ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

বোতল কুড়িয়ে মাসে লাখ টাকা!

মাহমুদ মনি, (ডর্টমুন্ড) জার্মানি থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৪ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৫
বোতল কুড়িয়ে মাসে লাখ টাকা! ছবি: মাহমুদ মনি

জার্মানি: লেখাটার শিরোনাম দেখে কিছুটা আশ্চর্য আপনি হতেই পারেন। কিন্তু শিশি-বোতল কুড়িয়ে সত্যিই মাসে লাখ টাকা কামাই করা সম্ভব জার্মানিতে।



জার্মানিবাসের কিছুদিনের মধ্যেই বিষয়টি আমার কাছে বেশ অভিনব মনে হয়। এমনটি পৃথিবীর আর কোথাও আছে কি-না জানা নেই। তবে থাকাটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে সুন্দর একটি ফিচারাইজড সংবাদ করা যেতো। কিন্তু তার চেয়ে বরং আমাদের দেশের নীতি-নির্ধারকদের একটি ‘মেসেজ’ দেওয়াই এ লেখার উদ্দেশ্য। মেসেজে পরে আসছি। আসুন জেনে নিই, বোতল কুড়িয়ে কীভাবে লাখ টাকা আয় করা সম্ভব!

পরিবেশ দূষণরোধে জার্মানিতে ২০০৩ সালে সরকার বিশেষ এক ব্যবস্থা চালু করে। এটির নাম দেওয়া হয় ফান্ডসিস্টেম (fundsystem)। প্লাস্টিক বা কাঁচের খালি শিশি-বোতল ফেরত দিলে ৮ সেন্ট (স্থানীয় পয়সা, ১০০ সেন্ট= এক ইউরো) থেকে ২৫ সেন্ট পর্যন্ত ফেরত পাওয়া যায়। কাঁচের বোতলের জন্য ৮ সেন্ট, শক্ত প্লাস্টিক বোতলের জন্য ১৫ সেন্ট আর অপেক্ষাকৃত নরম বোতলের জন্য মেলে ২৫ সেন্ট। মূলত তরল কোনো পানীয় কেনার সময়ই ওই বাড়তি পয়সা ক্রেতার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়। খালি বোতল ফেরত দিলে সে পয়সা আবার ফেরত দেওয়া হয়।

প্রায় একযুগ ধরে এ ব্যবস্থাটি বেশ ভালোভাবেই চলছে জার্মানিতে। বড় প্রায় সব সুপার মার্কেটেই এই ফান্ডসিস্টেমের মেশিন রয়েছে। সেসব মেশিনে শিশি-বোতল ঢুকিয়ে দিলেই একটি রশিদ মেলে। আর তা নির্দিষ্ট কাউন্টারে জমা দিলে নগদ ইউরো প্রাপ্তি কিংবা সমপরিমাণ মুদ্রার বাজার করা সম্ভব। এ বিষয়ে ইংরেজিতে আরও জানতে ঢুঁ মারতে পারেন https://allmedialink.com/german-pfandsystem অথবা জার্মান ভাষায় জানতে http://de.wikipedia.org/wiki/Pfandsystem।

এই ফান্ডসিস্টেমের কারণে জার্মানির রাস্তাঘাটে আপনি শিশি-বোতল পাবেন খুব কমই। জার্মানরা এমননিতেই পরিবেশ-সচেতন জাতি। তার ওপর শিশি-বোতল ফেরত দিলে যদি নির্দিষ্ট অঙ্কের পয়সা মেলে, তখন কে আর তা রাস্তায় ফেলতে চায়!

তবে হ্যাঁ, সাধারণত চলতি পথে, বাসে-ট্রেনে-ট্রামে যাত্রীরা পানশেষে একটা-দু’টা শিশি-বোতল আর সঙ্গে করে নেয় না। সেই সঙ্গে বেখেয়ালি তরুণ-তরুণীরাও ততটা গায়ে লাগায় না বিষয়টা। বিশেষ করে, সাপ্তাহিক ছুটিতে যখন খুব আমোদ-ফুর্তিতে থাকে তখন তো না-ই। ২৫ সেন্টের মায়া তাদের কিছুটা কমই। আর তা লুফে নেন স্বল্প আয়ের মানুষজন। বিশেষ করে সংখ্যায় দ্বিতীয় বৃহত্তম কমিউনিটি তার্কিশ লোকজনসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষদের একটা অংশ এই বোতলের সন্ধানে থাকেন। তাদের অনেকে বেশ ভালোই আয়ও করেন। কারও আয় মাসে বাংলাদেশি মুদ্রায় লাখও হয়! দিনপ্রতি ৬-৭ ঘণ্টা মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে ১৩০-১৪০ টা বোতল কুড়ানো সম্ভব। আর প্রতিটা ২৫ সেন্ট করে হলে মাসে ২৫-২৬ দিন কাজ করলে আয় লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়!

এ বিষয়ে জোস্ট শহরের বাসিন্দা তুরস্কের নাগরিক জেকেরিয়া হুসেন বলেন, প্রতিদিন ১৪০টা বোতল কুড়ানো একটু কঠিনই বটে। তবে অসম্ভব নয়। আমি ভালোভাবে কাজ করলে মাসে এক হাজার ইউরোর বেশি আয় করতে পারি। বেশি আয় হয় কোনো পালা-পার্বণের সময়।

জার্মান পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতে, এই পদ্ধতি অবলম্বনে বছরে অন্তত আড়াই বিলিয়ন শিশি-বোতল পরিবেশে মিশে যাওয়া রোধ হয়েছে জার্মানিতে। এই পদ্ধতি চালুর ফলে জার্মান-পরিবেশ আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিষ্কার-পরিছন্ন রয়েছে বলে মনে করেন দেশটির নাগরিকরা।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে আসা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ইভন কখ্ এ প্রসঙ্গে বলেন, ফান্ডসিস্টেম সত্যিই একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ। এ পদ্ধতি চালুর ফলে যেমনি পরিবেশ দূষণ রোধ হয়েছে, তেমনি স্বল্প আয়ের কিছু মানুষের জন্য কিছুটা হলেও আয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার যে অবস্থা তাতে সেখানে দ্রুত এ ব্যবস্থা চালু করা উচিত।

ফিরে আসি, এ লেখার মূল উদ্দেশ্যে। বাংলাদেশে পলিথিন নিষিদ্ধ হয়েছে বেশ অনেকদিন হলো। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কি পলিথিন ব্যবহার বন্ধ হয়েছে? সরকারি হিসেবে কিংবা খাতা-কলমে বন্ধ হলেও বাস্তবতা আমি-আপনি সবাই জানি। পলিথিন তো বন্ধ হয়ই নি, যেখানে-সেখানে পলিথিন ছুঁড়ে মারাও বন্ধ হয়নি। সেই সঙ্গে প্লাস্টিক বোতল তো রয়েছেই। ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতারও অন্যতম কারণ এই পলিথিন বা বোতল। হলফ করে বলতে পারি, ২০টি পলিথিন কিংবা ১০টা বোতলের জন্য যদি দুই টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা থাকে, তাহলে পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে কমে আসবে। ঢাকাবাসী তখন পলিথিন কিংবা শিশি-বোতল আর সহজেই যেখানে-সেখানে ছুঁড়ে মারবেন না।

লেখক: জার্মানিপ্রবাসী সাংবাদিক
ইমেইল- press.moni@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩১ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৫
এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।