পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে অজস্র মসজিদ। স্থাপত্য শৈলিতে ভুবন বিখ্যাত তেমনি কিছু মসজিদ নিয়ে জার্মানিতে ক’দিন আগেই হয়ে গেলো একটি প্রদর্শনী।
দেয়ালে কোনো কারুকাজ নেই। নেই আভিজাত্যে মোড়ানো ঝাড়বাতি। নেই সুদীর্ঘ গম্বুজ। আছে মোটে চারদিকের চারটি দেয়াল। আর আছে মাথার উপর ছাদ। শুধু এইটুকু নিয়েই সুসম্পন্ন হতে পারে একটি মসজিদ।
সেই হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আমলের কথাই ভেবে দেখুন। চার দেয়ালের উপর কেবল খেজুর পাতার ছাওনি। আর মক্কার দিকে ফেরানো মুখ। ব্যাস, এইটুকুতেই হয়ে যেত মসজিদ। সাজ-সজ্জাহীন সে সাধারণ ঘর-ই হয়ে যেত বিশ্বাসীদের নিপুণ প্রার্থনালয়।
মসজিদের ছিমছাম সেই সাধারণ গড়ন আজও আছে। নিরলঙ্কার মসজিদ আজও আছে দুনিয়ার দেশে দেশে। তবে কি-না, আধুনিক এই স্থাপত্যের যুগে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে মুসলিমদের উপাসনালয় মসজিদেও।
বিরাট, বিপুল জায়গা নিয়ে, কয়েক তলা জুড়ে মসজিদ তৈরি হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। আধুনিক সে সব মসজিদের কোনোটিকে হয়তো বাইরে থেকে দেখতে মনে হতে পারে একটি বাঙ্কারের মতো। আবার কোনো মসজিদের গম্বুজ এমনই মনোরম, যে দেখে মন ভরে যায়।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো, জার্মানিতেও রয়েছে অসংখ্য মসজিদ৷ সেই ক্ল্যাসিক গড়ন থেকে একেবারে আধুনিক স্থাপত্য নকশা- সব ধরণের নকশার মসজিদ-ই আছে এ দেশে।
পরিসংখ্যান বলছে, জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে আছে প্রায় দুই হাজার মসজিদ। শুধু তাই নয়, এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ২০০৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১২০টি নতুন মসজিদ নির্মিত হয়েছে ইউরোপের এ দেশটিতে।
সবচেয়ে বড় মসজিদ
বার্লিনের নয়ক্যোলন এলাকার মসজিদটি বার্লিনের সবচেয়ে বড় মসজিদে। এখানে একত্রে ১,৫০০ জন মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটিতে বিশেষ আয়োজনের জন্য আলাদা জায়গাও রয়েছে৷ ২০১২ সালে জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক তার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই মসজিদটি পরিদর্শন করেন।
জার্মানিতে তুর্কি মুসলমানই বেশি
জার্মানিতে প্রায় ৪০ লাখ মুসলমানের বসবাস। তাদের মধ্যে প্রায় ২,৫ মিলিয়নই তুর্কি বংশোদ্ভূত। বাকিরা এসেছেন দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশ থেকে। জার্মানির বিভিন্ন শহরে ৪০টিরও ওপরে মসজিদ রয়েছে এবং এর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
মানব ধর্মই বড় ধর্ম
রোজা শুরুর আগের দিন জার্মানির ক্যাথলিক গির্জার প্রধান ড. রবার্ট সলিচ জার্মানিতে বসবাসকারী মুসলমানদের উদ্দেশ্যে পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং আহ্বান জানিয়েছেন যে, রোজার মাসে যেন সারা বিশ্বের অসহায় নিপীড়িত সকল ধর্মের মানুষের শান্তির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
রোজা রাখা কঠিন
জার্মানিতে গ্রীষ্মে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মধ্যে প্রায় ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টার ব্যবধান। অর্থাৎ রোজা রাখা মানেই এই লম্বা সময় কিছু না খেয়ে থাকা। বিশেষ করে, যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন তাদের জন্য অবশ্যই খুব কঠিন এ কাজ। তার পরও মুসলমানরা বিপুল উৎসাহের সঙ্গেই রোজা পালন করছেন।
সেনাবাহিনীতে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা
জার্মান সেনাবাহিনীতে রয়েছে প্রায় হাজার খানেক মুসলমান সৈন্য। তাদের রোজা পালনের সুবিধার্থে বিশেষ ব্যবস্থায় রাতে ক্যান্টিন খোলা রাখা হয়।
তারাবির নামাজ
জার্মানির মসজিদগুলোতে সারা বছরই নামাজ পড়া ও ইবাদত করা হয়। তবে রোজার মাসে স্বাভাবিকভাবেই বিশেষ আয়োজন থাকে। প্রতিদিনই পড়া হয় তারাবির নামাজ।
ইফতার খাওয়া
সারাদিন রোজা রাখার পর, অন্যান্য দেশের মতো জার্মানির বিভিন্ন মসজিতে ইফতারের আয়োজন করা হয়ে থাকে এবং যে কেউ এই ইফতারে অংশ নিতে পারেন৷ ইফতারের জন্য অনেকেই বাড়ি থেকে প্রচুর খাবার পাঠিয়ে দেন, যাতে রোজাদাররা ভালোভাবে ইফতার করতে পারেন৷ তুর্কি মসজিদগুলোতে অনেকেই শুধু খেজুর আর দুধ দিয়ে ইফতার সেরে নামাজ পড়েন এবং পরে সবাই মিলে ভারী খাবার খান।
মুসলমান মহিলা
জার্মানিতে অনেক সময় আলাদাভাবে শুধু মহিলাদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। তারা একত্রে নামাজ পড়েন এবং ধর্মীয় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকেন। সেই আলোচনায় স্থান পায় ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়াদী।
রোজার সময় ভিড় কম
জার্মানিতে রয়েছে প্রচুর তু্র্কি রেঁস্তোরা৷ এই রেঁস্তোরার মালিকের ভাষায়, অন্য সময় অনেক ভিড় হলেও রোজার মাসে মানুষ কম আসে।
বাঙালি মসজিদ
বন শহরে বাঙালিদের উদ্যোগে একটি মসজিদ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে শুধু বাঙালি মুসলমান নন অন্যান্য দেশের মুসলমানও আসেন নামাজ পড়তে এবং রোজার সময় ইফতার করতে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ইউরোপের এ দেশে মুসলমনার অনেকটা স্বাধীনভাবেই রোজাসহ ধর্মকর্ম পালন করতে পারছেন। বিশেষ করে জার্মানের যেখানে বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা, বিশেষ করে রোজার সময় একত্রিত হয়ে নামাজ পড়েন, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন এবং দোয়া করেন সবার মঙ্গল ও শান্তির জন্য। আমরা প্রত্যাশি করি এ ইবাদতের এ ধারা অব্যাহত থাকুক।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘন্টা, জুলাই ১২, ২০১৫
এমএ/