহার করা হচ্ছে।
উপজেলার পশ্চিম কাত্তন্নারা এলাকার গৃহবধূ মুক্তা অাক্তার বাংলানিউজকে জানান, কিছুদিন রাত ১২টার পর থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যেতো। এতে অনেকেই দিনের রান্না রাতেই সেরে রাখতো। কিন্তু সপ্তাহ খানেক হলো, একেবারেই গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার গ্যাস কিনে রান্না করতে হচ্ছে। সিলিন্ডার গ্যাসের মধ্যে বসুন্ধরার এলপি গ্যাস সিলিন্ডারই মান সম্মত, চলে বেশিদিন।
সাটুরিয়া সদর বাজার এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ঈদের পর থেকে সারাদিন গ্যাস থাকে না। ভোর ৪টার দিকে একটু একটু গ্যাস পাওয়া যায়। কিন্তু তাতে ঠিকমতো রান্না করা যায় না। তাই এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার কিনে কাজ করতে হচ্ছে। গ্যাসের পরিমাণ সঠিক থাকায় বসুন্ধরার এলপি গ্যাস সিলিন্ডারই কিনেছি।
সাটুরিয়ার একটি খাবার হোটেলের মালিক সাইফুল ও নাদেশ্বরী এলাকার বাসিন্দা মমতাজ বেগম বাংলানিউজকে জানান, গ্যাস সরবরাহ এতোটাই কম যে তিন বেলার রান্না তো দূরের কথা; এক বেলাই ভালো ভাবে রান্না করা যায় না। তাই এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই বসুন্ধরার এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশাপাশি কেরোসিন ও লাকড়ির চুলায় রান্না করছেন অনেকে।
সাটুরিয়ার গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসায়ী মো. রুবেল বাংলানিউজকে জানান, ১২.৪ লিটারের একটি গ্যাস সিলিন্ডার সাধারণত ২৮ ঘণ্টা জ্বলে। যেখানে অন্যান্য কোম্পানির একই পরিমাণের একটি সিলিন্ডার বড় জোর ২৪-২৫ ঘণ্টা জ্বলে, সেখানে বসুন্ধরার এলপি গ্যাস সিলিন্ডারে চলে ৩০ ঘণ্টারও বেশি। এছাড়া সরবরাহ বেশি থাকায় বসুন্ধরার গ্যাস সিলিন্ডার সহজে পাওয়া যায়। তাই অন্য কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডারের তুলনায় বসুন্ধরার সিলিন্ডার বেশি বিক্রি হয়।
এদিকে, তিতাস গ্যাসের সাপ্লাই কম থাকলেও প্রতি মাসে দিতে হচ্ছে বিল। ফলে জ্বালানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
সিএনজি ফিলিং স্টেশনেও গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় সিএনজি চালিত যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক অানোয়ার বাংলানিউজকে জানান, কয়েকদিন ধরে এ সংকট চরমে উঠেছে। কোনো কোনো সময় একদমই গ্যাস মিলছে না। ফলে অটোরিকশা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সব সময় উৎকণ্ঠায় থাকি কখন বন্ধ হয়ে যায়।
তিতাস গ্যাস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক রতন চন্দ্র দে বাংলানিউজকে জানান, সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, শিল্প-কারখানা ও সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করায় সাটুরিয়ায় আবাসিক লাইনে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। তবে গ্যাসের উৎপাদন বাড়লে এ সংকট থাকবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৬
এসআই