কোরআন তেলাওয়াতের সময় নবী করিম (সা.)-এর নামে এলে করণীয়
প্রশ্ন : কোরআনে কারিম তেলাওয়াত করার সময় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র নাম এলে তেলাওয়াত বন্ধ করে তাৎক্ষণিক দরূদ পড়তে হবে কি না?
উত্তর : উত্তম হলো তেলাওয়াত বন্ধ না করা এবং তেলাওয়াত শেষে দরূদ পড়া। কারণ পরে পড়লেও দরূদ পড়ার হক আদায় হয়ে যায়।
দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার শক্তি না থাকলে
প্রশ্ন : একজনের দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার শক্তি নেই। তবে বসে নামাজ আদায় করতে পারেন। তার জন্য বসে ফরয নামাজ আদায় করা সহিহ হবে কি?
উত্তর : হ্যাঁ, কারো দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা সম্ভব না হলে, তার জন্য ফরয নামাজ বসে আদায় করা জায়েয।
ভ্রমণের কারণে রোজা না রাখা প্রসঙ্গে
প্রশ্ন: এক ব্যক্তি রমজান মাসে সফর করার কারণে কয়েক দিনের রোজা রাখতে পারেনি। রমজান শেষে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং অনেক দিন অসুস্থ থাকার পর মারা যায়। জানার বিষয়ে হলো, ওই ব্যক্তির কাজা রোজার কী হবে? সেগুলোর কী কাফফারা দেওয়া ওয়াজিব?
উত্তর: ওই রোজাগুলোর কাফফারা দিতে হবে না। কারণ সফর শেষে লাগাতার অসুস্থতার দরুণ সে কাজা আদায়ের সুযোগ পায়নি। আর কাজা আদায়ের মতো সুস্থ না হলে রোজার ফিদইয়া বা কাফফারা কোনোটিই ওয়াজিব হয় না।
শবে কদরের বিশেষ নামাজ প্রসঙ্গে
প্রশ্ন: শবে কদরের বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামাজ আছে কি?
উত্তর: শবে কদরের বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামাজ নেই। সব সময় যেভাবে নামাজ পড়া হয় সেভাবেই পড়বে অর্থাৎ দুই রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব হয় আদায় করবে এবং যে সূরা দিয়ে সম্ভব হয় পড়বে। তদ্রূপ অন্যান্য আমলেরও বিশেষ কোনো পন্থা নেই। কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দোয়া-ইস্তেগফার ইত্যাদি নেক আমল যে পরিমাণ সম্ভব হয় আদায় করবে। তবে নফল নামাজ দীর্ঘ করা এবং সিজদায় দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করা উচিত, যা কোনো কোনো হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়।
জানাজার নামাজ প্রসঙ্গে
প্রশ্ন: আমাদের এলাকায় প্রচলন হিসেবে ফরজ নামাজের পর সুন্নত পড়া হয় এর পর জানাজা আদায় করা হয। এটা কি সঠিক?
উত্তর: হ্যাঁ, এ প্রচলন ঠিক। বিশেষত যখন জানাজার নামাজ পড়ার জন্য মসজিদের বাইরে যেতে হয় তখন সুন্নত পড়েই মসজিদ থেকে বের হয়ে জানাজা পড়া দরকার। তবে সুন্নত নামাজের পূর্বে জারনাজা পড়াও জায়েজ। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে যেন জানাজার পরে সুন্নতে মোয়াক্কাদা পড়ে নেয়া হয়।
নামাজীর সামনে দিয়ে যাতায়াত প্রসঙ্গে
প্রশ্ন: নামাজী ব্যক্তির সামনে কয় হাত জায়গার ভিতর চলাচল করলে গুনাহ হয় এবং সুতরা কত হাত সামনে রাখতে হয়?
উত্তর : যে মসজিদের প্রশস্ততা ৪০ হাতের বেশি এমন মসজিদে নামাজরত ব্যক্তির দুই কাতার সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয। আর এর চেয়ে ছোট মসজিদে মুসল্লির সামনে দিয়ে সুতরা ছাড়া অতিক্রম করা যাবে না। সুতরা সিজদার জায়গা থেকে সামান্য সামনে রাখবে। কোনো কোনো কিতাবে মুসল্লি থেকে তিন হাত দূরে রাখার কথা আছে।
অপ্রাপ্ত বয়স্কের ইমামতি প্রসঙ্গে
প্রশ্ন : নাবালেগ ছেলের জানাযার নামাজে ইমামতি করা জায়েয কি না? যদি জায়েয না হয় আর সে ইমামতি করে ফেলে তাহলে কি নামাজ আবার পড়তে হবে?
