যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি কমিউনিটির সব চোখ ছিল এ নির্বাচনের প্রতি। কারা আসছে ঐতিহাসিক বাংলাদেশ সেন্টারের পরিচালনায়।
বাংলাদেশ সেন্টারের ‘কাউন্সিল অব ম্যানেজমেন্ট কমিটির’ মোট ৩৫টি পদের মধ্যে ১৮টিতে জিতেছেন রেড অ্যালায়েন্সের প্রার্থীরা। আর প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রিন অ্যালায়েন্সের প্রার্থীরা জিতেছেন ১৭টি পদে। এর মধ্যদিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পেলেন দেলোয়ার হোসেন। পদাধিকার বলে বাংলাদেশ সেন্টারের সভাপতি যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম।
গত ২৬ নভেম্বর রোববার পূর্ব লন্ডনের ইম্প্রেশন ইভেন্ট ভেন্যুতে বাংলাদেশ সেন্টারের দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল বাংলাদেশ সেন্টারের প্রথম কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সহেযোগী ঐতিহাসিক এই সেন্টারের নির্বাচনকে ঘিরে স্বাভাবিক কারণেই কমিউনিটিতে আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মত। গত বেশ কয়েক সপ্তাহ যাবত প্রচার-প্রচারণা ও নানা তৎপরতায় এই নির্বাচন ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। যে কারণে বাংলাদেশ সেন্টারের সদস্য ছাড়াও কমিউনিটির বিভিন্ন স্তরের মানুষ ছুটে গিয়েছিলেন নির্বাচনস্থলে। রাত ১২টা নাগাদ যখন ফলাফল ঘোষণা হচ্ছিল, তখনো হলভর্তি শত শত মানুষ।
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত চলে এজিএম। আর বিকেল ৪টা থেকে ৮টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। এজিএমে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সেন্টারের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মুহিবুর রহমান। সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।
এ সময় বাংলাদেশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার হযরত আলী খান ও মিনিস্টার কন্স্যুলেট দেওয়ান মাহমুদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
হাফিজ নাজিম উদ্দিনের পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের পর জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় সাধারণ সভা। সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ও আর্থিক হিসাবের প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায়ী চিফ ট্রেজারার মামুন রশীদ। এসব প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন সেন্টারের প্রধান উপদেষ্টা নবাব উদ্দিন, নুরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান কাজী ওবিই, শহিদুর রহমান ও আব্দুল আহাদসহ অন্যান্যরা।
সভায় সর্বসম্মতিতে সাধারণ সম্পাদক ও ট্রেজারারের প্রতিবেদন অনুমোদন পায়। বাংলাদেশ সেন্টারের নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন আজিজ চৌধুরী। অপর দুই কমিশনার কাউন্সিলার শেরওয়ান চৌধুরী ও কাউন্সিলার আব্দাল উল্লাহ।
নির্বাচন শুরুর পূর্বে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার ও বাংলাদেশ সেন্টারের সভাপতি সাইদা মুনা তাসনীম। বাংলাদেশ সেন্টারের ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে লাইফ অ্যান্ড জেনারেল মেম্বারদের থেকে ১৭ জন এবং পার্মানেন্ট মেম্বারদের থেকে ১৮ জন নির্বাচিত হন। রেড প্যানেল লাইফ মেম্বারদের ১৭টি পদের সবকটিতে বিজয়ী হয়। পাশাপাশি তারা পার্মানেন্ট মেম্বারদের একটি পদে বিজয়ী হয়। অপরদিকে গ্রিন প্যানেল পার্মানেন্ট মেম্বারদের ১৭টি পদে জিতলেও লাইফ অ্যান্ড জেনারেল মেম্বারদের কোনো পদে বিজয়ী হতে পারেনি। ফলে সর্বমোট ১৮টি পদে বিজয়ী হয়ে কাউন্সিল অব ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে রেড অ্যালায়েন্স।
লাইফ অ্যান্ড জেনারেল মেম্বারের ১৭টি পদে বিজয়ীরা হলেন— গুলনাহার খান, মামুন রশীদ, দেলোয়ার হোসেন, মাহবুব আহমেদ, আলী আহমেদ বেবুল, শাহেদ আহমেদ, এনায়েত খান, জাহিদুর রহমান, শিব্বির আহমেদ, আমিনুল হক জিলু, আব্দুল হান্নান, আনোয়ার আলী, মো. ময়নুল হক, মো. সাদ চৌধুরী, মোহাম্মদ সুহেল, ফখরুল আম্বিয়া ও শামীম আহমেদ। এরা সবাই রেড অ্যালায়েন্সের প্রার্থী।
অন্যদিকে পার্মানেন্ট মেম্বার পদে বিজয়ীরা হলেন—গ্রিন অ্যালায়েন্সের মোহাম্মদ মোস্তফা আলী, কবির উদ্দিন, মনজ্জির আলী, মোহাম্মদ মুহিবুর রহমান মুহিব, একেএম আব্দুল্লাহ, জবরুল ইসলাম, নাসিম আহমেদ, আব্দুল হাফিজ, এ কে শহিদুর রহমান, মোহাম্মদ ফয়জুল হক, হাবিবুর রহমান, দুলাল উদ্দিন রায়হান, জাহাঙ্গির খান, মোহাম্মদ ইসবাহ উদ্দিন, আহসানুল হক, আব্দুল কালাম আজাদ ছুটন, মোহাম্মদ শামীম আহমদ এবং রেড অ্যালায়েন্সের তফজ্জুল মিয়া।
ফলাফলকে স্বাগত জানিয়ে রেড অ্যালায়েন্সের পক্ষে বক্তব্য রাখেন দেলোয়ার হোসেন। আর গ্রিন অ্যালায়েন্সের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ মুহিবুর রহমান মুহিব।
ফলাফল ঘোষণার পরপরই নবনির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে ইম্প্রেশন ইভেন্ট ভেন্যুতে তাৎক্ষণিক এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। মুহিবুর রহমান মুহিবের সভাপতিত্বে এবং দেলোয়ার হোসেনের পরিচালনায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কাউন্সিল অব ম্যানেজমেন্ট কমিটির নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেলোয়ার হোসেনের নাম প্রস্তাব করেন বিদায়ী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আহমদ রাজু। সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে দেলোয়ার হোসেনকে ম্যানেজমেন্ট কমিটির নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
বাংলাদেশ সেন্টারের মোট সদস্য সংখ্যা ৪৮৪ জন। এর মধ্যে পার্মানেন্ট মেম্বার ১১১ জন। লাইফ অ্যান্ড জেনারেল মেম্বার ৩৭৩ জন। এই নির্বাচনে ৯৪ জন পার্মানেন্ট মেম্বার এবং ৩১৬ জন লাইফ অ্যান্ড জেনারেল মেম্বার ভোট দেন। লাইফ অ্যান্ড জেনারেল মেম্বারদের দুটি ভোট বাতিল হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২৩
এইচএ/