বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এ সময়সীমা অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি। তবে মজার ব্যাপার হলো, সুইডেনেই আবার কোনো কোনো সময় দিনের সময়সীমা খুবই কমে যায়।
একই অবস্থার শিকার সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ড। তবে একই সময়ের এই সুর্য উদয় ও অস্ত দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর পর্যটকদের আগমন ঘটে এসব দেশে। সে সময় রোজা রাখা খুবই আরামের। এই রমজান মাস ঘুরে ফিরে আবার যখন ডিসেম্বর মাসে আসবে তখন দু’এক ঘন্টার ব্যবধানে রাখা যাবে রোজা।
তবে এসব দেশে বসবাসরত অনেকে ২২-২৩ ঘন্টা কিংবা ১-২ ঘন্টা রোজা না রেখে রোজা রাখেন মক্কা শরীফের সময় অনুযায়ী। আবার কেউ কেউ পাশ্ববর্তী কোনো মুসলিম দেশের সময় অনুসারেও রোজা রেখে থাকেন।
এসব দেশের অধিবাসীরা কোন পদ্ধতিতে রোজা রাখবে তা নিয়ে মুসলিম স্কলারদের মাঝে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। তবে সুইডেনের মুসলমানদের জন্য এই দীর্ঘ সময়সীমার রোজা কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। এমনটাই জানালেন সেদেশের অধিকাংশ মুসলমান।
‘আন্না’ একজন মুসলিম নারী। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন বেশ কয়েকবছর আগে। তিনি বলছেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর এটা আমার ষষ্ঠ রমজান। প্রথম যখন রোজা রাখি তখন আমার ধারণা ছিল, দীর্ঘ সময় পানাহার থেকে বিরত থাকার কারণে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ব। কিন্তু যখন রোজা রাখলাম তখন বুঝলাম বিষয়টা সম্পূর্ণই উল্টো। দীর্ঘ সময় রোজা রাখা বাহ্যত দুঃসাধ্য মনে হলেও আমরা রোজা রাখি। এতে কোনো সমস্যাবোধ করি না।
এবারের রমজানে সিয়াম পালনে সবচেয়ে বেশি সময় দিতে হবে। তার পরও অধিকাংশ মুসলমান রমজানের রোজা পালনের জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকেন এবং তারা রমজান মাসকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভের কারণ মনে করে থাকেন। রমজানকে তারা দ্বীন সম্পর্কে জানার পরিধি বাড়ানো ও জ্ঞান সমৃদ্ধ করার মোক্ষম সুযোগ মনে করেন।
সুইডেনে গ্রীষ্মকালে দিন সবচেয়ে বেশি লম্বা হয়। তখন রাত হয় মাত্র তিন ঘন্টা। আর বাকি ২১ ঘন্টাই দিন।
এর পরও মুসলমানরা রোজা রাখতে কোনো সমস্যাবোধ করেন না।
আন্না বলেন, আমি স্টকহোমে আসার আগে উত্তর সুইডেনের উমিয়ায় বসবাস করতাম। সেখানে দিন অনেক দীর্ঘ। তা সত্ত্বেও আমি বিগত বছরগুলো রোজা রেখেছি।
ইতিপূর্বের সবগুলো রমজানেই আমি এমন দীর্ঘ সময় রোজা রেখে অভ্যস্ত। তবে এখানে অতি বৃদ্ধ, অসুস্থ, গর্ভবর্তী নারী ও দুগ্ধদানকারী নারীরা সাধারণত ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী রোজা ছেড়ে দেন। কেননা তারা তাদের নিজেদের ও বাচ্চাদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে চান না।
অবশ্য এ বছর, আন্নাও রোজা রাখছেন না। তিনি বলেন, আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর থেকে শুধু গত বছর রোজা ছেড়েছি, আর এ বছর ছাড়ছি। কেননা গত বছর আমি ছিলাম গর্ভবর্তী। আর এ বছর আমি আমার সন্তানকে দুধ পান করাই। তাই সন্তানের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে চাই না। আর ইসলাম আমাদেরকে ওজরের কারণে সাময়িকভাবে রোজা ছাড়ার অনুমতি প্রদান করেছে। সন্তানের স্বাস্থ্য রক্ষার প্রতি ইসলাম গুরুত্ব প্রদান করেছে।
ডা. মিরিয়াম ইলবিরনসন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। সেই সঙ্গে তিনি ইউতিউবুরি শহরের একটি ক্লিনিকের চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, গর্ভবর্তী ও দুগ্ধদানকারিণী মায়েদের জন্য সুইডেনের এই লম্বা সময়ের রোজা থেকে বিরত থাকা উচিত। আর ইসলামি শরিয়তও তার অনুমতি দান করে। পরবর্তীতে সমস্যা চলে যাওয়ার পর কাজা করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
তবে ডা. মিরিয়াম ইলবিরনসন সুস্থদের জন্য দীর্ঘ সময়ের দিনে রোজা রাখতে কোনো সমস্যা নেই বলে মন্তব্য করেন।
সুইডেনের মতো আরও অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে দীর্ঘ সময় রোজা রাখতে হয়। যেমন- আইসল্যান্ডে ২২ ঘণ্টা, আলাস্কায় ১৯ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট, জার্মানিতে ১৯ ঘণ্টা, ইংল্যান্ডে ১৮ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট, কানাডায় ১৭ ঘণ্টা ৭ মিনিট ও তুরস্কে সাড়ে ১৭ ঘণ্টা।
-রেডিও সুইডেন অবলম্বনে
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়ঃ ১৮১০ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৭
এমএইউ/