মাসয়ালা: প্রাপ্ত বয়স্ক (নাবালেগ নয়) সুস্থমস্তিস্ক সম্পন্ন (পাগল নয়) প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী যার মালিকানায় ঋণ ব্যতীত নিত্যপ্রয়োজনের অতিরিক্ত নিম্নবর্ণিত সম্পদ থাকবে এবং সে সম্পদের ওপর এক চন্দ্রবছর অতিবাহিত হবে, তার ওপর জাকাতযোগ্য সম্পদের ৪০ ভাগের একভাগ তথা আড়াই শতাংশ আদায় করা ফরজ হবে। -হেদায়া: ১/১৮৫-১৯৫, রদ্দুল মুহতার: ২/২৫৮; বাদায়েউস সানায়ে: ২/৭৯, ৮২
যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে জাকাত দিতে হয় তা নিম্নরূপ-
ক. সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্য- তা অলংকার হোক বা অন্য কোনো আকৃতিতে হোক ।
খ. সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্যের মূল্য (নগদ ক্যাশ) যা বর্তমান বাজার মূল্য হিসেবে ৫২.৫০=৭০,০০০/= সত্তর হাজার টাকা মাত্র।
গ. কিছু স্বর্ণ ও তার সাথে কিছু নগদ টাকা বা কিছু রূপা যেগুলোর মোট মূল্যমান সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্যর মান। যেমন, কারো কাছে এক ভরি স্বর্ণ আছে যার মূল্য ৫০ হাজার টাকা এবং আরো ২০ হাজার টাকা, কিংবা সমপরিমাণ মুল্যের রূপা আছে, তাহলে তার ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে। কেননা এ সকল সম্পদের মোট মূল্য দাঁড়ায় ৭০ হাজার টাকা। যা বর্তমান বাজার মূল্য হিসেবে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়।
ঘ. সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্য পরিমাণ ব্যবসায়িক সম্পদ।
ঙ. সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ (অলংকার বা অন্য কিছু) যখন কারো কাছে শুধু স্বর্ণ থাকবে সাথে কোনো টাকা বা রূপা না থাকবে, তখন সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ থাকলে তার ওপর জাকাত আবশ্যক হবে। কিন্তু যদি কারো স্বর্ণের সাথে টাকা বা রূপা থাকে, তাহলে স্বর্ণ ও রূপা বা টাকা সবগুলোর মূল্য কত হয় তা দেখতে হবে। যদি মূল্য আনুমানিক ৭০ হাজার বা কমবেশি টাকা হয়, তাহলে জাকাত দিতে হবে। -ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৪/৩৮
মাসয়ালা: স্বর্ণ বা রূপা না থাকলেও স্বর্ণ বা রূপার যে কোনো একটির নেসাব পরিমাণ মূল্যের টাকার মালিক হলেই জাকাত আদায় করা আবশ্যক হয়ে যাবে। স্বর্ণ বা রূপা থাকা আবশ্যক নয়। এর সমমূল্যের টাকা থাকলেই যথেষ্ট। -বাহরুর রায়িক: ২/২০৬
মাসয়ালা: যেদিন চন্দ্রবছর হিসেবে এক বছর পূর্ণ হবে, সেদিন সঞ্চিত সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ হয়ে যায়। তাই জাকাত ফরজ হওয়ার পর বিলম্ব না করে আদায় করে দেয়া উত্তম। জাকাত আদায়ে অধিক বিলম্ব করা গুনাহ। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: হাদিস নং ১০৫৫৯; বাদায়েউস সানায়ে: ২/৭৭
মাসয়ালা: জাকাত চন্দ্রবর্ষ অনুযায়ী আদায় করা জরুরি। বাংলা বা ইংরেজি বর্ষের হিসাব এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। কারও যদি চন্দ্রবর্ষের হিসাব রাখতে অসুবিধা হয়, তবে প্রত্যেক ইংরেজি বর্ষের ১১ দিন আগেই চন্দ্রবর্ষ পূরণ হয়েছে বলে ধরে নেবে এবং সে অনুযায়ী জাকাত আদায় করবে এবং পরের বছরের হিসাব ওই ১১ দিন আগে থেকেই শুরু করবে। কারণ হিজরি সন ইংরেজি সন থেকে ১১ দিন কম হয়ে থাকে। -আল বাহরুর রায়েক: ২/২০৩; আলমুহাল্লা: ৪/৭৫; আততাওকিতুল হাওলি ফিজজাকাত: ২৫
মাসয়ালা: নিয়ম হলো, যেদিন থেকে সম্পদের মালিক হয়েছে, সেদিনের হিসাব ধরে এক বছর পর জাকাত দেয়া। তবে কোন দিন থেকে সম্পদের মালিক হয়েছে তা মনে না থাকলে, অনুমান করে একটা দিন ঠিক করে নিয়ে প্রতিবছর সেই দিন জাকাত হিসাব করলে- ইনশাআল্লাহ জাকাত আদায় হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে অনেকে রমজান মাসকে বেছে নেয়, বেশি সওয়াব লাভের আশায়। তবে নিয়ম হলো, জাকাত ওয়াজিব হওয়ার তারিখ আসার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদায় করে দেয়া।
মাসয়ালা: সম্পদের মালিক যদি ঋণগ্রস্থ হয় তাহলে তার সম্পদের মূল্য থেকে প্রথমে ঋণ পরিমাণ টাকা বাদ দিতে হবে। অতঃপর যদি অবশিষ্ট সম্পদ সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্য (৭০ হাজার) বা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে তার ওপর জাকাত আবশ্যক হবে, নতুবা হবে না। কেউ যদি কিস্তিতে কিছু ক্রয় করে থাকে, বা কিস্তি করা ঋণ থাকে, তাহলে এই বৎসর যে পরিমাণ কিস্তি আদায় করতে হবে কেবলমাত্র সেই পরিমাণ টাকা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট সম্পদের জাকাত দিতে হবে । -আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৬৩
পাওনা টাকার ওপর জাকাত
মাসয়ালা: যদি কারো কাছে টাকা ঋণ দেয়া থাকে বা কারো কাছে গচ্ছিত রাখা থাকে অথবা কোনো কিছু বিক্রয় করেছে কিন্তু তার মূল্য এখনো হস্তগত হয়নি এবং উক্ত টাকা ফেরত পাওয়ার আশা থাকে। তাহলে তা হিসাব করে জাকাত দিতে হবে। -ফাতাওয়ায়ে শামি: ২/৩০৫
পক্ষান্তরে কারো কাছে টাকা পাওনা থাকলে এবং সে দরিদ্র হলেও তার টাকা জাকাতের নিয়তে মাফ করে দিলে জাকাত আদায় হবে না। বরং টাকা ফেরত নিয়ে তাকে আবার জাকাতের নিয়তে দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘন্টা, জুলাই ০৩, ২০১৫
এমএ