আজ ১৮তম তারাবি। আজকের খতমে তারাবিতে ২১তম পারা তেলাওয়াত করা হবে।
সূরা আনকাবুতের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
৪৫নং আয়াতে দু’টি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোরআন পাঠ করা এবং যত্নের সঙ্গে নামাজ আদায় করা। আয়াতের নামাজের উপকারিতার কথাও বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, নামাজ সব ধরনের অশ্লীল, মন্দ ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে।
৪৫-৫১নং আয়াতে কোরআনে কারিমের সত্যতা প্রমাণ করা হয়েছে।
যখন কোনো ভূখন্ডে আল্লাহদ্রোহী শক্তি প্রবল হয়ে যায় এবং তারা আল্লাহর হুকুম মানতে মুমিনদের বাঁধা দেয়, নির্যাতন করে তখন সে ভূখন্ডের মুমিনদের সান্তনা প্রদানের জন্য ও দ্বীনের ওপর সুদৃঢ় রাখার জন্য ৫৬-৬০ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, আমার পৃথিবী প্রশস্ত সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর। জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। (তাই মৃত্যুর ভয়ে আমার হুকুম মানা থেকে পিছপা হবে না) মৃত্যুর পরে তো তোমরা আমার কাছেই ফিরে আসবে। যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে জান্নাতে তাদের দান করব সুউচ্চ ভবন ও প্রবাহিত স্বচ্ছ পানির লেক। যারা বিপদে ধৈর্য ধরে এবং প্রতিপালকের ওপর ভরসা রাখে তাদের জন্য উপরোক্ত উত্তম প্রতিদান অপেক্ষা করছে। এমন কত জীব-জন্তু আছে যারা রিজিক সংরক্ষণ করে না। আল্লাহই তাদের ও তোমাদের রিজিক দেন। (তাই, রিজিকের ভয়ে দ্বীন পালনে পিছপা হবে না)
৬৫নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যখন তারা নৌযানে চড়ে (বিপদে পরে) তখন বিশুদ্ধচিত্তে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। আর যখন তিনি তাদের উদ্ধার করে তীরে ভিড়ান তখন তারা তার সঙ্গে শরিক করে (বলতে থাকে, মাঝিটা কী অভিজ্ঞ)। বস্তুত মানুষের এমন স্বভাব কোনোভাবেই কাম্য নয়।
৬৯নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যারা আমার পথে চলার চেষ্টা করবে অবশ্যই আমি তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত হওয়ার রাস্তা দেখাই।
সূরা আর রূম
সূরা আর রূম পবিত্র কোরআনে কারিমের ৩০তম সূরা। এ সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ৬০টি।
সূরা আর রূমের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
১৭-১৮নং আয়াতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইঙ্গিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে আল্লাহর মহিমা ঘোষণা কর প্রভাতে (ফজর), সন্ধ্যায় (মাগরিব ও ইশা), দুপরে (জোহর), বিকালে (আসর)।
২০-২৭নং আয়াতে সৃষ্টির মাঝে আল্লাহতায়ালার কিছু নিদর্শনের বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
৩৬নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আমি যখন মানুষকে রহমত দেই তখন সে উৎফুল্ল হয় আবার যখন নিজ কৃতকর্মের কারণে বিপদে পড়ে তখন হতাশ হয়ে যায়।
৩৮নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চায় তাদের জন্য সর্বোত্তম উপায় আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করা। মিসকিন ও অভিবাসীদের হক আদায় করা। এ আয়াতের আলোকে বলা যায়, আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনে এ কয়টি কাজের কোনো বিকল্প নেই।
৩৯নং আয়াতে সুদকে হারাম করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, আল্লাহর কাছে সুদ দ্বারা সম্পদ বৃদ্ধি পায় না বরং তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে জাকাত প্রদান করার দ্বারা সমৃদ্ধি আসে।
