ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

শেয়ারবাজারের মন্দা কাটাতে ব্যর্থ মার্কেট মেকার বিধিমালা

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৪
শেয়ারবাজারের মন্দা কাটাতে ব্যর্থ মার্কেট মেকার বিধিমালা

ঢাকা: শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন রোধে তৈরি করা হয় বাজার সৃষ্টিকারী (মার্কেট মেকার) বিধিমালা। তবে আইনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ বিধিমালাটি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) কেউ এর বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে আইন থাকলেও দিনের পর দিন অন্ধকারেই রয়ে গেছে বাজার সৃষ্টিকারী তৈরির বিষয়টি।
 
বিএসইসি ও ডিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ধসের পর বাজার সৃষ্টিকারী বিধিমালা সংস্কারের বিষয়ে বেশ তোড়জোড় দেখা যায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। ২০১১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) পক্ষ থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে এ বিষয়ে একটি মৌখিক প্রস্তাবও দেওয়া হয়। এরপর ২০১২ সালের শুরুর দিকে ডিএসইর পক্ষ থেকেও মৌখিক একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়।
 
পরবর্তীতে ২০১২ সালের জুনের মাঝামাঝি সময়ে বাজার সৃষ্টিকারী তৈরির জন্য বিএসইসি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত প্রস্তাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই। এ সময় বিএসইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে বাজার সৃষ্টিকারী সংস্কারের বিষয়ে একাধিকবার আলোচনাও হয়। আলোচনার প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের শুরুর দিকে বাজার সৃষ্টিকারীর বিদ্যমান বিধিমালাতে কিছু পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। তবে পরবর্তীতে অদৃশ্য কারণে এ বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব দেওয়া থেকে বিরত থাকে ডিএসই। সেই সঙ্গে ধামাচাপা পড়ে যায় বিধিমালায় বিএসইসির পরিবর্তন আনার বিষয়টি।
 
আইন অনুযায়ী, বাজার সৃষ্টিকারী শুধু স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সিকিউরিটির লেনদেন করতে পারবে। প্রতিটি লেনদেনের তথ্য ট্রেডিং মনিটরে অন্তত ৩০ মিনিট প্রচার করতে হবে। স্টক এক্সচেঞ্জ বা বাজার সৃষ্টিকারী নিজ উদ্যোগে যেসব কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করবে তার তালিকা তৈরি করবে। তবে সেটা অবশ্যই বিএসইসির অনুমোদন লাভ করতে হবে।
 
বাজার সৃষ্টিকারীর মূলধনের পরিমাণ কমিশনের জারি করা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। এই মূলধনের ওপর নির্ভর করবে কয়টা সিকিউরিটি বা শেয়ার লেনদেন করতে পারবে। এছাড়া একটি শেয়ারের জন্য কয়টা বাজার সৃষ্টিকারী থাকতে পারবে সেটাও নির্ধারণ করবে বিএসইসি।
 
বাজার সৃষ্টিকারীর বিষয়ে ‘সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (বাজার সৃষ্টিকারী) বিধিমালা- ২০০০’ এ বলা আছে, আইনের আওতায় কোনো মার্চেন্ট ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্টক ডিলার বা স্টক ব্রোকার বিএসইসি (এসইসি) থেকে সনদ পাওয়ার যোগ্য হবে।
 
নিবন্ধন পাওয়া বাজার সৃষ্টিকারীরা সর্বোচ্চ সততা, বিশ্বস্ততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বাজার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রত্যেকে এক বছরের জন্য সনদ পাবেন এবং তাদের সব হিসাব ১০ বছরের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। অনুমোদিত বাজার সৃষ্টিকারী সিকিউরিটির বা শেয়ারের তারল্য ও উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এবং বাজারের আচরণের ওপর তাদের ভূমিকা নির্ধারণ করবে।
 
বাজার সৃষ্টিকারী বিধিমালায় বলা হয়েছে, ক্রয়াদেশ মূল্য এবং বিক্রয় প্রস্তাব মূল্য সন্নিহিত সময়ে একই হতে পারবে না। কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ক্রয়াদেশ ও বিক্রয় আদেশ প্রস্তাব মূল্য আগের ক্রয়াদেশ মূল্য ও বিক্রয়াদেশ মূল্যের পাঁচ শতাংশের কম বা বেশি হবে না।
 
বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, কমিশনের নির্ধারিত টাকার সমপরিমাণ সিকিউরিটি বা শেয়ার প্রতিদিন বাজার সৃষ্টিকারীকে লেনদেন করতে হবে। প্রয়োজন হলে কমিশনের পূর্বানুমতিক্রমে সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জের নির্ধারিত ক্রয়াদেশ মূল্য ও বিক্রয় প্রস্তাব মূল্যের মধ্যেকার ব্যবধান পরিপালন করতে হবে। বাজার সৃষ্টিকারীকে প্রদত্ত দরে লেনদেন কার্যকর নিশ্চিত করতে হবে।
 
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে বাজার সৃষ্টিকারী রয়েছে। বাজারের সংকটের সময় তারা বাজারকে স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের দেশের সিকিউরিটিজ আইনে এটি আছে। তবে এর কোনো বাস্তব প্রয়োগ নেই। আইনের মাধ্যমে বাজার সৃষ্টিকারী তৈরি করে তাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে বাজার যে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
 
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাজার সৃষ্টিকারীর প্রয়োগ রয়েছে। বাজারে তারা গুরুত্বপূর্ণ আবদানও রাখে। আমাদের দেশেও এ বিষয়ে আইন আছে। তবে এ আইন যুগোপযোগী না। আইনের কিছু সংস্কার করে এটি প্রয়োগ করা গেলে শেয়ারবাজারে সুফল পাওয়া যেতে পারে।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের মতে, বাজার সৃষ্টিকারী তৈরি করলেই বর্তমান সংকট থেকে শেয়ারবাজার মুক্তি পাবে এটি ঠিক না। তবে যথাযথভাবে বাজার সৃষ্টিকারীদের কাজে লাগাতে পারলে এর একটি সুফল পাওয়া যেতে পারে।
 
তিনি বলেন, বর্তমান অবস্থা থেকে বাজারকে শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড় করাতে হলে প্রথমে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কার আনতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কার ছাড়া বাজারের সংকট সমাধান করা সম্ভব না।
 
বিষয়টি নিয়ে বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জের দায়িত্বশীলদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
 
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।