মুসলিম বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী দেশটির ক্ষমতাসীনরা বরাবরই মসজিদ-মাদরাসা ও ধর্মীয় কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টা করেছে। এ রীতি বেশ পুরনো।
মসজিদে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় একেক সরকার নতুন নতুন সব কৌশল গ্রহণ করে থাকে। এর অংশ হিসেবে প্রবর্তন করা হয় নতুন আইনও। মূলত সরকারের যে কোনো ধরনের সমালোচনা ঠেকাতে মসজিদ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দেওয়া হলেও এসব বিধি-নিষেধ মানতে নারাজ অনেক খতিব।
যদিও বরাবরাই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মসজিদের ইমামরা যাতে রাজনৈতিক উত্তেজনায় উসকানি দিতে না পারেন সে জন্যেই এই কঠোরতা।
জুমার খুতবার বিষয় নির্ধারণ, সময় নির্ধারণ ও ধর্মীয় কার্যক্রমকে সঙ্কুচিতকরণ ইত্যাদির পেছনে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হলেন- মিসরের আওকাফ মন্ত্রী মুহাম্মাদ মুখতার জুময়ে।
নানা কারণে মন্ত্রী মুখতার জুময়ে সেনা সমর্থিত সরকার প্রধান সিসির খুব আস্থাভাজন এবং মিসরে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টিকারী মন্ত্রী। মিসরের মসজিদগুলোতে কড়া নজরদারি রাখা, খতিবদের খুতবায় হস্তক্ষেপ করা এবং ১৫ মিনিটের বেশি খুতবা না দিতে বাধ্য করা- এই মন্ত্রীর কাজ।
মুহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সেনা সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে যে কোনো সমালোচনা বন্ধ করতে ইমামদের ওপর নিয়ন্ত্রণ জারি ও প্রায় মসজিদের ওপর নানা বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে আওকাফ মন্ত্রণালয়।
এরই অংশ হিসেবে মিসরে রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের অন্যতম আমল ইতিকাফের ওপর আসে কঠোর বিধি-নিষেধ। ইতোমধ্যে মিসরের আওকাফ মন্ত্রলায় বেশ কিছু মসজিদে ইতিকাফ করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আর কিছু মসজিদে ইতিকাফের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে নানা ধরনের বিধি-নিষেধ, শর্ত ও নির্দেশনা।
এ প্রসঙ্গে মিসরের আওকাফ মন্ত্রী মুহাম্মাদ মোখতার জুময়ে বলেন, প্রত্যেক জেলার প্রশাসনিক দায়িত্বশীলদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ইতিকাফকে যেন শুধুমাত্র বড় মসজিদে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। কেননা ছোট মসজিদগুলো ইতিকাফের জন্য প্রস্তুত নয়। বড় মসজিদকে ইতিকাফের জন্য নির্ধারিত করার পেছনে কারণ হলো- যাতে ইতিকাফকারীরা প্রশাসনের নজরে থাকেন।
মিসরে ইতিকাফকারীদের জন্য আরও নির্দেশ হলো- ইতিকাফকারীকে অবশ্যই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্ধারিত মসজিদের এলাকার অধিবাসী হতে হবে। কেউ তার নিজের এলাকার বাইরে ইতিকাফ করতে পারবে না। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত মসজিদ ছাড়া অন্য মসজিদে ইতিকাফ করা যাবে না।
কেবলমাত্র আওকাফ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকার মসজিদসমূহে ইতিকাফ করা যাবে।
চলতি রমজানে যারা ইতিকাফ করছেন- তাদের নাম ঠিকানা এক সপ্তাহ আগে মন্ত্রণালয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিকাফের ওপর এ ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করায় সাধারণ মুসল্লিদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মতে, সরকার যা করছে- তা রীতিমতো বাড়াবাড়ি।
-আল আলাম আল ইয়াউম অবলম্বনে
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৭
এমএইউ/