ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘রমজান ঐতিহ্য’

ম্যারাডোনার দেশ আর্জেন্টিনায়ও রয়েছে লাখ লাখ রোজাদার

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১৫
ম্যারাডোনার দেশ আর্জেন্টিনায়ও রয়েছে লাখ লাখ রোজাদার

আর্জেন্টিনার পাঁচ কোটি জনগণের প্রায় ২.৫% মুসলিম। জনসংখ্যার বিচারে মুসলিমরা দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সর্ববৃহৎ সংখ্যালঘু ধর্মীয় জনগোষ্ঠি।

বর্তমানে আর্জেন্টিনায় প্রায় ১০ লাখ মুসলিম বসবাস করে। যাদের একপঞ্চমাংশই বাস করে রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে। দেশটি দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ অংশের প্রায় পুরোটা জুড়ে অবস্থিত। এটি দক্ষিণ আমেরিকা ২য় বৃহত্তম এবং বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম রাষ্ট্র।

দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে ইসলামিক সেন্টার ‘বাদশাহ ফাহাদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার’ আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে অবস্থিত। ১৯৯২ সালে খাদেমুল হারামাইনের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৬ সালে সৌদি বাদশাহর আর্জেন্টিনা সফর উপলক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট কার্লোস মুনিম সেন্টারটি সম্প্রাসরণ করেন। বর্তমানে এর আয়তন ৩৪ হাজার মিটার। এর অধীনে রয়েছে, একটি মসজিদ, একটি পাঠাগার, দুটি ধর্মীয় স্কুল ও একটি পার্ক। সেন্টারটি ইসলাম প্রচার, ধর্মীয় শিক্ষা দান, ফতোয়া প্রদান, ইসলামিক ম্যাগানিজ প্রকাশ ও মুসলমানের মাঝে বিয়ে দেয়ার কাজ করে থাকে। এছাড়াও বুয়েন্স আয়ার্সে আরও কয়েকটি বৃহৎ মসজদি, ইসলামিক সেন্টার ও একটি ইসলামিক কলেজ রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা দেয়া হয়।

আর্জেন্টিনায় সর্বপ্রথম ইসলাম নিয়ে আগমন করেন স্পেনের নির্বাসিত মুসলিমগণ। যারা দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছিলো। বিশ শতকের শুরুতেও অনেক আরব মুসলিম আর্জেন্টিনায় পাড়ি জমিয়েছেন। যাদের অধিকাংশ সিরিয়া ও লেবাননের অধিবাসী। তবে বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম অভিবাসীদের সংখ্যা আরব অভিবাসীদের ছাড়িয়ে গেছে।

আর্জেন্টিনার মুসলিমগণের বড় সমস্যা হলো, নতুন প্রজন্মকে ইসলামি শিক্ষা শিক্ষিত করতে পারছে না। প্রথমত তারা স্থানীয় সমাজ ব্যবস্থার সাথে মিশে যেতেই বেশি পছন্দ করছে। দ্বিতীয়ত ইসলামি শিক্ষা উপকরণের অভাব। নতুন প্রজন্ম স্প্যানিশ ভাষা ছাড়া অন্য ভাষা জানে না। আর স্প্যানিশ ভাষায় ইসলামি জ্ঞানের উপকরণ খুবই কম।

ল্যাটিন আমেরিকার অন্যান্য দেশের তুলনায় আর্জেন্টিনায় মুসলিমদের সংখ্যা কম হলেও এখানে রোজার ধর্মীয় আবেশ সবচেয়ে বেশি। মুসলিম দেশ তো দূরের কথা -অন্যান্য অমুসলিম দেশ যেখানে মুসলমানের সংখ্যা বেশি তাদের মতো কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা না থাকার পরও আর্জেন্টাইন মুসলিমগণ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখেন। রমজানে তারা ধর্মীয় জীবনযাপনের চেষ্টা করেন। যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে পরস্পরকে ধর্মীয় কাজে উদ্বুদ্ধ করে। তারা ইফতার ও তারাবির নামাজে মসজিদে একত্র হয়। তারাবির পর থেকে ফজর পর্যন্ত মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারগুলো মুসল্লিদের জন্য খোলা থাকে। কোথাও কোথাও ইফতারের সাথে সাথে মুসল্লিদের জন্য সেহরিরও ব্যবস্থা থাকে।

রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে মুসলিমদের উপস্থিতি বেশি হওয়ায় সেখানে মুসলিমদের রমজানপ্রস্তুতি ও রমজানের কার্যক্রম সহজেই চোখে পড়ে। গত পাঁচ বছর যাবত রাজধানীর ‘কিলমিস’ এলাকায় আফ্রিকান বংশোদ্ভূত একদল স্বেচ্ছাসেবক মানুষকে সাধারণভাবে ইসলামের দাওয়াত ও কোরআনে কারিম শিক্ষা প্রদান করে থাকেন। রমজান মাসে তারা কোরআন ও হাদিসের বিশেষ পাঠদান করে থাকেন।

ইসলামিক সেন্টার অব আর্জেন্টিনা দেশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মসজিগগুলোতে রমজানে কোরআন ও ধর্মীয় বিষয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা করে। তারা রমজান মাসে বিশেষ টেলিভিশন সম্প্রচারের ব্যবস্থা করে। যেখানে মুসলিমগণ ইসলামি জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে ও প্রশ্ন করতে পারে। রমজানে ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরব দেশগুলো থেকে স্বেচ্ছাসেবক আলেমগণ আসেন। তারা রমজানে আর্জেন্টিনার বিভিন্ন মসজিদে নামাজের ইমামতি ও ধর্মীয় বিষয়ে মুসলিমদের শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

ইফতা ও সেহরিতে আরব সংস্কৃতির প্রাধান্য দেখা যায়। যেমন ইফতার আয়োজনে মিষ্টান্নের প্রাধান্য, খেজুর, দুধ ও সিমের উপস্থিতি। ইত্যাদি। তবে অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীগণও রমজানে আপন সংস্কৃতি চর্চায় মনোযোগ দেন। বিশেষত একই অঞ্চলের অভিবাসীগণ একত্রে থাকলে তারা দেশীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী রমজান উদযাপন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘন্টা, জুলাই ০৪, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।