ইতালিতে ‘পাসপোর্টের বয়স সংশোধন’ দাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে ভাঙচুর চালিয়েছে দেশটিতে বসবাসরত কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি। এ ঘটনায় দু’জনকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয় দেশটির পুলিশ।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সকালে দেশটির রাজধানী রোমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে কয়েকশ’ প্রবাসী বাংলাদেশি পাসপোর্টের বয়স সংশোধনের দাবিতে মানববন্ধন করেন। পরে তাদের মধ্য থেকে কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি উত্তেজিত হয়ে দূতাবাসে ভাঙচুর চালায়।
পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে দূতাবাস থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হলে পুলিশ দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দু’জন বাংলাদেশিকে আটক করে। যদিও পরে দূতাবাস ও স্থানীয় বাঙালি কমিউনিটির অনুরোধে আটক ওই দুই বাংলাদেশিকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। জানা গেছে, ইতালিসহ ইউরোপে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি পাসপোর্টের বয়সসহ নানা ধরনের তথ্য পরিবর্তনের জটিলতায় ভুগছেন।
এ বিষয়ে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান সাংবাদিকদের বলেন, আজকের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনা আমি আমাদের দেশি নাগরিকদের থেকে আশা করিনি। এ হামলার পেছনে কারো উস্কানি আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এছাড়া দূতাবাসের বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে, দূতাবাসে হামলার সময় ধারণকৃত ভিডিওর মাধ্যমে হামলাকারীদের শনাক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।
পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া একটি প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করে একটি স্মারকলিপি দেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তবে প্রবাসীরা কেন তাদের পাসপোর্টের বয়স সংশোধন করতে চান এ বিষয়ে দেশটিতে বসবাস করা কয়েকজন অভিবাসন বিষয়ে অভিজ্ঞরা নাম প্রকাশের শর্তে জানান, বিভিন্ন সময়ে লিবিয়া ও অন্যান্য পথে দেশটিতে অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী প্রবেশ করে। পরে স্থানীয় আইন অনুযায়ী বয়স কমিয়ে অর্থাৎ ইতালিতে কেউ যদি তার বয়স ১৮ এর কম প্রমাণ করতে পারে তাহলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি এ দেশে বৈধ হতে পারেন। আর এ সুযোগটা নিতেই অনেক বাংলাদেশি তার আগের পাসপোর্টে দেওয়া আসল বয়স লুকিয়ে ইতালির প্রশাসনের কাছে নিজেদের বয়স ১৮ এর কম দাবি করে। পরে স্থানীয় নিয়ম অনুযায়ী তারা বৈধতা পেলেও পাসপোর্ট হাতে না থাকায় এসব বৈধতার কাগজ আর পাওয়া হয় না। ফলে অনেকেই আবার অবৈধ হয়ে যায়।
এদিকে প্রথম অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে পাসপোর্টে যাদের বয়স পাঁচ বছরের কম তাদের পাসপোর্টের বয়স সংশোধন করা গেলেও গত ২৮ এপ্রিল থেকে সব ধরনের বয়স সংশোধন বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান বলেন, কোনো দেশের দূতাবাস কখনো কারো পাসপোর্ট প্রিন্ট করে না। আমরা শুধুমাত্র নির্ধারিত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঢাকার মেইন পাসপোর্ট অফিসে পাঠাই। পরে সেখান থেকে পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়ে আমাদের কাছে এলে আমরা তা বিতরণ করে থাকি। সুতরাং বাংলাদেশ পাসপোর্ট অফিস সরকারের নিয়মের বাইরে চলতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, আমি এ বিষয়টি ইতোমধ্যে উপর মহলকে জানিয়েছি। আমাদের এখন শুধুমাত্র তাদের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকতে হবে। কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের নির্দেশ দেয় তাহলেই শুধুমাত্র আমরা এ সংশোধনের আবেদনপত্র জমা নিতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
আরবি