উত্তর: অন্যান্য নামাজের মতো জানাযার নামাজেও নাবালেগের ইমামতি শুদ্ধ নয়। তাই নাবালেগ জানাযার নামাজের ইমামতি করলে ওই মাইয়্যেতের জানাযা পুনরায় আদায় করে নিতে হবে।
বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবা প্রসঙ্গে
প্রশ্ন : আশরায়ে মুবাশশারা অর্থাৎ যে দশজন সাহাবির ব্যাপারে দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে তাদের নাম, পরিচয় এবং কিছু বৈশিষ্ট্য জানতে চাই।
উত্তর : দুনিয়াতেই যে দশজন সাহাবিকে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে তারা হলেন-
১. হজরত আবু বকর (রা.)। তার আসল নাম আবদুল্লাহ বিন উসমান বিন আমর। তার উপাধি আতিক, সিদ্দিক। তার মায়ের নাম উম্মুল খায়র। পুরুষদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। তার হাতে হজরত উসমান বিন আফফান, হজরত যুবাইর, হজরত তালহা, হজরত আবদুর রহমান বিন আউফ প্রমুখ বড় বড় সাহাবি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তিনি রাসূলে কারিম (সা.)-এর হিজরতের সাথী। ইসলামের প্রথম খলিফা। ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
২. হজরত উমর বিন খাত্তাব (রা.) বিন নুফাইল বিন আবদুল উযযা। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা, খলিফাতুল মুসলিমীনের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম আমিরুল মুমিনীন খেতাবে ভূষিত হন। তার খেলাফতকাল ছিল দশ বছর ছয় মাস চার দিন। আল্লাহতায়ালা তার দ্বারা ইসলামকে শক্তিশালী করেছেন।
৩. হজরত উসমান (রা.) বিন আফফান বিন আবিল আস। ইসলামের তৃতীয় খলিফা। তার খেলাফতকাল এগার বছর এগার মাস কয়েক দিন।
৪. হজরত আলী (রা.) বিন আবু তালিব বিন আবদুল মুত্তালিব। সাত বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। তবুক ছাড়া সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ইসলামের চতুর্থ খলিফা ও হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জামাতা।
৫. হজরত তলহা (রা.) বিন উবাইদুল্লাহ বিন উসমান বিন উমর। উহুদ যুদ্ধে রাসূলে কারিম (সা.)-এর সঙ্গে অত্যন্ত মজবুতভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন। চব্বিশ স্থানে আঘাত পেয়েছিলেন। তখন নবী করিম (সা.) তার নাম রেখেছিলেন তলহাতুল খায়র। তিনি জামাল (উষ্ট্রীর যুদ্ধে) যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন।
৬. হজরত যুবাইর (রা.) বিন আওয়াম বিন খুয়াইলিদ। সকল যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। হাবশায় হিজরত করেছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম আল্লাহর রাহে তরবারী চালিয়েছিলেন। তার আকৃতিতে ফেরেশতারা বদর যুদ্ধে অবতরণ করেছিলেন। তিনি জামাল যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন।
৭. হজরত আবদুর রহমান (রা.) বিন আউফ বিন আবদুল হারিছ। হাবশায় হিজরত করেছিলেন। সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
৮. হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.)। তিনি সর্বপ্রথম আল্লাহর রাহে তীর নিক্ষেপ করেন। উহুদ যুদ্ধে তাকে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, তোমার ওপর আমার মা, বাবা কোরবান হোক, তীর নিক্ষেপ কর। তিনি সকল যুদ্ধে শরীক হয়েছেন।
৯. হজরত সাঈদ বিন যায়েদ ইবনে উমর বিন নুফাইল। বদর যুদ্ধ ছাড়া অন্য সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
১০. হজরত আবু উবাইদাহ আমের বিন আবদুল্লাহ বিন জাররাহ। সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনিই উহুদ যুদ্ধে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চোয়ালে বিঁধে যাওয়া লৌহবর্ম দাঁত দিয়ে বের করেছিলেন। তখন তার সামনের দুই দাঁত পড়ে গিয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘন্টা, জুলাই ০৭, ২০১৫
এমএ/