মাসয়ালা : সেহরি খাওয়া সুন্নত। যদি ক্ষুধা না লাগে কিংবা খেতে ইচ্ছে না হয় তবুও দু’এক লোকমা হলেও খাবার খেয়ে নেবে।
হাদিস শরিফে আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সেহরি খাও। কেননা, সেহরিতে বরকত রয়েছে। ’ -সহিহ মুসলিম: ১/৩৫০
অন্য আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘সেহরি খাওয়া বরকতপূর্ণ কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিত্যাগ করো না। এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সেহরি কর। কারণ যারা সেহরি খায় আল্লাহতায়ালা তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং তার ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। ’ -মুসনাদে আহমদ: ৩/১২; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: হাদিস নং ৯০১০; সহিহ ইবনে হিব্বান: হাদিস নং ৩৪৭৬
মাসয়ালা : সুবহে সাদেকের কাছাকাছি সময় সেহরি খাওয়া মোস্তাহাব। তবে এত দেরি করা মাকরূহ যে, সুবহে সাদেক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সকল নবীকে (সময় হয়ে গেলে দেরি না করে) তাড়াতাড়ি ইফতার করতে আদেশ করা হয়েছে এবং সেহরি বিলম্বে খেতে বলা হয়েছে। ’ –আল মুজামুল আওসাত: ২/৫২৬; মাজমাউয যাওয়াইদ: ৩/৩৬৮
হজরত আমর ইবনে মায়মুন আল আওদি বলেন, ‘সাহাবায়ে কেরাম দ্রুত ইফতার করতেন আর বিলম্বে সেহরি খেতেন। ’ -মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক: হাদিস: ৭৫৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: হাদিস: ৯০২৫
হজরত জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমরা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সেহরি খেলাম, অতপর তিনি নামাজের জন্য দাঁড়ালেন। আমি বললাম, আজান ও সেহরির মধ্যে ব্যবধান কি (পরিমাণ) ছিল? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত পরিমাণ। ’ -বোখারি ও মুসলিম
সহিহ বোখারির অপর এক বর্ণনায় আছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী করিম (সা.) ও জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) একসঙ্গে সেহরি খান, যখন তারা সেহরি খেয়ে শেষ করেন, নবী (সা.) নামাজের জন্য দাঁড়ালেন ও নামাজ আদায় করলেন। আমরা আনাসকে বললাম, তাদের সেহরি ও নামাজ আরম্ভের মধ্যে ব্যবধান কি ছিল? তিনি বললেন, যতটুকু সময়ে একজন ব্যক্তি পঞ্চাশ আয়াত পড়ে। ’
মাসয়ালা : সেহরিতে যদি এতো দেরি হয়ে যায় যে, সুবহে সাদেক হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহের উদ্রেক হয়, তখন পানাহার মাকরুহ। এমতাবস্থায় পানাহার করলে গোনাহ হবে। পরে যদি সুবহে সাদেক হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়, তবে রোজার কাজা আদায় করতে হবে। অন্যথায় কাজা ওয়াজিব হবে না। -রদ্দুল মুহতার: ২/৪১৯, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৯৪, হেদায়া, প্রথম খণ্ড, কিতাবুস সাওম
মাসয়ালা : রমজানের রোজা ও নির্দিষ্ট মান্নতের রোজার নিয়ত সেহরি খাওয়ার সময় করা জরুরি নয়, বরং দ্বি-প্রহরের পূর্ব পর্যন্ত যেকোনো সময় করলেই চলবে। এর পরে করলে রোজা হবে না। আর রমজানের কাজা, কাফফারা ও অনির্দিষ্ট মান্নতের রোজার নিয়ত সুবহে সাদেকের পূর্বেই করতে হবে; পরে করলে হবে না। -ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: খণ্ড-১, পৃষ্ঠা- ১৯৬
মাসয়ালা : রমজানের চলমান রোজার ক্ষেত্রে আমি আগামীকাল রমজানের রোজা রাখবো- এরূপ নির্দিষ্ট নিয়ত করা জরুরি নয় বরং রোজা রাখছি শুধু এ নিয়ত দ্বারা-ই আদায় হয়ে যাবে। -ফাতাওয়ায়ে শামী: খণ্ড- ২, পৃষ্ঠা- ৩৭৭
তবে আমাদের দেশে যেহেতু রোজা ব্যতীত শেষ রাতে পানাহার করার প্রচলন নেই। একমাত্র রোজার জন্যই সেহরি খাওয়া হয়, তাই রমজানে সেহরি খাওয়াটাই নিয়তের স্থলাভিষিক্ত ধরা হবে। -ফাতওয়ায়ে শামী: খণ্ড- ২, পৃষ্ঠা- ১১৬, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী: খণ্ড- ১, পৃষ্ঠা- ১৯৫
মাসয়ালা : রোজা রাখার জন্য সেহরি খাওয়া মুস্তাহাব, জরুরি নয়। তাই সেহরি খাওয়া ব্যতীত কেবল নিয়ত করে নিলেও রোজা হয়ে যাবে। -ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম: খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা- ৪৯৬
মাসয়ালা : সেহরির সময় মাইকে প্রয়োজন পরিমাণ ডাকাডাকি করা ও সেহরির সময় বলে দেয়া জায়েজ আছে। কিন্তু ডাকাডাকিতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত হামদ, নাত, গজল গেয়ে, জিকির-আজকার করে, বা ওয়াজ ইত্যাদি বাজিয়ে এলাকার মানুষের তাহাজ্জুদ বা অন্যান্য নফল ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি করা, রুগ্ন ও অসুস্থ ব্যক্তিদের ঘুম ও আরামে বিঘ্ন সৃষ্টি করা মোটেই ঠিক না, পরহেজগার আলেমরা এসব থেকে বিরত থাকার পরামর্শই দিয়েছেন। -ফাতাওয়ায়ে শামী: খণ্ড- ৪, পৃষ্ঠা- ৪৪৫, খাইরুল ফাতাওয়া: খণ্ড- ২, পৃষ্ঠা- ৭৭০
মাসয়ালা : সেহরির শেষ সময় আজান নয় বরং সুবহে সাদেক (ফজরের ওয়াক্ত আসা)। তাই আজান হোক বা না হোক সুবহে সাদেকের পরে রোজা নষ্টের কোনো কারণ পাওয়া গেলে রোজা হবে না। -সূরা বাকারা : ১৮৭, ফাতাওয়ায়ে শামী: খণ্ড- ২, পৃষ্ঠা- ৩৭১
মাসয়ালা : সেহরির সময় শেষ হয়েছে না-কি বাকি রয়েছে এ নিয়ে যদি সন্দেহ হয় তাহলে না খাওয়াই উত্তম। তবে সন্দেহের অবস্থায় খেলেও রোজা হবে। কিন্তু পরে যদি নিশ্চিত জানা যায় যে, আসলে সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল, তাহলে তার ওই রোজা কাজা করতে হবে কাফফারা দিতে হবে না। -আলমগীরী: খণ্ড- ১, পৃষ্ঠা- ১৯৪
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘন্টা, জুন ২৩, ২০১৫
এমএ/