রমজান দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর করার এক অবারিত সুযোগ। রমজানে খোদাভীতি, সংযম ও প্রার্থনার মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন সুখময় করে তোলা সম্ভব।
রমজানে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের রুটিনে পরিবর্তন আসে। খাওয়া-দাওয়া ও ঘুম থেকে শুরু করে পেশাগত কাজের সময় ও ধরণ পর্যন্ত পাল্টে যায় এ সময়। অনভ্যস্ততার কারণে এসব পরিবর্তন স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ওপর শারীরিক ও মানসিক প্রভাব ফেলে। সুতরাং উভয়ের দায়িত্ব পরস্পরের শান্তি, স্বস্তি ও সহজতার প্রতি লক্ষ্য রাখা। যেন একজনের প্রত্যাশা অপরজনের জন্য বোঝা না হয় এবং অন্যজন রমজানের ইবাদত, দোয়া ও প্রার্থনা থেকে বঞ্চিত না হন। সর্বোপরি পরস্পরের প্রতি আচরণ যেন সহযোগিতামূলক হয়।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা পুণ্যের কাজ ও খোদাভীতি অর্জনে পরস্পরকে সহযোগিতা কর। ’ -সূরা মায়েদা: ০২
রমজানের মূল শিক্ষা হলো, ধৈর্য্য-সংযম ও সহনশীলতা, দয়া-সহমর্মিতা এবং ক্ষমা। আদর্শ দাম্পত্য জীবনের জন্য রমজানের এ শিক্ষাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই গুণগুলো অর্জন করতে পারেন।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ রোজা রাখে তখন সে গালমন্দ করবে না এবং ঝগড়া করবে না। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা হত্যা (আঘাত অর্থে) করে তবে বলবে আমি রোজা। ’ -সুনানে ইবনে মাজা
অর্থাৎ রোজাদার ব্যক্তি সর্বোচ্চ ধৈর্য্যধারণ করবে।
রমজান মাসে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একত্র আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হবেন। সাহরি, ইফতার, নামাজ, জিকির, কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়ায় পরস্পরকে অংশিদার করে নেবেন।
আল্লাহতায়ালা স্বামী-স্ত্রীর একত্র ইবাদতকে পছন্দ করেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের হৃদয়ে ভালোবাসা ও অনুরাগ বৃদ্ধি করে দেন।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা সেই স্বামীর প্রতি অনুগ্রহ করেন যে তাহাজ্জুদের জন্য জাগ্রত হয় এবং তার স্ত্রীকে ডেকে দেয়। যদি সে উঠতে না চায় চেহারায় পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহতায়ালা সেই স্ত্রীর প্রতি দয়াশীল যে তাহাজ্জুদ আদায়ের জন্য জাগ্রত হলে স্বামীকে ডেকে দেয়। যদি সে উঠতে না চায়, তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে দেয়। ’ -সহিহ ইবনে হিব্বান
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও তার স্ত্রী-কন্যাদের তাহাজ্জুদের জন্য ডেকে দিতেন এবং তাদের ইবাদতে অংশিদার করে নিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রমজানের শেষ দশকে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রাত জেগে ইবাদত করতেন, তার পরিবারকে ডেকে দিতেন এবং লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নিতেন। ’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
আল্লামা উবায়দুল্লাহ সিন্ধি (রহ.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে ও তার পরিবারকে অধিক পরিমাণে ইবাদতে মগ্ন করতেন এবং তিনি স্ত্রী সংশ্রব পরিহার করতেন।
সুতরাং স্বামীর দায়িত্ব হলো- স্ত্রীকে ইবাদতের অবকাশ দেওয়া। তবে স্বামীর চাহিদা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা স্ত্রীর জন্য অনুচিৎ। কেননা অন্য হাদিস থেকে বোঝা যায়, রমজানেও রাসূল (সা.) স্ত্রীদের সংশ্রবে যেতেন।
রমজানে স্ত্রী স্বামীর নিকট তার প্রত্যাশা ও চাহিদার মাত্রা সীমিত রাখবেন। যেনো অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ করতে যেয়ে স্বামী রমজানের ইবাদত-বন্দেগি থেকে বঞ্চিত না হন। বর্তমানে রমজান মাসে ইফতার-সাহরিতে এতো বেশি আয়োজন থাকে যে সংসারে ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে যায়। অথচ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সংসারে অনেক সময় ইফতার করার মতো খাদ্যও থাকতো না।
হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসূল (সা.) নামাজের পূর্বে পাকা রসালো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। পাকা খেজুর না থাকলে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। আর তাও না থাকলে কয়েক পানি পান করতেন। ’ -সুনানে আবু দাউদ
রমজান মাসে সাংসারিক কাজ বেড়ে যায়। তাই স্বামীর দায়িত্ব হলো- সুযোগ মতো স্ত্রীকে সাহায্য করা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘরের কাজে তার স্ত্রীদের সহযোগিতা করতেন। হজরত আয়েশাকে (রা.) জিজ্ঞেস করা হয়, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘরে থাকলে কি করতেন? তিনি বলেন, ‘তিনি ঘরের কাজ করতেন। নামাজের সময় হলে নামাজে যেতেন। ’ -আদাবুল মুফরাদ
রমজানে স্বামী যদি ইতেকাফ করেন বা দূরে কোথাও থাকেন তার খোঁজ খবর নেওয়া স্ত্রীর দায়িত্ব। যেনো স্বামী বোঝেন স্ত্রী তার শূন্যতা অনুভব করছেন। হজরত সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই (রা.) বলেন, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইতেকাফ করছিলেন। আমি রাতের বেলা তার সঙ্গে দেখা করতে যাই এবং কথা বলি। অতঃপর আমি ফেরার জন্য দাঁড়াই। তিনি আমার সঙ্গে দাঁড়ান আমাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য। ’ [সংক্ষেপিত]-সহিহ বোখারি
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৭
এমএইউ/