আজ ২০তম তারাবি অনুষ্ঠিত হবে। আজকের খতমে তারাবিতে তেলাওয়াত হবে ২৩তম পারা।
আজকের তারাবিতে সূরা ইয়াসীনের পঠিতব্য অংশের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
৩৩-৪৪নং আয়াতে সৃষ্টির বিভিন্ন নিদর্শন দ্বারা একত্ববাদের প্রমাণ দেয়া হয়েছে। আলোচনা করা হয়েছে সূর্য ও চাঁদের গতি পথের কথা এবং দিন-রাত ও সময়ের পরিবর্তনের কথা।
৪৮-৬৮নং দুনিয়ার শাস্তির ভয় দেখানো হয়েছে এবং আয়াতে আখেরাতের দৃশ্য আঁকা হয়েছে । ইরশাদ হয়েছে, মাত্র একটি বিকট আওয়াজ আসলেই পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার বা জীবনের শেষ কথা বলার মতো সুযোগটুকুও তারা পাবে না। (বিচার দিবসে) মাত্র একটা আওয়াজেই সব মানুষ একত্রিত হয়ে আমার সমীপে উপস্থিত হবে। ঘোষণা দেয়া হবে, হে গুনাহগাররা আজ নেককারদের থেকে আলাদা হয়ে যাও। আজ তাদের মুখ সিলগালা করে দিব। তাদের হাত-পা আমার সঙ্গে কথা বলবে। তাদের কৃতকর্মের স্বাক্ষ্য দিবে। আমি ইচ্ছা করলে তাদের দৃষ্টিশক্তি অকেজো করে দিতে পারি। আমি ইচ্ছা করলে তাদের চেহারা বিকৃত করে দিতে পারি। তখন তারা থমকে যাবে। আগাতেও পারবে না, পিছাতেও পারবে না।
৭১-৭৫নং আয়াতে সৃষ্টির নিদর্শনবালী দ্বারা আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ দেয়ার পর ইরশাদ করা হয়েছে, মানুষ সাহায্য পাওয়ার আশায় দুনিয়াতে আল্লাহ ব্যতীত আর যাদের উপাসনা করছে কিয়ামতে তারা নিজেদের উপাসকদের কোনো সাহায্য করতে পারবে না। বরং উল্টো উপাস্যরাই উপাসকদের বিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে।
৭৭-৮৩নং আয়াতে মক্কার মুশরিকদের সন্দেহের অপনোদন করা হয়েছে। তারা পরকালে মানুষের পুনরায় জীবিত হওয়ার ব্যপারে প্রচন্ড সন্দিহান ছিল। তারা বলত, হাড়গুলো অনেক পুরাতন হয়ে যাওয়ার পর কিভাবে সম্ভব তা আবার জীবিত হবে! তাদের এ বিষয়ে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ একটি মাত্র শুক্র থেকে মানুষ সৃষ্টি করেন তার জন্য পুরাতন হাড় থেকে পূর্বের মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি করা কেন অসম্ভব হবে? যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করতে পেরেছেন তিনি দ্বিতীয় বার কেন সৃষ্টি করতে পারবেন না? যে কোনো কাজ প্রথমবারের তুলানায় দ্বিতীয় বার করা তো বেশি সহজ। যিনি এ আকাশ-জমিন সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখেন মানুষকে আবার সৃষ্টি করার ক্ষমতা কি তার নেই? যিনি হও বললেই সব কিছু হয়ে যায় তার জন্য আবার সৃষ্টি করা অসম্ভব কেন হবে?
