আজ ৩য় তারাবি অনুষ্ঠিত হবে। আজকের খতমে তারাবিতেও দেড় পাড়া তেলাওয়াত করা হবে।
সূরা আল ইমরানের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
৯২নং আয়াতে নেককার হওয়ার জন্য নিজের প্রিয়বস্তুকে আল্লাহর পথে দান করতে বলা হয়েছে।
১০০নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি অমুসলিমদের অনুসরণ কর তবে তারা তোমাদেরও অমুসলিম বানিয়ে ছাড়বে। ১০২নং আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহকে পরিপূর্ণ রূপে ভয় কর করতে। মৃত্যুর আগে আল্লাহর বিধানের সামনে পরিপূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করতে।
১০৩নং আয়াতে আদেশ করা হয়েছে, কোরআনের বিধানগুলোকে সুদৃঢ়ভাবে মেনে চলতে। ১০৪নং আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, মুসলিমদের থেকে কিছু মানুষ এমন থাকতে হবে যারা সর্বসাধারণকে নেক আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে এবং গুনাহর কাজের প্রতি নিরুৎসাহিত করবে।
১১০নং আয়াতে মুসলিমদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি বলা হয়েছে। তাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা বিশ্ববাসীকে নেক আমলের দাওয়াত দিবে এবং গুনাহর কাজ থেকে বিরত রাখবে।
১১৮-১২০নং আয়াতে অমুসলিমদের অন্তরঙ্গ বন্ধু বানাতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তোমাদের কষ্ট দেখলে তারা উল্লসিত হয় এবং তোমাদের সুখ দেখলে তারা মনে জ্বালা অনুভব করে। তোমরা যদি অমুসলিমদের পরোয়া না করে ধৈর্য ধর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে তাদের কোনো ষড়যন্ত্র তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।
১২১নং আয়াত থেকে ঐতিহাসিক উহুদ যুদ্ধের আলোচনা শুরু হয়েছে। ১২৩নং আয়াতে বদর যুদ্ধে আল্লাহর প্রেরিত সাহায্যের কথা উল্লেখ করে উহুদ যুদ্ধে মুমিনদের মনে সাহস জোগানো হয়েছে।
১৩০নং আয়াতে সুদ হারাম করা হয়েছে। ১৩২নং আয়াতে কোরআনের পাশাপাশি হাদিস অনুসরণেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
১৩৪নং আয়াতে মুত্তাকিদের কয়েকটি গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। ওইসব গুণাবলী হলো- তারা চরম অভাবে থেকেও আল্লাহর পথে দান করে, আবার আর্থিক স্বচ্ছলতায় থেকেও আল্লাহর পথে দান করে, তারা রাগ হজম করে, তারা মানুষকে মাফ করে, কোনো গুনাহ করলে আল্লাহর জিকির করে- অতপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
১৩৭-১৬৮নং আয়াতে উহুদ যুদ্ধে মুমিনদের বিপর্যয়ের কারণ পর্যালোচনা করে ভুলের জন্য মুমিনদের ভর্ৎসনা করা হয়েছে আবার সান্তনাও দেয়া হয়েছে।
১৮৮নং আয়াতে ইহুদিদের দু’টি মন্দ স্বভাবের নিন্দা করা হয়েছে। স্বভাব দু’টো হলো- তারা গুনাহর কাজের ওপর আনন্দ প্রকাশ করে। আর যে ভালো কাজ তারা করেনি সে কাজের ওপর তারা প্রশংসা কামনা করে।
১৯৬-১৯৮নং আয়াতে বিশ্বব্যপী কাফেরদের আধিপত্য দেখে মুমিনদের আশাহত হতে ও বিভ্রান্ত হতে সতর্ক করা হয়েছে। তাদের এ কর্তৃত্ব ক্ষণিকের কিন্তু চিরস্থায়ী জান্নাত একমাত্র মুমিনদের- এটা উল্লেখ করে এ সূরা শেষ হয়েছে।
সূরা আন নিসা
সূরা আন নিসা একটি মাদানি সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ১৭৭টি। আজ খততে তারাবিতে তেলাওয়াত করা হবে এ সূরার শুরু থেকে ৮৭নং আয়াত পর্যন্ত।
সূরা আন নিসার উল্লেখযোগ্য বিষয়াবলী হলো-