৪১নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, জল-স্থলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রকাশ পায় মানুষের কৃতকর্মের কারণে। আল্লাহতায়ালা এ সব শাস্তি দিয়ে মানুষকে সতর্ক করেন, যেন তারা দ্বীন পালনের দিকে ফিরে আসে।
সূরা লোকমান
সূরা লোকমান পবিত্র কোরআনে কারিমের ৩১তম সূরা। এটা মক্কি সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৩৪টি।
সূরা লোকমানের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
৪নং আয়াতে হেদায়েতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের তিনটি আলামত বলা হয়েছে। তারা যতেœর সঙ্গে নামাজ পড়ে, জাকাত দেয় ও পরকালকে (মনে-প্রাণে) বিশ্বাস করে।
৬নং আয়াতে তাদের জন্য চরম অবমাননাকর শাস্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে যারা অর্থ বিনিয়োগ করে নাটক, সিনেমা, গান-বাজনা, যাত্রা, খেলার আয়োজন করে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে।
এ আয়াদের শানে নুজুল হলো- নাদর ইবনে হারিছ নামক এক ব্যক্তি মানুষকে কোরআন শোনা থেকে বিরত রাখার জন্য পরস্য থেকে গল্পের বই সংগ্রহ করে এনে আসরের আয়োজন করত। তাতে গল্প শোনাসহ মানুষকে আকৃষ্ট করার মতো আরো বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা থাকত। তার প্রেক্ষিতে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।
১৪নং আয়াতে পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণের আদেশ দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে মা তার সন্তানকে অনেক কষ্ট করে গর্ভে রাখেন অতপর দু’বছর স্তন্য দান করেন। মানুষের উচিৎ মায়ের এই ত্যাগের কথা মনে রাখা।
১৫নং আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, পিতা-মাতা যদি সন্তানকে দ্বীন পালনে বাঁধা দেয়, গুনাহর কাজের আদেশ করে তবে সেক্ষেত্রে পিতা-মাতার এ ধরণের নির্দেশ সন্তান মানবে না। কিন্তু এর পরেও তাদের সঙ্গে সদাচরণ করতে হবে।
সূরা সেজদাহ
সূরা সেজদাহ পবিত্র কোরআনে কারিমের ৩২তম সূরা। এটা মক্কি সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৩০টি।
সূরা সেজদাহ’র উল্লেযোগ্য বিষয় হলো-
১১নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করার পর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে আসবে। অতএব তোমরা পরকালের পাথেয় সংগ্রহে মনোযোগ দাও। এর ছাড়া তোমাদের অার কিছুই কাজে আসবে না।
সূরা আল আহজাব
সূরা আল আহজাব পবিত্র কোরআনে কারিমের ৩৩তম সূরা। সূরা আল আহজাব মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ৭৩টি।
সূরা আল আহজাবের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
১নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, হে নবী আমাকে ভয় করো। কাফের ও মুনাফেকদের আনুগত্য করো না।
৫নং আয়াতের বিধানমতে পালক সন্তানের ওপর নিজ সন্তানের কোনো হুকুম বর্তাবে না। যেমন, বিবাহ, উত্তরাধিকার, পর্দা ইত্যাদি। এ আয়াতে পালকসন্তানকে তার জন্মদাতা পিতার নামেই পরিচিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, যদি তার পিতৃপরিচয় জানা না থাকে তবে তাকে দ্বীনী ভাই বলে পরিচয় দাও।
৬নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, মুমিনদের কাছে সবচেয়ে আপন হলেন নবী। তার স্ত্রীগণ তাদের জন্য মা।
৯-২০নং আয়াতে আহজাব যুদ্ধের আলোচনা স্থান পেয়েছে।
৬২৭ খ্রিস্টাব্দে কোরাইশ, ইহুদি ও কয়েকটি আরবগোত্র সম্মিলিত জোট বাহিনী গঠন করে মদিনা আক্রমণ করতে আসলে হজরত নবী করিম (সা.) মদিনা হেফাজত করার জন্য সমতল সীমানায় পরিখা খনন করেছিলেন। এ যুদ্ধ ইতিহাসে পরিখার যুদ্ধ নামে বা আহজাবের যুদ্ধ নামে পরিচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘন্টা, জুলাই ০৫, ২০১৫
এমএ/