আজ অনুষ্ঠিত হবে ৬ষ্ঠ তারাবি। আজকের তারাবি তেলাওয়াত করা হবে ৮ম পারার শেষ অর্ধেক এবং ৯ম পারা সম্পূর্ণ।
আজকের তারাবিতে পঠিতব্য কোরআনে কারিমের উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ হলো-
১১-২৫নং আয়াতসমূহে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে, শয়তান কীভাবে শয়তান হলো এবং প্রথম মানব ও নবী হজরত আদম (আ.) কেন জান্নাত থেকে দুনিয়ায় আসলেন।
৪৪-৫১নং আয়াতে কিয়ামতের একটি দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। বর্ণিত দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে, জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশের পর কিছু সময়ের জন্য এক দল সরাসরি অপর দলকে দেখার সুযোগ পাবে। তখন তারা পরস্পর কথা-বার্তাও বলবে। সেদিন চূড়ান্ত বিপরীতমুখী এ দু’টি দলের ভিতর কী কথা হবে তা এ আয়াতগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে।
৫৯-৬৪নং আয়াতে আছে, হজরত নূহ (আ.)-এর দাওয়াত পরিচালনার ঘটনা, উম্মত কর্তৃক তাকে প্রত্যাখ্যানের ঘটনা, পরিণতিতে মহাপ্লাবন দ্বারা তাদের ধ্বংস করার ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা।
৬৫-৭২নং আয়াতে আছে, হজরত হুদ (আ.) কর্তৃক উপস্থাপন করা একত্ববাদের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করায় গোটা আদ জাতিকে নির্মূল করার ঘটনা।
৭৩-৭৯নং আয়াতে আছে, হজরত সালেহ (আ.)-এর নির্দেশ অমান্য করে আল্লাহর নিদর্শন বিশেষ একটি উট হত্যা করার অপরাধে ভূমিকম্প দ্বারা গোটা সামূদ জাতিকে ধ্বংস করার ঘটনা।
৮০-৮৪নং আয়াতে বলা হয়েছে, হজরত লূত (আ.)-এর সম্প্রদায় তার কথা মেনে জঘন্য অভ্যাস সমকামীতা থেকে বিরত না হওয়ায়- আল্লাহতায়ালা তাদের ধ্বংস করে দেন। তবে তাদের ধ্বংসের ধরণ এ আয়াতে স্পষ্টভাবে বর্ণনা না করা হলেও সূরা হুদের ৮২নং আয়াতে এবং সূরা হিজরের ৭৪নং আয়াতে এ বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা উল্লেখ আছে, সেখানে বলা হয়েছে, তাদের গোটা আবাসভূমি উল্টে দেয়া হয়েছিল। এরপর মুষলধারে পাথর বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়েছিল।
৮৫-৯৩নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মাদইয়ানবাসীর গুরুতর কয়েকটি অপরাধ ছিল। সেগুলো হলো- শিরক করা, মাপে কম দেয়া, মানুষকে ঠকানো এবং সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করা। হজরত শোয়াইব (আ.) তাদেরকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বহুভাবে বুঝানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু তারা বুঝ মানল না। অপরাধ ছাড়ল না। অবশেষে আল্লাহতায়ালা ভূমিকম্প দিয়ে তাদের ধ্বংস করে দেন। এ আয়াতের আলোকে ইসলামি স্কলাররা বলেন, উল্লেখিত অপরাধসমূহ ভয়াবহ পাপের কারণ, মানুষের উচিৎ এসব বদঅভ্যাস পরিত্যাগ করা।
১০৯-১৬২নং আয়াতে হজরত মূসা (আ.)-এর কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। জাদুকরদের সঙ্গে মোকাবেলা করে বিজয়ী হওয়ার ঘটনা। নির্যাতিত স্বজাতিকে হানাদার ও অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত করার ঘটনা। অত্যাচারী খোদাদ্রোহী ফেরাউন নীল নদীতে সদলবলে ডুবে মরার ঘটনা। হজরত মূসা (আ.)-এর ওপর অবতীর্ণ আসমানি কিতাব তাওরাত নাজিলের ঘটনা। হজরত মূসা (আ.)-এর অনুপস্থিতিতে বনি ইসরাইলদে বাছুর পূজা শুরু করার ঘটনা।
১৬৩-১৬৬নং আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা কর্তৃক নিষিদ্ধ দিবসে মাছ শিকার করার অপরাধে এক দল অবাধ্য মানুষকে বানরে রূপান্তরিত করার ঘটনা।
১৭৮নং আয়াতে উল্লেখ আছে, কিয়ামত কবে হবে তা একমাত্র আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন।
১৮৮নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, হে নবী! আপনি মানুষকে বলুন, আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত নিজের কোনো উপকার বা ক্ষতি করার ইচ্ছা আমার নেই। আমি যদি গায়েব (অদৃশ্যের খবর) জানতাম তবে তো আমার খুবই সুবিধা হতো। আমি কখনো ক্ষতিগ্রস্থ বা বিপদগ্রস্থ হতাম না!
এ আয়াতে আল্লাহতায়ালার দেয়া যুক্তির সঙ্গে নবী করিম (সা.)-এর পবিত্র জীবনী মিলিয়ে বিশ্লেষণ করলে প্রমাণিত হয় যে নবী করিম (সা.) গায়েব জানতেন না।
২০৪নং আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যখন কোরআনে কারিম তেলাওয়াত করা হবে তখন চুপ থেকে তা মনোযোগ সহকারে শোনবে।
২০৫নং আয়াতে নীরবে-নিভৃতিতে সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর জিকির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সূরা আনফাল
সূরা আনফাল মাদানি সূরা। এ সূরার সর্বমোট আয়াত সংখ্যা ৭৫টি। আজ খতমে তারাবিতে তেলাওয়াত করা হবে ৪০ নং আয়াত পর্যন্ত।
আজকের তেলাওয়াতে উল্লেখযোগ্য বিষয়াবলী হলো-
২-৩নং আয়াতে মুমিনদের পরিচয় প্রদান করা হয়েছে। আর সেই পরিচয় এভাবে দেয়া হয়েছে যে, মুমিন তারা- আল্লাহর স্মরণ হলে যাদের মন শিহরিত হয়। কোরআনে কারিমের আয়াত শোনলে তাদের ঈমান মজবুত হয়। তারা গুরুত্বের সঙ্গে যথাযথ নিয়মে নামাজ আদায়া করে। তারা দান-খয়রাত করে।
৭-১৯নং আয়াতে বলা হয়েছে, বদর যুদ্ধ কিভাবে, কোন প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয় এবং আল্লাহতায়ারা কীভাবে বদরের রণাঙ্গনে মুসলিম বাহিনীকে সহায়তা করে বিজয় দান করেন।
২৭নং আয়াতে মানুষকে সর্ববস্তায় বিশ্বাসঘাতকতা করতে নিষেধ করা হয়েছে।
৩৯নং আয়াতে মুমিনদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এবং আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত জিহাদ অব্যাহত রাখতে হবে। এটাই আল্লাহর বিধান ও হুকুম।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘন্টা, জুন ২৩, ২০১৫
এমএ/