২নং আয়াতে এতিমদের ব্যপারে কয়েকটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতিমদের সম্পদ ভোগ-দখল না করে তা তাদের দিয়ে দিতে বলা হয়েছে। এতিমদের ভালো মালের সঙ্গে মন্দ মালের পরিবর্তন করতে নিষেধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, কোনো এতিমের অভিভাবক যেন নিজের মালের সঙ্গে এতিমের কোনো মাল না মিশায়। অর্থাৎ সর্বোতভাবে এতিমের সম্পদ থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।
৩নং আয়াতে পুরুষদের জন্য চার জন স্ত্রী রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে তার জন্য কঠিনভাবে শর্তারোপ করা হয়েছে, সব স্ত্রীর মাঝে ভরণ-পোষণ ও রাত যাপনে সমতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার। যদি কারো ব্যপারে শর্ত লংঘনের সম্ভাবনা থাকে তবে তাকে এক স্ত্রী নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে বলা হয়েছে।
৪নং আয়াতে খুশি মনে স্ত্রীর মহর (দেনমোহর) পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মহর ইসলামের একটি স্বতন্ত্র একটি বিধান। মহর স্ত্রীর অধিকার। এ অধিকার নির্ধারণ করে দিয়েছিন স্বয়ং আল্লাহতায়ালা। সুতরাং মহর নিয়ে কোনো ধরনের টালবাহানা কাম্য নয়।
১০নং আয়াতে আছে যারা জুলুম করে এতিমের সম্পদ ভোগ করছে তারা নিজেদের পেটের ভিতর আগুন ভরছে। ১১-১২নং আয়াতে মৃতের সম্পদে বিভিন্ন শ্রেণির আপন জনের (ওয়ারিস) অংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
সন্তানের অংশ
সন্তান যদি শুধু এক মেয়ে থাকে তবে সে অর্ধেক পাবে। যদি শুধু দুই বা ততোধিক মেয়ে থাকে তবে তারা সবাই মিলে দুই তৃতীয়াংশ পাবে। যদি ছেলে-মেয়ে উভয় থাকে তবে প্রত্যেক ছেলে পাবে প্রত্যেক মেয়ের দ্বিগুণ।
পিতা-মাতার অংশ
মৃতের সন্তান না থাকলে পিতা-মাতার প্রত্যেকে এক ষষ্ঠাংশ করে পাবে। মৃতের সন্তান থাকলে দু’রকম অবস্থা হবে। মৃতের ভাই-বোন না থাকলে মা পাবে এক তৃতীয়াংশ। আর ভাই-বোন থাকলে মা পাবে এক ষষ্ঠাংশ।
স্বামীর অংশ
যদি মৃত মহিলার সন্তান না থাকে তবে স্বামী অর্ধেক পাবে। আর যদি মৃত মহিলার (গর্ভজাত যে কোন স্বামীর ঔরসে) সন্তান থাকে তবে স্বামী এক চতুর্থাংশ পাবে।
স্ত্রীর অংশ
যদি মৃত পুরুষের সন্তান না থাকে তবে স্ত্রী এক চতুর্থাংশ পাবে। আর যদি মৃত পুরুষের (ঔরসে যে কোনো স্ত্রীর গর্ভে) সন্তান থাকে তবে স্ত্রী এক অষ্টমাংশ পাবে।
বৈ-পিত্রেয় ভাই-বোনের অংশ
যদি মৃত নর-নারীর বাপ-দাদা বা সন্তান-সন্তুতি না থাকে তবে সহমাতৃজাত ভাই-বোন যে কোনো একজন থাকলে এক ষষ্ঠাংশ পাবে। আর একাধিক থাকলে সবাই মিলে এক তৃতীয়াংশ পাবে।
১৩-১৪নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর কৃত ভাগ-বাটোয়ারা মানবে; তিনি তাকে জান্নাত দান করবেন। আর যে ব্যক্তি তা মানবে না- তিনি তাকে চিরকালের জন্য জাহান্নামে রাখবেন।
১৯নং আয়াতে বলপূর্বক নারীর সহায়-সম্পদের মালিকানা লাভকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর তিনটি ধরণ হতে পারে। যথা-
ক. বিধবা নারীকে স্বামীর সম্পদের ভাগ না দেয়া,
খ. মৃত স্বামীর সম্পদের ভাগ দেয়ার পর বিধবাকে নিজের পছন্দ মতো অন্যত্র বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে না দেয়া ও
গ. স্ত্রীকে ভালো না লাগলে তার ওপর নির্যাতন করা। যেন সে স্বেচ্ছায় সম্পদের বিনিময়ে তালাক গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়।
