ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

সম্পদ বিক্রির অনুমোদন পেতে পেট্রোবাংলায় শেভরন!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
সম্পদ বিক্রির অনুমোদন পেতে পেট্রোবাংলায় শেভরন!

ঢাকা: পেট্রোবাংলার সঙ্গে আমেরিকান কোম্পানি শেভরনের রুদ্ধদ্বার বৈঠক। শেভরন চায় চীনা কোম্পানির কাছে তাদের শেয়ার হস্তান্তরের অনুমোদন। অন্যদিকে পেট্রোবাংলা নিজেই শেভরনের শেয়ার কেনার পক্ষে।এমনটাই জানিয়েছে বৈঠকসূত্র।

মার্কিন কোম্পানি শেভরন বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার গ্যাস ফিল্ড থেকে পিএসসির আওতায় গ্যাস উত্তোলন করে আসছে। কোম্পানিটি রহস্যজনক কারণে অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।



এরই অংশ হিসেবে শেভরন ওই তিনটি গ্যাস ফিল্ডের মালিকানা হস্তান্তর করার উদ্যোগ নেয়। শেভরনের সম্পদ বিক্রির চেষ্টার খবর শুনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা নিজেই কেনার জন্য প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু মার্কিন কোম্পানি পেট্রোবাংলাকে অনিচ্ছার কথা জানিয়ে চীনা কোম্পানি হিমালয় এনার্জির সঙ্গে চুক্তি করে।

আর এতেই বেঁকে বসেছে পেট্রোবাংলা। হোল্ডিং কোম্পানি হিসেবে পেট্রোবাংলার অনুমোদন না নিয়ে মালিকানা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলা একাধিক সাবেক কর্মকর্তা। তারা জানিয়েছেন শেভরন পুরোপুরি বেআইনি কাজ করেছে।

পেট্রোবাংলা বাংলাদেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো কেনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি কোম্পানিকে দিয়ে শেভরনের সম্পদের পরিমাপ মূল্যায়ন করছিল। এদিকে মার্কিন কোম্পানিটি নানাভাবে সরকারের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

বুধবার (১৯ জুলাই) পেট্রোবাংলায় শেভরনের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে। এসময় পেট্রোবাংলার অভ্যন্তরে কোনো সাংবাদিককে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।

বৈঠকের পর পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোঃ ফয়জুল্লাহ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এমন নির্দেশনা ছিল না।

তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি কেন পেট্রোবাংলার অনুমতি না নিয়ে শেয়ার হস্তান্তর করা হলো।
তিনি বলেন, আমরা শেভরনের সম্পদ মূল্যায়ন করেছি। এখন সেটা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।

এক্ষেত্রে শেভরনের সম্পদ হস্তান্তরের বিষয়ে কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনে যা বলা হয়েছে সবকিছু সে অনুযায়ীই হবে।

তবে আইনে কি বলা আছে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান কোনো মন্তব্য করেননি।

আলোচনায় বসার ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিনিধিদের নামও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ না করার শর্ত দেয় শেভরন। এজন্য পেট্রোবাংলা থেকে শেভরনের প্রতিনিধি দলের কারোর নাম প্রকাশ করা হয়নি।

শেভরন থেকে গত এপ্রিলের শেষ দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো একটি বার্তায় বলা হয়, শেভরন বাংলাদেশের ব্লক-১২ তে থাকা বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র এবং ব্লক ১৩ এবং ১৪ তে থাকা জালালাবাদ এবং মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের শেয়ার বিক্রি করছে।

দেশের সব থেকে বেশি গ্যাসের সরবরাহ আসে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে। বিবিয়ানা থেকে প্রায় এক হাজার ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রায় ৩২ মিলিয়ন এবং জালালাবাদ থেকে ২৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।

পেট্রোবাংলাসূত্র বলছে, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে গ্যাস-সংকটের কথা বলে বিদ্যমান খনি থেকে গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে শেভরন বিবিয়ানাতে সাড়ে চার ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) এর ওপরে মজুদ থাকার দাবি করে।

পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, জালালাবাদের দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা ২৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। গতবছর পর্যন্ত গড়ে তোলা হয় ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুটের ওপরে। বিবিয়ানা ক্ষেত্রের দৈনিক উত্তোলন সক্ষমতা ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বিপরীতে শেভরন গত বছর পর্যন্ত উত্তোলন করছে ১ হাজার ২৩০ থেকে ১ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট।

বেশি মজুদ দেখিয়ে অতিরিক্ত গ্যাস তোলার ফলে দেশের সাগরবক্ষের একমাত্র গ্যাসক্ষেত্র সাঙ্গু পরিত্যক্ত হয়েছে। অনেক দিন ধরেই শেভরনের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের পরিণতিও একই দিকে এগুচ্ছে বলে সতর্ক করা হচ্ছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সক্ষমতার অতিরিক্ত গ্যাস উত্তোলন করা হলে ভূ-অভ্যন্তরের গ্যাস কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে করে গ্যাসক্ষেত্রের আয়ুষ্কাল কমে যায়। আর এ কারণেই হয়তো শেভরণ সম্পদ বিক্রি করে বাংলাদেশ ছাড়তে চাইছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
এসআই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।