ঢাকা: স্বল্প মূলধনী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আলাদা লেনদেন ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। দেশের উভয় শেয়ারবাজার, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে এ ব্যবস্থা চালু করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার (০২ ফেব্রুয়ারি) বিএসইসির নিয়মিত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। স্টক ব্রোকারদের মাধ্যমে এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেন পরিচালিত হবে। সেই সঙ্গে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তি ও আলাদা লেনদেন ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় বিধিমালাও প্রণয়ন করা হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মুনাফার ধারাবাহিকতা না থাকলেও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে পুঁজি সংগ্রহ করতে পারবে এসব প্রতিষ্ঠান। বিনিয়োগের ঝুঁকির দিকটি ভেবে শুধু নির্দিষ্ট শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের জন্য এ বাজারে কেনাবেচারও সুযোগ রাখা হচ্ছে।
স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তি ও লেনদেনের জন্য গঠিত আলাদা প্লাটফর্মের নামকরণ করা হয়েছে ‘স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফর্ম’। ন্যূনতম পাঁচ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকলে একটি কোম্পানি এ প্লাটফর্মে তালিকাভুক্ত হতে পারবে। এরপর কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা হতে হবে। তবে তা ৩০ কোটি টাকার নিচে থাকতে হবে।
বিএসইসি জানিয়েছে, স্বল্প মূলধনী কোম্পানির আলাদা লেনদেন প্লাটফরমে মূল বাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানিকে স্থানান্তর করা হবে না। দেশের ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতেই দ্রুততম সময়ে আলাদা বাজার ব্যবস্থা চালুর এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের মাধ্যমে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিতে বিনিয়োগের বিধিমালা এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। আর নির্দিষ্ট সময়ে এ বিনিয়োগ তুলে নেয়ার সুযোগ দিতেই চালু করা হচ্ছে স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফরম।
সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোয় ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি থাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এ বাজার উন্মুক্ত থাকবে না। শুধু যোগ্য বিনিয়োগকারীরাই কেনাবেচা করতে পারবেন। ‘যোগ্য বিনিয়োগকারী’ বলতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ নিট সম্পদধারী ব্যক্তি, যাদের বাজার সম্পর্কে সম্যক ধারণা রয়েছে, তাদের বোঝাবে। স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর ইলেকট্রনিক শেয়ার থাকবে এবং ইলেকট্রনিক ট্রেডিং প্লাটফর্মেই এর লেনদেন হবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।
স্বল্প মূলধনী, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলো যাতে সহজে শেয়ারবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে, গত বছর তার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
এর পর থেকেই এসব কোম্পানির জন্য আলাদা বাজার গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বিধিবিধান তৈরির কাজ শুরু করে বিএসইসি। এরই মধ্যে খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে।
খসড়া অনুযায়ী, সাময়িকভাবে লোকসানে থাকা স্বল্প মূলধনী কোম্পানিও এ বাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে ওই কোম্পানির ভবিষ্যত সম্ভাবনাময় হতে হবে। এর বাইরে তালিকাভুক্তির অন্যান্য শর্তও শিথিল করা হচ্ছে।
বর্তমানে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কোম্পানির পাঁচ বছরের লাভ লোকসানের হিসাব জমা দিতে হয়। এর মধ্যে অন্তত তিন বছর কোম্পানিকে মুনাফায় থাকতে হয়। এর ব্যতিক্রম হলে কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের যোগ্যতা হারায়। তবে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর জন্য এ শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানও শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৬
এফবি/আরএইচ