সুদান আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি রাষ্ট্র। রাজধানীর নাম খার্তুম।
দেশটির ৭০ শতাংশ জনগণই ইসলাম ধর্মাবলম্বী। আদিবাসী ২৫ শতাংশ ও মাত্র ৫ শতাংশ খ্রিস্টান। এখানকার খ্রিস্টানরা রোমান ক্যাথলিক চার্চের অনুসারী। সব মুসলমানই সুন্নি।
সেই সুদানের জাজিরা প্রদেশের একটি গ্রামের নাম আল নুবা। আল নুবা গ্রামটি রাজধানী থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে খার্তুম-ওয়ার্দ মাদানি মহাসড়কের পাশে অবস্থিত।
এই গ্রামে পবিত্র রমজান মাসের বিকেলটি থাকে অন্য সময়ের চেয়ে ভিন্ন। রমজান মাসে পর্যটক ও পথচারীদের সেবায় এ গ্রামের মানুষ রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামে। লক্ষ্য রোজাদারকে ইফতার করানো। বলা যায়, এক প্রকার জোর করেই গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের ইফতার করান এ গ্রামের লোকেরা।
.
সূর্য হেলে পড়তেই নুবাবাসী ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাড়ির উঠানে গালিচা বিছাতে। পুরো উঠানজুড়ে গালিচা বিছানোর পর শুরু হয় ইফতার সাজানোর পালা। ভিন্নস্বাদের পানীয় আর সবজি-গোশত ও বিশেষ ধরণের কেক দিয়ে সাজানো হয় বড় বড় থালা।
এর পর বাসিন্দারা ছুঁটতে থাকেন প্রধান সড়কের দিকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা সড়কের মাঝখানে গিয়ে যানবাহন থামাতে থাকে। একজন গিয়ে বাস থামান তো, আরেকজন গিয়ে বাসের ড্রাইভারকে গাড়ি পার্ক করার জায়গা দেখিয়ে দেন। আর একজন যাত্রীদের ইফতার মাহফিলের জায়গার পথ দেখান।
এভাবে গাড়ী থামানোর আকস্মিক ঘটনায় পর্যটকরা আশ্চর্য হলেও পরে আসল ঘটনা বুঝতে পারেন। কারণ বাস থামতেই বাসিন্দারা বলতে থাকেন, 'ভাইয়েরা ইফতারের সময় হয়েছে। আসুন আমাদের সঙ্গে ইফতার করুন। '
ইফতারের সময় যত ঘনিয়ে আসতে থাকে আল নুবার বাসিন্দাদের অস্থিরতাও বাড়তে থাকে। পর্যটক ও পথচারীদের সেবায় যেন কোনো ত্রুটি না হয় এ চিন্তায় তারা ইফতার আয়োজনে কোনো কমতি রাখে না।
অতিথিদের সম্মানের সঙ্গে ইফতার বিছানো গালিচায় বসানো, তাদের সামনে ইফতার দেয়া- সবই চলতে থাকে শৃঙ্খলার সঙ্গে। ইফতারের ২০ মিনিট পর পর্যটক ও পথচারীদের সম্মানের সঙ্গে আবার বাসে তুলে দেওয়া হয়।
পর্যটকরা বুঝতে পারেন, মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজান শুধু সংযমের মাস-ই নয়, প্রার্থনা, দান আর ক্ষমার মাসও।
তাদের মতে, পথচারী ও পর্যটকদের ইফতার করানো গ্রামের ঐহিত্য বিশেষ। তাদের এমন আতিথেয়তায় মুগ্ধ অতিথিরাও। তাদের সঙ্গে ইফতার করা এক বাস চালক বলেন, ‘তারা মাঝ রাস্তায় এসে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। পুরো রাস্তা বন্ধ করে দেন। গাড়ি থামাতে বাধ্য করেন। তারপর যাত্রীরা গাড়ি থেকে নেমে তাদের সঙ্গে ইফতার করে। এবং পরে আবার যাত্রা শুরু করেন। '
এই ঐতিহ্য নিয়ে জাজিরার বাসিন্দারা গর্ব করেন। এবং একে পবিত্র দায়িত্ব মনে করেন তারা। কারণ হজরত মুহাম্মদ (সা.) ঈমানদারদের জানিয়েছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদার মুসলমানকে ইফতার করাবে সে ওই রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে।
উল্লেখ্য, আল নুবা গ্রামের বাসিন্দাদের সংখ্যা আনুমানিক দশ হাজার। তারা পেশায় কৃষক এবং সরকারি চাকুরিজীবী। বছরের পর বছর ধরে এই গ্রামে পথচারী ও পর্যটকদের ইফতার করানোর প্রচলন চলে আসছে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর বাড়ির ছোটদের এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে বলা যায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারা বড়দের সঙ্গে এই কাজে হাত লাগান। তাই ছোটবেলা থেকেই তাদের মনে গেঁথে যায় এই ঐতিহ্যবাহী প্রচলন। পরে বড় হয়ে তারাও সেই পথে হাঁটেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৬
এমএইউ/