সূরা আস সাফফাত
সূরা আস সাফফাত পবিত্র কোরআনে কারিমের ৩৭তম সূরা। এটা মক্কি সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ১২৮টি।
এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
বর্তমানে দুনিয়াতে অনেক মানুষ ইসলাম অপছন্দকারী বা অমান্যকারী নেতাদের দিকনির্দেশনায় প্ররোচিত হয়ে ইসলামের বিধিবিধানের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। ২৭-৩৩নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, হাশরের মাঠে এ সব জননেতা ও অনুসারী কর্মীদের মুখোমুখি করা হবে। অনুসারীরা নেতৃবৃন্দকে বলবে, দুনিয়াতে তোমরা তো আমাদের কাছে এসে তোমাদের অনেক বড় বড় ক্ষমতা ও শক্তির মহড়া দেখাতে। তোমাদের ক্ষমতা দেখে আমরা তোমাদের পিছনে ছুটেছিলাম। তোমাদের কথায় সব কিছু করেছি। নেতৃবৃন্দ উত্তরে বলবে, আমাদের কথায় নয় বরং তোমরা নিজেরাই দ্বীনের অনুসারী ছিলে না। তোমাদের ওপর আমাদের কোনো জোর ছিল না। তোমরা নিজেরাই ছিলে দ্বীনের অবাধ্য। আসলে আমরা তোমাদের প্রতারিত করেছিলাম। আমরা নিজেরাও ছিলাম পথভ্রষ্ট।
৪০-৪৯নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে, আল্লাহর অনুগত বান্দারা পরকালে কী কী সুবিধা ভোগ করবে।
৫১-৫৭নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে এমন কিছু জান্নাতীদের কথা যারা আবেদন করবে, হে আল্লাহ! দুনিয়াতে আমাদের পরিচিত এমন কিছু মানুষ ছিল যারা আমাদের এমন পথের দিকে আহ্বান করত যা ইসলাম সম্মত নয়। আজ তাদের কী অবস্থা? আল্লাহতায়ালা তাদের বলবেন, তোমরা কি তাদের দেখতে চাও? তারা বলবে, হ্যাঁ। আল্লাহ তখন সরাসরি সে সকল জাহান্নামীদের দেখার সুযোগ করে দিবেন। জান্নাতীরা সে সব জাহান্নামীদের বলবে, তোমরা তো আমাদেরও ধ্বংস করে দিচ্ছিলে। যদি আমাদের প্রতি আমাদের প্রভুর অনুগ্রহ না হত তবে আমরাও আজ তোমাদের সঙ্গে শাস্তি ভোগ করতাম।
৬৩-৬৮নং আয়াতে জাহান্নামের খাবার-পানির বিবরণ দেয়া হয়েছে।
৭৫-১৪৮নং আয়াতে বিভিন্ন নবী ও তাদের অবাধ্য জাতির ঘটনা আলোচনা করে উম্মতে মুহাম্মাদীকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।
সূরা সাদ
সূরা সাদ পবিত্র কোরআনে কারিমের ৩৮তম সূরা। সূরা সাদ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৮৮টি। এ সূরায় আল্লাহতায়ালার একত্ববাদ, নবী প্রেরণ ও আখেরাতের যৌক্তিকতা মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং উম্মতে মুহাম্মদীকে সতর্ক করার জন্য পূর্বের বিভিন্ন নবীদের বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
সূরা যুমার
সূরা যুমার কোরআনে কারিমের ৫৯তম সূরা। এটাও মক্কি সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৫৯টি। আজ তেলাওয়াত করা হবে শুরু থেকে ৩১নং আয়াত পর্যন্ত। আজকের পঠিতব্য অংশের কিছু বিষয় হলো-
৩নং আয়াতে মক্কার মুশরিকদের উক্তি উদ্ধৃত হয়েছে। আমরা এ সব ওলিদের (অভিভাবক) নিছক এ জন্যই ধরেছি যে, তারা আমাদের আল্লাহর নিকটর্তী করে দিবে। উত্তরে আল্লাহ বলছেন, তারা কাফের।
এ আয়াতের দ্বারা দিবালোকের ন্যয় পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে, মক্কার কাফেররা আল্লাহতায়ালাকে স্বীকার করত। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আবেগেই তারা ওলিদের ইবাদত করত। অতএব, আজকেও যদি কেউ জীবিত বা মৃত ওলির খানকা বা দরগাহ বা মাজার তওয়াফ করে। সেখানে সিজদা করে। সেখানে প্রাণী উৎসর্গ করে। ওলির নামে বা মাজারের নামে মান্নত করে। ওলির নামের জিকির করে। আর দাবি করে যে, এ ওলি আল্লাহর কাছে আমার জন্য সুপারিশ করবে তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ওলির খানকায় বা দরগায় এগুলো করছি তবে তারাও এ আয়াতের আলোকে সুস্পষ্ট কাফের প্রমাণিত হবে। যে যুক্তিতে মক্কার কাফেররা আল্লাহকে বিশ্বাস করার পরে কাফের ছিল সে যুক্তিতে এরাও আল্লাহকে বিশ্বাস করার পরে কাফের থাকবে।
আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য একনিষ্ঠভাবে একমাত্র আল্লাহতায়ালার ইবাদত করতে হবে। তওয়াফ করতে হবে আল্লাহর ঘরকে। প্রাণী উৎসর্গ করতে হবে আল্লাহর নামে। সিজদা করতে হবে আল্লাহকে। মান্নত ও জিকির করতে হবে আল্লাহর নামে। আনুগত্য করতে হবে আল্লাহর আইনের। কোনো ব্যক্তি যদি আহলে ইলম হয়ে থাকেন তবে তার কাছে যেতে হবে ইলম শেখার জন্য। কোনো ব্যক্তি যদি আহলে আমল হয়ে থাকেন তবে তার কাছে যেতে হবে আমল শেখার জন্য। এর বেশি কিছু নয়।
২২নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যার অন্তর আল্লাহর আলোচনা দ্বারা প্রভাবান্বিত হয় না তার জন্য রয়েছে ভীষণ শাস্তি। অর্থাৎ আল্লাহর বিধান জানার পরেও যার মন তা মেনে নিতে পারে না তার জন্য রয়েছে ভীষণ শাস্তি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘন্টা, জুলাই ০৭, ২০১৫
এমএ/