ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘তারাবিতে পঠিতব্য আয়াতের তাফসির’

পাপের কারণ হওয়াও পাপ

মুফতি মাহফুযূল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২২ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৫
পাপের কারণ হওয়াও পাপ

আজ অনুষ্ঠিত হবে ৫ম তারাবি। আজ খতমে তারাবিতে তেলাওয়াত করা হবে ৭ম পারা সম্পূর্ণ এবং ৮ম পারার প্রথম অর্ধেক।



আজকে তেলাওয়াত শুরু করা হবে সূরা মায়েদার ৮৩নং আয়াত থেকে। এরপর সূরা মায়েদা ও সূরা আনআম শেষ করে সূরা আরাফের ১১নং আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হবে।

সূরা মায়েদার তেলাওয়াতকৃত অংশের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় হলো-

৮৭নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা হালাল করেছেন তা হারাম করো না।

৮৯নং আয়াতে ইচ্ছাকৃত শপথ ভঙ্গ করলে কাফফারা আদায়ের বিধান প্রদান করা হয়েছে। বিধানে বলা হয়েছে, দশজন দরিদ্রকে মধ্যম মানের খাবার দান করা অথবা পোশাক দান করা অথবা একটি কৃতদাস মুক্ত করা। যে ব্যক্তি উপরোক্ত কোনোটাই করার সঙ্গতি না রাখে; সে যেন তিনদিন রোজা রাখে।

৯০নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, মদ পান করা, জুয়া খেলা, হারাম শরিফ ব্যতীত অন্যকোনো  স্থানের সম্মানে প্রাণী জবাই করা, টস্ করে কোনো কাজের শুভ-অশুভ নির্ণয় করা চরম জঘন্য ব্যপার; এগুলো শয়তানের কাজ। অতএব, তোমরা এগুলো বর্জন করা মুসলামানদের দায়িত্ব।

৯৪-৯৭নং আয়াতে হজের ইহরাম অবস্থায় স্থলের কোনো প্রাণী শিকার করতে নিষেধ করা হয়েছে। কোনো ইহরামকারী যদি কোনো কিছু শিকার করে ফেলে তবে তার কাফফারার বিধান বিস্তারিতভাবে বলে দেয়া হয়েছে।

১০০নং আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে, মন্দের আধিক্য যদিও তোমাকে চমৎকৃত করে তবুও মন্দ আর ভালো সমান নয়।

১১০-১১৭নং আয়াতে হজরত ঈসা (আ.)-এর ওপর আল্লাহর কৃত অনুগ্রহসমূহ আলোচনা করা হয়েছে এবং খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদের বিশ্বাস খন্ডন করা হয়েছে।

সূরা আনআম
সূরা আনআম একটি মাক্কি সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ১৬০টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-

৬নং আয়াতে বলা হয়েছে, আমি তোমাদের পূর্বে অনেক জাতিকে ধ্বংস করেছি; অতএব বিষয়গুলো মনে রেখ!

১১নং আয়াতে বলা হয়েছে, পৃথিবী ভ্রমণ করে দেখ। অস্বীকারকারীরা কিভাবে শাস্তি পেয়েছে।

৩২নং আয়াতে বলা হয়েছে, দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ব্যতীত আর কিছুই না। যারা তাকওয়া অবলম্বন করতে তাদের জন্য পরকালের আবাসই শ্রেয়।

একবার কাফেররা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট দাবি করে যে, আপনার নিকট যে সব দরিদ্র মুসলিম ভিড় করে তাদের সরিয়ে দিলে আমরা আপনার কথা শোনতে পারি। এ প্রেক্ষিতে ৫২নং আয়াত অবতীর্ণ হয়। এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, আপনি তাদের সরাবেন না; যারা প্রভুর সন্তুষ্টি কামনার্থে সকাল-সন্ধ্যা তার জিকির করে।

৭০নং আয়াতে বলা হয়েছে যারা বিচার দিবস নিয়ে খেল-তামাশা করে এবং দুনিয়ার জীবন তাদের প্রতারিত করে রেখেছে আপনি তাদের সঙ্গ বর্জন করুন। কোরআন দিয়ে তাদের উপদেশ দিন।

৭৪-৮২নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে, হজরত ইবরাহিম (আ.) একটি মূর্তিপূজক পরিবারে জন্মগ্রহণ করে এবং একটি মূর্তিপূজক পরিবেশে বড় হয়েও কিভাবে মূর্তি প্রত্যাখ্যান করলেন এবং এক আল্লাহ অভিমুখী হলেন।

৮৪-৮৬নং আয়াতে ১৭জন সম্মানিত নবীর আলোচনা করার পর ৯০নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা শেষ নবীকে বলছেন, আল্লাহ তাদের সৎপথে পরিচালিত করেছেন। অতএব, আপনিও তাদের পথ অনুসরণ করুন। আপনি উম্মতকে বলুন, আমি এর কোনো পারিশ্রমিক তোমাদের কাছে চাই না।

৯৫-৯৯নং আয়াতে প্রকৃতির মাঝে আল্লাহর কুদরতের সুন্দর সুন্দর বিবরণ দিয়ে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করা হয়েছে।

১০৮নং আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা অমুসলিমদের উপাস্যদের গালি দিবে না। তাহলে তারাও আল্লাহকে গালি দিবে।

১১৬নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আপনি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মতো চলেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে।

১২০নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা প্রকাশ্য গুনাহ ও গোপন গুনাহ ছেড়ে দাও।

১৫১-১৫২নং আয়াতে অতি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আদেশ প্রদান করা হয়েছে। সেগুলো হলো- আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, অভাবের কারণে সন্তান হত্যা করবে না, প্রকাশ্যে বা গোপনে গুনাহ করবে না, এতিমের সম্পদের ধারে-কাছেও যাবে না, মাপ সঠিক দিবে, যখন কথা বলবে তখন ন্যায্য বলবে- যদিও সেসব কথা নিজের মানুষের বিরুদ্ধে যায়।

১৬২নং আয়াতে এভাবে একত্ববাদের ঘোষাণা দিতে শেখানো হয়েছে, আমার আরাধনা, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ একমাত্র আল্লাহর জন্য। যিনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক।

সূরা আরাফ
সূরা আরাফ একটি মাক্কি সূরা। এর মোট আয়াত ২০৬টি। আজকের তারাবিতে তেলাওয়াত করা হবে সূরার শুরু থেকে ১১নং আয়াত পর্যন্ত। আজকের তারাবিতে তেলাওয়াতকৃত আয়াতাংশের উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো-

৩নং আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে শুধু তাই মানতে হবে। আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে মানা যাবে না।

৮-৯নং আয়াতে মহান আল্লাহর সামনে পরকালে আমল মাপার দৃশ্য আলোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যার নেক আমল ভারি হবে তাকে জান্নাত প্রদান করা হবে। আর যার নেক আমল হাল্কা হবে তাকে জাহান্নামে পাঠানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘন্টা, জুন ২২, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।