ঢাকা: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের চুল্লিপাত্র (রিয়্যাক্টর ভেসেল) ও একটি স্টিম জেনারেটর রাশিয়া থেকে সমুদ্রপথে পাঠানো হযেছে। ১৪ হাজার কিলোমিটার সমুদ্রপথ অতিক্রম করে চলতি বছরের শেষে দিকে রূপপুর প্রকল্প এলাকায় এসে পৌঁছাবে।
বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রশিয়ার ভোলগোদোনস্কে এইম-টেকনোলজি (রোসাটমের যন্ত্র উৎপাদনকারী শাখা- জেএসসি অটোমেনারগোম্যাশ) বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র রূপপুর পরমাণু কেন্দ্রের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় কিছু সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে। রাশিয়ার বৃহত্তম পরমাণু যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী এলাকা ভোলগা ধোনকে অটোম্যাসের কারখানায় প্রস্তুত একটি ভিভিইআর-১২০০ চুল্লিপাত্র (রিয়্যাক্টর ভেসেল) ও একটি স্টিম জেনারেটর রূপপুর পরমাণু কেন্দ্রের জন্য সমুদ্রপথে পাঠানো হয়েছে।
রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র দু’টি ইউনিট নিয়ে গঠিত। প্রতিটি ১২শ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম ইউনিটটির কার্যক্রম শুরু হবে ২০২৩ এবং দ্বিতীয়টির ২০২৪ সালে।
জেএসসি অটোমেনারগোম্যাশ-এর মহাপরিচালক আন্দ্রেই নিকিপেলোভ বলেন, গুণগতমানের যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও সেগুলো সময়মতো সরবরাহ করাই আমাদের অগ্রাধিকার। করোনা ভাইরাসের কারণে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম চুল্লির সরঞ্জাম পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। এসব জিনিস গন্তব্যে পৌঁছাতে বেশ সময় লাগবে। এগুলো ১৪ হাজার কিলোমিটার সমুদ্রপথ অতিক্রম করে বাংলাদেশে পরমাণুকেন্দ্রে এ বছরের শেষের দিকে পৌঁছাবে।
ভিভিইআর-১২০০ চুল্লিবিশিষ্ট পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কল্পনাতীত, এ কারণে এ ধরনের পরমাণু কেন্দ্র ‘থ্রি-গ্লাস (৩+)’ জেনারেশন শ্রেণিভুক্ত। এ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে নতুন ‘নিষ্ক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ উদ্ভাবনের মাধ্যমে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপারেটরের সহায়তা ছাড়াই কাজ করতে পারে, এমনকি পুরোপুরি বিদ্যুৎ সংযাগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ ধরনের ভারী যন্ত্র স্থানান্তর ও পরিবহনের কাজ জটিল প্রক্রিয়াসম্পন্ন। চুল্লি পাত্রটির ওজন ৩৩৩ দশমিক ৬ টন এবং স্টিম জেনারেটর ওজন ৩৪০ টন। আলাদাভাবে চুল্লিপাত্র ও স্টিম জেনারেটর বিশেষ স্বয়ংক্রিয় যানে করে ভোলগোদোনস্কে সিমলিয়ান্সক জলাধারের একটি জেটিতে পাঠানো হয়। সেখান থেকে এগুলো নভোরোসিয়েস্কে পৌঁছাবে, এরপর সেখান থেকে কৃষ্ণসাগর ও সুয়েজ ক্যানেল হয়ে বাংলাদেশের (রূপপুর) বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছাবে।
রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দু’টি ইউনিটের জন্য জেএসসি অটোমেনারগোম্যাশ ১৪ ধরনের সরঞ্জাম প্রস্তুত করবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে। চুল্লিপাত্র, স্টিম জেনারেটর যন্ত্রাংশ, প্রধান সঞ্চালন পাইপলাইন, প্রধান সঞ্চালন পাম্প, চাপ কমানোর যন্ত্র, জরুরি শীতলকরণ ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এছাড়াও টারবাইন হলের জন্য উচ্চচাপ তৈরির হিটার (হাই প্রেসার হিটার), ভ্যাকিউম, কনডেনসেট ও ফিড পাম্প ও টারবাইন ইউনিট পুনরায় গরম করার যন্ত্র প্রস্তুত করবে জেএসসি অটোমেনারগোম্যাশ। ২০১৮ খেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১৩ হাজার টনের ওপর বিভিন্ন অদ্বিতীয় যন্ত্রপাতি তৈরি ও সরবরাহ করবে জেএসসি অটোমেনারগোম্যাশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২০
এসকে/এএ