২০নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা পুরুষকে নির্দেশ দিয়েছেন, স্ত্রীর সঙ্গে ভদ্রতাসুলভ সদাচারণ করতে। অপছন্দনীয় স্ত্রীর ওপর ধৈর্যধারণের পরামর্শ দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তোমার স্ত্রী যদি তোমার কাছে ভালো না লাগে, হতে পারে তুমি এমন কিছু অপছন্দ করছ যার ভিতর আল্লাহতায়ালা তোমার কোনো কল্যাণ রেখে দিয়েছেন।
২২-২৩নং আয়াতে সে সব নারীদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে; যাদের বিয়ে করা হারাম। পরের আয়াতে উল্লেখিত নারীদের বাইরে অন্য যে কোনো নারীকে মহর প্রদানের শর্তে বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
২৯নং আয়াতে অপরের সম্পদ জবরদখল করতে বা কাউকে হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। ৩১নং আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে, তোমরা যদি কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাক তবে আমি তোমাদের সগীরা গুনাহগুলো মাফ করে দিব।
৩৪-৩৫নং আয়াতে দাম্পত্য জীবনের শৃঙ্খলা বিধানকল্পে কয়েকটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেগুলো হলো-
আল্লাহতায়ালা সংসারের প্রধান পদে স্বামীকে নিযুক্ত করেছেন। সংসার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন পুরুষকে। স্ত্রীকে স্বামীর দায়িত্বে অর্পণ করেছেন। বলা হয়েছে, স্ত্রীর সকল খরচ স্বামীকে বহন করতে হবে। আর স্ত্রীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে স্বামীর আনুগত্য করার এবং নিজের সতীত্বর হেফজত করার।
কোনো স্বামী যদি দায়িত্বের ব্যপারে স্ত্রীর উদাসীনতা ও অবহেলার আশঙ্কা করে তবে প্রথমে স্ত্রীকে মৌখিকভাবে বুঝানোর চেষ্টা করবে। তাতে কাজ না হলে স্ত্রীর বিছানা আলাদা করে দিবে। তাতেও কাজ না হলে সামান্য প্রহার করার কথা বলা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, আল্লাহর নবী (সা.) কোনো স্ত্রীর গায়ে কখনো হাত তোলেননি। তাই প্রহার থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। তবে প্রহার করলেও স্ত্রীর চেহারায় আঘাত করা যাবে না। এমন মার দেয়া যাবে না, যাতে দেহে মারের দাগ পড়ে বা কোনো অঙ্গ নষ্ট হয়ে যায়।
স্বামী-স্ত্রীর এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে পরিবার ও সমাজের মুরুব্বিদের আদেশ দেয়া হয়েছে, কোনো স্বামী-স্ত্রীর মাঝে অমিল দেখলে তাদের মিলানোর চেষ্টা করা। প্রয়োজনে উভয় পক্ষ থেকে বিচক্ষণ একজন করে নিয়ে তাদের ওপর মিমাংসার দায়িত্ব দেয়া।
৩৬নং আয়াতে পিতা-মাত, আত্মীয়, এতিম, দুস্থ, প্রতিবেশী, সহযাত্রী, অভিবাসী ও অধীনস্থদের সঙ্গে সদাচারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৪৩নং আয়াতে তায়াম্মুমের বিধান দেয়া হয়েছে। ৭৯-৮১নং আয়াতে হাদিস অনুসরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ৮২নং আয়াতে কোরআন আল্লাহর গ্রন্থ হওয়ার প্রমাণস্বরূপ দাবি করা হয়েছে, যদি এ কোরআন আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো রচনা হতো তবে তাতে বহু বৈসাদৃশ্য থাকত, কিন্তু কোরআনে তা নেই।
৮৪নং আয়াতে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্যে জিহাদের উৎসাহ দেয়া হয়েছে। ৮৫নং আয়াতে সুপারিশ সম্পর্কে বলা হয়েছে। ভালো কাজের সুপারিশ করলে সুপারিশকর্তা সওয়াব পাবে। আর মন্দ কাজের সুপারিশ করলে সুপারিশকর্তার গুনাহ হবে। ৮৬নং আয়াতে সালামের উত্তর সালামের চেয়ে আরো সুন্দরভাবে দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘন্টা, জুন ২০, ২০১৫
এমএ/