২০০৭ তিনি জামিয়া রাহমানিয়া মুহাম্মাদপুর থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ ১৮ বছর তারাবির নামাজ পড়াচ্ছেন।
তারাবির নামাজ পড়াতে কেমন লাগে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তারাবি পড়ানোর প্রশান্তিটা অন্যরকম। আমি তারাবি পড়ানোর প্রতি প্রচন্ড আগ্রহবোধ করি। বলতে গেলে সারা বছর চাতক পাখির মতো প্রতীক্ষায় থাকি রমজানের আগমনের। রমজানে যখন প্রথমদিন তারাবি পড়াই তখন অনেক সময় আনন্দের আতিশয্যে চোখে পানি চলে আসে।
তবে তারাবির সময় দ্রুততার সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াতের বিষয়টি তাকে পীড়া দেয় উল্লেখ করে বলেন, মুসল্লিদের কোরআন তেলাওয়াতে তাড়াহুড়ো করার প্রবণতা ভালো নয়। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, অনেক মসজিদের কমিটির সদস্যরাও তাড়াতাড়ি তেলাওয়াতের জন্য ইমামের ওপর এক ধরনের চাপ প্রয়োগ করেন।
দেখুন, তারাবির নামাজ মূলত আরামের নামাজ। ইসলামি শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী এই নামাজে প্রতি চার রাকাত পর চার রাকাত পরিমাণ বসে আরাম করার বিধান রয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজে পরিলক্ষিত হয় ভিন্ন চিত্র। রমজান এলে যে সব মসজিদে খতম তারাবি হয়, সে সব মসজিদে বলতে গেলে এক ধরনের অঘোষিত প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কার আগে কে শেষ করতে পারে, কে কত দ্রুত পড়তে পারে সেটাই বড় হয়ে দাঁড়ায়।
এ ক্ষেত্রে কোরআন তেলাওয়াতের সাধারণ নিয়মাবলি ও আদবের প্রতিও লক্ষ্য করা হয় না। বরং কোরআনের সঙ্গে চরম বেয়াদবি করা হয়। আর মুসল্লিরা এভাবে নামাজ পড়ে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে সাধারণ মুসল্লি ও মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে দ্রুত নামাজ শেষ করার নির্দেশও থাকে। হাফেজ সাহেবরা ওই নির্দেশের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাড়াহুড়ো করে নামাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। এর অনিবার্য ফল এই দাঁড়ায় যে, কেরাতের শেষের দু’একটি শব্দ ছাড়া আর কিছুই মুসল্লিরা বুঝতে পারেন না। ঝড়ের গতিতে হাফেজ সাহেব কোরআন পড়ে যান, আর মুসল্লিরা পেছনে থেকে ঘুমান বা ঝিমান। কোরআন শ্রবণ দ্বারা মুসল্লিদের অন্তরে যে স্বাদ অনুভব করার কথা, বা যে আবেগময়তা সৃষ্টি হওয়ার কথা সেটা হয় না।
এতে অনেকের নামাজের মনোযোগিতা চরমভাবে বিঘ্নিত হয়। তারাবির নামাজটা তাদের জন্য একটি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এমনিতেই সারাদিন রোজা রেখে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এ সময় তারাবি পাড়াটা খুবই কষ্টসাধ্য। তার ওপর আবার কোরআন তেলাওয়াত না বুঝার কারণে নামাজের প্রতি আরও বেশি অনীহা সৃষ্টি হয়। এই জন্যই তারাবির নামাজে প্রথম দিকে যে পরিমাণ মুসল্লি থাকে, রমজানের দিন যত যায়- মুসল্লির সংখ্যা তত কমতে থাকে। শেষের দিকে দেখা যায় যে, মসজিদ মুসল্লি শূন্য।
এভাবে কোরআন তেলাওয়াত করা কোরআনের সঙ্গে চরম বেয়াদবির শামিল। এরূপ নামাজে সওয়াব তো দূরের কথা; বরং কোরআন নিয়ে তামাশা করার কারণে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার আশংকা রয়েছে। আমাদেরকে এই অপসংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। কোরআনে কারিম তেলাওয়াতের সাধারণ যে নিয়মাবলি রয়েছে, তার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
দ্রুততার সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াতের সংস্কৃতি থেকে সবাইকে বের হয়ে আসতে হবে। মুসল্লিদের বুঝাতে হবে যে, কোরআনে কারিমেই ধীরে ধীরে স্পষ্ট উচ্চারণে কোরআন তেলাওয়াত করার কথা রয়েছে।
এক্ষেত্রে আমার অভিমত হলো, তারাবির তেলাওয়াতে হাফেজ সাহেবদের যথাসাধ্য সুমিষ্ট ও সুললিত কন্ঠে তেলাওয়াত করা। সুন্দর কন্ঠের তেলাওয়াত দীর্ঘ সময় নামাজে দাঁড়ানোর কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারে। সুন্দর কন্ঠে তেলাওয়াতের প্রতি ইসলামি শরিয়তও গুরুত্ব দিয়েছে।
অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায়, তারতিলের সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াত আর দ্রুততার সঙ্গে তেলাওয়াতের মাঝে খুব বেশি পার্থক্য হয় না। সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ মিনিটের কমবেশি। তাই মসজিদ কমিটি ও সাধারণ মুসল্লিদের উচিত, একটু বিলম্ব হলে বিরক্তি প্রকাশ না করে বরং ধীরস্থীরভাবে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে হাফেজ সাহেবদেরকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করা।
সাক্ষাতকার গ্রহণ: মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৭
এমএইউ/