ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

অভিবাসীদের কাছে প্রশংসনীয় পর্তুগালের স্বাস্থ্যসেবা

সমীর দেবনাথ, পর্তুগাল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২২
অভিবাসীদের কাছে প্রশংসনীয় পর্তুগালের স্বাস্থ্যসেবা

মহামারিতে পর্তুগালে অভিবাসন প্রত্যাশী (অনিয়মিত) দুই লাখ ৪৭ হাজার অভিবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে ভূয়সী প্রশংসার এক অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পর্তুগিজ সরকার। রীতিমতো সরকারের প্রত্যেকটি সেবার ক্ষেত্রে এক গতিশীল প্রতিযোগিতাও দেখা গেছে।

সরকারের এসব সেবা দেওয়ার গৃহীত পদক্ষেপগুলো দেশটির সম্মানও বয়ে এনেছেন।

এর মধ্যে বিশেষভাবে প্রশংসনীয় পর্তুগালের স্বাস্থ্যসেবা।

২০২০ সালের মার্চ মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে যখন মহামারি করোনার প্রথম রোগী শনাক্ত করা হয়, ঠিক তার পরের সপ্তাহ থেকেই পর্তুগাল সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের নিরাপদ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি সামনে ওঠে। এর মধ্যে অভিবাসীদের সেবা দিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রশংসা কুড়িছে পর্তুগালের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্তুগালে  পাড়ি জমানো অভিবাসন প্রত্যাশীদের সহজশর্তে নাগরিকত্ব দেওয়াসহ বিশেষ কারণে সম্প্রতি পর্তুগাল বিশ্ব দরবারে আলোচনার তুঙ্গে।

যদিও প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার এক থেকে দেড় মাস আগে দেশটিতে জনসাধারণের জন্য কোভিড-১৯ সম্পর্কিত গণসচেতনতা বাড়াতে প্রচার-প্রসার শুরু করে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলো হলো- জনসম্মুখে চলাচলের ক্ষেত্রে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা, নিরাপদ দূরত্বে অবস্থানসহ জনসমাগম না করা ও প্রাথমিক লক্ষণগুলো তুলে ধরা।

পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে থাকলে প্রথমেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে শপিংমল, রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। করোনা আরও মারাত্মক রূপ ধারণ করতে থাকলে সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির রাষ্ট্রপতি মার্সেলো ‘স্টেট অব ইমারজেন্সি’ ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় নির্দিষ্ট করে কিছু এলাকাকে অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়। সংখ্যায় বেশি বসবাসকারী জনসংখ্যার শহর ও দেশটির রাজধানী লিসবন ও বন্দর নগরী পোর্তোয় দেশটিতে করোনা মহামারি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।

এতে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রণয়ন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পরামর্শ দেন।

দেশটিতে বর্তমানে মোট জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি দুই লাখ ২৮ হাজার। এর মধ্যে স্থানীয়দের পাশাপাশি বসবাস করেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নিয়মিত অভিবাসী (দেশটিতে অভিবাসন প্রাপ্ত) ও অনিয়মিত অভিবাসী (অভিবাসন প্রত্যাশী)। তাই স্থানীয় জনসংখ্যার তুলনায় দেশটিতে বসবাসরত অভিবাসীদের সংখ্যাও কম নয়।

জানা গেছে, অভিবাসীদের জন্য দেশটির সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে প্রধান দুটো হলো- সহজশর্তে অভিবাসন (রেসিডেন্স) ও নাগরিকত্ব (সিটিজেনশিপ) দেওয়া। তাই অর্থনীতিতে দুর্বল ইউরোপের দেশগুলো ছাড়াও অন্যান্য মহাদেশ যেমন- এশিয়া ও আফ্রিকার লাখ লাখ মানুষ মান উন্নত করার লক্ষ্যে পর্তুগালে জড়ো হন।

স্থানীয় ও নাগরিকত্বপ্রাপ্ত অভিবাসীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এজন্য অভিবাসীদের দেশটির ‘জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা থেকে একটি জাতীয় সেবা নম্বর নিতে হয়। এছাড়া দেশটির সামাজিক নিরাপত্তা সংস্থা থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বাস্থ্য কার্ডও নিতে হয়।

অভিবাসীদের মধ্যে যারা নিয়মিত হয়েছেন অর্থাৎ রেসিডেন্স কার্ড পেয়েছেন একমাত্র তারাই এসএনএস নম্বর বা জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা নম্বরটি ও ইউরোপিয়ান স্বাস্থ্য কার্ডটি নিতে পারেন। দেশটিতে থাকা দুই লাখ ৪৭ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী (আবেদনকারী) যারা নিয়মিত বা রেসিডেন্স কার্ডটি পাওয়ার জন্য দেশটির ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টে ইতোমধ্যে আবেদন করে অ্যাকসেপ্ট ইমেইল (ফিরতি মেইল) পেয়েছেন কিংবা বায়োমেট্রিক তথা ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার জন্য অপেক্ষমান ছিলেন তাদেরই এ কার্ড দেওয়া হয়।

মহামারির এ সময়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ চেয়ে পর্তুগিজ ভাষাভাষী ব্রাজিলীয়ান, আঙ্গোলীয়দের একটি বড় কমিউনিটি ফোরাম দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করেন। পরবর্তীতে অন্যান্য প্রায় সব দেশের অভিবাসী প্রত্যাশীরা এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে দাবি আদায়ে কাজ করে যান।

ফলে পর্তুগিজ সরকারের চোখ পড়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের এই  আন্দোলনের দিকে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য অভিবাসীদের আশ্বাস দেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা।

এই আন্দোলনের দুই সপ্তাহের মধ্যেই পর্তুগিজ সরকার ঘোষণা দেন দুই লাখ ৪৭ হাজার অভিবাসীপ্রত্যাশীদের (আবেদনকারীকে) দেশটির ইমিগ্রেশন থেকে সার্টিফিকেটপূর্বক অস্থায়ী নিয়মিত ঘোষণা করেন। এর ফলে আবেদনকারীরা ইমিগ্রেশন পোর্টালে প্রবেশ করে তাদের ‘‘SEF Certificate’’ ডাউনলোড করে পরবর্তীতে ‘‘SNS’’ বা জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থায় তাদের স্বাস্থ্যসেবা নম্বরটি পাওয়ার জন্য এলাকাভিত্তিক ইমেইলে আবেদন করা শুরু করেন।

যার মধ্যে উল্লিখিত কাগজপত্র ছিলো- ‘SEF Certificate, NIF, NISS, Junta, Passport information Page, Mobile Number’’। আবেদন করার পরের সপ্তাহ থেকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা থেকে আবেদনকারীদের ‘‘SNS Number’’ দেওয়া হয়। সেই নম্বরটি ব্যবহার করে পরবর্তীতে মহামারি কোভিড-১৯ চলাকালীন অনিয়মিত অভিবাসীদের বিনামূল্যে করোনা স্টেট ও সাধারণ চিকিৎসাসেবা দেয়।

এছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা সংস্থা বা ‘‘Seguranca Social’’ অফিসে শুধুমাত্র মাসিক বেতনের ট্যাক্স পরিশোধ ইউনিয়নের স্বাস্থ্য কার্ডের জন্য আবেদনের সুযোগও করে দেয়। এতে অভিবাসীদের কাছে দেশটির স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ প্রশংসায় ভাসছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২২
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।